ঢাকা, বুধবার   ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ||  আশ্বিন ১৮ ১৪৩০

তোয়ালের প্রকার ও কতদিন পর পর ধোয়া জরুরি

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৩১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা দরকারে পানি ব্যবহার করতে হয়। তবে গোসল কিংবা হাত-মুখ ধোয়ার পর প্রথমেই প্রয়োজন হয় একটি তোয়ালের। বাজারে অনেক রকম তোয়ালে পাওয়া গেলেও সব কাজের জন্য কিন্তু সব তোয়ালে নয়।

সাধারণত সাত ধরনের তোয়ালে বাজারে পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাথ টাওয়েল, হাত তোয়ালে বা হ্যান্ড টাওয়েল, ফেইস টাওয়েল, বাথরোব (গোসলের পর গায়ে পরার তোয়ালে), বাথ ম্যাট, সুইমিং টাওয়েল ও মাসাজ টাওয়েল। এত ধরণের তোয়ালে অবশ্য পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতেই ব্যবহার করা হয়।

কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি, আমাদের ব্যবহৃত তোয়ালে কতবার ধোয়া উচিত এবং বদলানো উচিত? সম্প্রতি বিবিসির একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ বিষয়টি।

যুক্তরাজ্যের ২২০০ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, তোয়ালে কতদিন পরপর ধোয়া উচিত সে সম্পর্কে কেউই নিশ্চিত নন।

যাদেরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৪৪% জানিয়েছেন, তারা তিন মাস বা তারও বেশি সময় পরপর তোয়ালে ধুয়ে দেন।

গৃহ পরিচ্ছন্নতা এবং সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ ডা. স্যালি ব্লুমফিল্ড বিবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমি রীতিমতো অবাক হয়েছি। কারণ আমার মনে হতো তোয়ালে খসখসে, ঘামে ভেজা এবং ব্যবহারের পক্ষে খুবই অস্বস্তিকর হয়ে উঠবে’।

একটি শাওয়ার কোম্পানির ডেটা অনুযায়ী, জরিপে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন জানিয়েছেন, তারা মাসে একবার তাদের তোয়ালে ধোন, এক-চতুর্থাংশ জানিয়েছেন তারা সপ্তাহে একবার ধোন এবং ২০ জনে একজন জানিয়েছেন, তারা প্রতিদিন গোসল বা শাওয়ারের পর তোয়ালে ধুয়ে দেন।

তোয়ালে ধোয়া প্রয়োজন কেন?

তোয়ালে কতদিন না ধুয়ে ব্যবহার করা যায়, এই প্রশ্নের জবাবে ডা. স্যালি বলেন, ‘কমপক্ষে সপ্তাহে একবার ধোয়া উত্তম। তোয়ালে দেখতে পরিষ্কার মনে হলেও, ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে এগুলোর মধ্যে লাখ লাখ জীবাণু জন্ম নেয় এবং সেখান থেকে গুরুতর স্বাস্থ্যহানি হতে পারে’।

‘যদি আপনি নিয়মিত তোয়ালে না ধোন, তাহলে তোয়ালেতে অর্গানিজমের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং পরে লন্ড্রীতে দিলেও এগুলো সম্পূর্ণ দূর করা সম্ভব হয় না’।

আর এখানেই সমস্যাটা শুরু।

যখন তোয়ালে দিয়ে আমরা শরীরের বিভিন্ন স্থান শুকাই, তখন তোয়ালেতে অর্গানিজম লেগে যায়; যেমন- আমাদের পায়ে অ্যাথলেট’স ফুট নামক রোগ হয় যে জীবাণু থেকে।

‘আমাদের শরীরের ত্বকে থাকা বেশিরভাগ অর্গানিজমই সংক্রামক নয়, তবে শরীরের কোনো অংশ যদি কেটে যায় বা ছড়ে যায়, তাহলে মারাত্মক সংক্রামক রোগ হতে পারে’, বলেন ডা. স্যালি।

একা থাকা মানে কি নিরাপদ?

