ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেতে আশাবাদী সরকার

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৯:৩৫ এএম, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ বুধবার

ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেতে আশাবাদী সরকার

ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেতে আশাবাদী সরকার

আবারও ঢাকায় এসেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধি দল। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ঢাকায় আসে দলটি। বাংলাদেশের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচির আওতায় শর্ত বাস্তবায়ন, সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড়কে সামনে রেখে ঢাকা সফর করছে আইএমএফ মিশন। এরই মধ্যে সরকার আশাবাদী, নির্ধারিত সময়েই সংস্থাটির ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নিট রিজার্ভের উন্নতি ছাড়া আইএমএফের সব শর্তই পূরণ করেছে বাংলাদেশ। ফলে ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ পেতে সমস্যা হবে না।

সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফের মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থার এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করবেন তারা। প্রতিনিধি দল থাকবে আগামী ৮ মে পর্যন্ত। আজ বুধবার অর্থ বিভাগের সঙ্গে প্রথম বৈঠক করবে দলটি।

জানা গেছে, গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে আইএমএফ। এর তিন দিন পর প্রথম কিস্তিতে ছাড় করে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এর পর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুন মাসের মধ্যে তৃতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হতে পারে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে পুরো অর্থ দেওয়ার কথা।

জানা গেছে, দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার আগে সময়ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। বিশেষ করে গত জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে আইএমএফের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে যে অব্যাহতি চেয়েছিল বাংলাদেশ, সংস্থাটি তা অনুমোদন করে। সে অনুযায়ী ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ সংরক্ষণের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়। গত ডিসেম্বর শেষে নিট রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ২৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। যা কমিয়ে তা ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার করা হয়। তবে ডিসেম্বর পর্যন্ত নিট রিজার্ভ ছিল ১৬ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। চলতি পঞ্জিকা বর্ষের মার্চ মাসেও নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। মার্চ শেষে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু বাস্তবে তা ছিল প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের জুনে ২৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও নিট রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

এ ছাড়া আইএমএফ চাচ্ছে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে। এ বিষয়ে তাদের একটা চাপও আছে। কিন্তু বাংলাদেশ ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতিতে বিনিময় হার চালাচ্ছে। তবে এ সময়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদক্ষেপ নিচ্ছে। দুর্বল ব্যাংকগুলো সংস্কার করে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে দেশের ব্যাংকিং খাতে অনেকটা শৃক্সক্ষলা ফিরবে বলে প্রত্যাশা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তৃতীয় কিস্তির জন্য নির্ধারিত ছয়টি পরিমাণগত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রিজার্ভ ছাড়া পাঁচটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে কর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। সরকার ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কর রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। ঋণের আরেকটি শর্ত হলো, বাজেট ঘাটতি যেন ৯০ হাজার ৫২০ কোটি টাকার বেশি না হয়। ডিসেম্বরে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঋণের দুটি শর্ত হলো, ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের সামাজিক ব্যয় ও মূলধন বিনিয়োগ হতে হবে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকার এ দুই খাতে প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যয় করেছে।

এ ছাড়া সরকার মার্চ মাসে পেট্রোলিয়াম পণ্যগুলোর জন্য একটি পর্যায়ক্রমিক সূত্রভিত্তিক মূল্য সমন্বয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং এরই মধ্যে দুবার সমন্বয় করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জিডিপির ত্রৈমাসিক তথ্য প্রকাশ করা শুরু করেছে। এমন সব উদ্যোগের ফলে তৃতীয় কিস্তির টাকা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী সরকার।