এবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল যাবে পাইপ লাইনে

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০২:৫০ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ শুক্রবার

এবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল যাবে পাইপ লাইনে

এবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল যাবে পাইপ লাইনে

সাগরের তলদেশ দিয়ে পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল খালাসের সক্ষমতা অর্জনের পর এবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু হচ্ছে পাইপ লাইনে। বহুল প্রত্যাশার প্রকল্পটি আরো দুই বছর আগে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় বিলম্বিত হয়েছে। তবে চলতি বছরের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির কাজ শেষে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপ লাইনে তেল সরবরাহ শুরু হবে। এতে কোটি কোটি টাকার পরিবহন ব্যয়ের পাশাপাশি সময়ও সাশ্রয় হবে। তেল চুরিসহ সিস্টেম লসের কবল থেকেও বহুলাংশে মুক্তি মিলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশে জ্বালানি তেলের ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৬০ লাখ টন জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়। এই তেলের ৪০ ভাগই ব্যবহৃত হয় ঢাকা এবং সন্নিহিত অঞ্চলে। বিশ্বের নানা দেশ থেকে আমদানিকৃত জ্বালানি তেল চট্টগ্রামে খালাস করা হয়। এখান থেকে পরবর্তীতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সড়ক, নৌ ও রেলপথে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। বছরে ২০ লাখ টনেরও বেশি পরিশোধিত জ্বালানি তেল চট্টগ্রাম থেকে উপরোক্ত তিনটি ব্যবস্থায় ঢাকা অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়। এই তেল পরিবহনকালে বিভিন্ন সময় লোপাটের অভিযোগ ওঠে। নৌপথে জ্বালানি তেল পরিবহনকালে তেল চুরি করে সাগরের পানি মিশিয়ে দেয়ার অভিযোগ বহু পুরানো। সড়ক ও রেলপথেও ঘাটে ঘাটে তেল চুরির উৎসবের সচিত্র বহু সংবাদ বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সিস্টেম লসের নামে এসব চুরি ও লোপাটের ঘটনা সামাল দেয়া হলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন কোটি কোটি টাকার ক্ষতির কবলে পড়ে।

এই অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয় বেশ আগে। নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং আলাপ আলোচনার পর ২০১৮ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পটির আওতায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর এবং মুন্সীগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদলাইন ও ফতুল্লা পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতা এবং করোনাকালে কাজ বন্ধ থাকায় প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়িত হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, শুরুতেই নানা জটিলতা তৈরি হয়। বিশেষ করে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতায় সময়ক্ষেপণ হয়। পরে কোভিডের জন্য কাজ বন্ধ রাখতে হয়। ফলে কাজের গতি প্রত্যাশিত হয়নি। ইতোমধ্যে প্রকল্প ব্যয়ও অনেক বেড়ে গেছে। জমি অধিগ্রহণ খরচও বেড়েছে। সবকিছু মিলে বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত রয়েছে। তবে আগামী ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল পরিবাহিত হবে বলে জানিয়েছেন বিপিসির কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা গতকাল জানান, ইতোমধ্যে ৮৩ শতাংশের মতো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১৭ শতাংশ কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিপিসির কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। সিস্টেম লস কমে যাবে। সাগরের তলদেশ দিয়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু করার সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল সরবরাহের এই পাইপ লাইন দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা খাতে বড় ধরনের সক্ষমতা বলেও তিনি মন্তব্য করেন।