আপনি যদি একই বাড়িতে আরো অনেকের সঙ্গে থাকেন তাহলে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

‘কখনো কখনো আমরা দেহে এমন অর্গানিজম বয়ে বেড়াই যা হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের অসুস্থ করবে না, কিন্তু সেটাই যদি অন্য কারো শরীরে প্রবেশ করে তাহলে তারা অসুস্থ হতে পারে’, বলেন ডা. স্যালি।

আবার একই তোয়ালে একাধিক মানুষ ব্যবহার করলে তো জীবাণু ছড়াতে পারেই, সেইসঙ্গে একই লন্ড্রিতে অন্যদের কাপড়ের সঙ্গে নিজের তোয়ালে ধুতে দিলেও তা ছড়াতে পারে।

‘আমাদের কাছে ভালো প্রমাণ রয়েছে যে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে। আপনি হয়তো ভাবছেন, আপনি একা থাকেন তাই জীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা কম; সেটা হতে পারে যদি আপনি দুই সপ্তাহের বেশি তোয়ালে ফেলে না রাখেন’, বলেন ডা. স্যালি।

এনএইচএস-এর একজন কনসালটেন্ট ডার্মাটোলজিস্ট ডা. ক্রিস্টিনা সোমাডাকিস বলেন, তিনি মানুষকে নিজেদের তোয়ালে নিয়ে আসার এবং তোয়ালে ধোয়ার রুটিনের দিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেবেন।

‘আপনি যদি ফেসিয়াল বা বডি অ্যাকনে বা লোমকূপে প্রদাহের সমস্যায় ভুগেন, তাহলে আমরা পরামর্শ দেব নিয়মিত তোয়ালে ধোয়ার’, বলেন তিনি।

ডা. ক্রিস্টিনা আরো বলেন, বাড়িতে যথাযথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে না চলার কারণে নানা ধরনের চর্মরোগের শিকার হয় মানুষ।

মুখ মোছা ও জিমের জন্য তোয়ালে

ওয়ার্কআউট বা ব্যায়ামের দিকে আগ্রহী যারা, তাদের শরীরচর্চার সময় একটু পরপরই ঘাম মোছার জন্য তোয়ালে দরকার হয়।

ডা. স্যালি বলেন, ঘাম মোছার জন্য যে তোয়ালে ব্যবহৃত হবে সেটা প্রতিদিন ধোয়া জরুরি। ‘শরীর থেকে ঘাম ঝরছে, ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়ে যাচ্ছে এবং তোয়ালেতে ব্যাক্টেরিয়া জমা হচ্ছে। তাই নিয়মিত না ধুলে তোয়ালে এত বেশি দূষিত হয়ে যাবে যে পরে এটা সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা কঠিন হয়ে পড়বে।

আপনি যদি ভাবেন, মুখ ও শরীরের জন্য আলাদা তোয়ালে দরকার কিনা, সেক্ষেত্রে ডা. সোমাডাকিস আলাদা তোয়ালে ব্যবহারেরই পরামর্শ দিয়েছেন।

‘ভুলে যাবেন না, আপনি যখন শরীর মোছার তোয়ালে ব্যবহার করছেন, তখন শরীরের এমন অনেক জায়গা মুছছেন যেখানে সূর্যের আলো লাগে না। ঐসব জায়গায় হয়তো এমন কিছু ব্যাক্টেরিয়া থাকতে পারে যেগুলো মলত্যাগের সঙ্গে সম্পর্কিত। এমন নানা ধরনের অর্গানিজমও থাকতে পারে যেগুলো চেহারার সংস্পর্শে আসা কোনোভাবেই উচিত নয়।

ডা. স্যালি স্বীকার করেন যে, প্রতিদিন ওয়াশিং মেশিনে তোয়ালে ধুলে খরচ বেশি হয় এবং পরিবেশগত ক্ষতিও রয়েছে; তবে তিনি ওয়াশিং মেশিনে নিয়মিত কম তাপমাত্রায় এবং কিছুদিন পরপর একবার উচ্চ তাপমাত্রায় তোয়ালে ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। 

সর্বশেষ
জনপ্রিয়