পৃথিবীকে রক্ষায় সফল হয়েছে নাসা

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১২:১০ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

একটি গ্রহাণুতে সফলভাবে আঘাত করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার একটি মহাকাশযান। গত মঙ্গলবার ভোরে (২৭ সেপ্টেম্বর) শব্দের চেয়ে বেশি গতিতে পৃথিবী থেকে ৬৮ লাখ মাইল দূরে ডাইমরফোস নামের গ্রহাণুতে আঘাত হানে মহাকাশযান ‘ডার্ট’।

প্রায়ই বিভিন্ন গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। এগুলো পৃথিবীর জন্য হুমকি তৈরি করে। এসব গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ এড়াতে কীভাবে একটি নির্দিষ্ট গ্রহাণুকে ধাক্কা মেরে তার গতিপথ বদলে দেয়া যায়, সেটাই ছিল নাসার এ পরীক্ষার লক্ষ্য। এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই গবেষণা করছেন।

খবরে বলা হয়েছে, নাসার এ মিশনের নাম দেয়া হয় ‘নাসা ডার্ট মিশন’। ডাইমরফোস নামে যে গ্রহাণুর ওপর প্রথমবারের মতো এ পরীক্ষা চালানো হলো, সেটা মোটামুটি ১৬০ মিটার চওড়া যা একটি ফুটবল স্টেডিয়াম আকারের। এখন থেকে প্রায় দশ মাস আগে পৃথিবী থেকে গ্রহাণুর উদ্দেশে রওনা দেয়া নাসার মহাকাশযান ’ডার্ট’। মঙ্গলবার পরীক্ষাটি সফলভাবে শেষ হয়।

এদিন ১৫ হাজার মাইল বেগে গ্রহাণুর ওপর আছড়ে পড়ে মহাকাশযানটি। লাইভ-স্ট্রিমিং ভিডিওতে দেখানো হয়, মহাকাশযানটি আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে গ্রহাণুটি টুকরো টুকরো হয়ে যায়। মিশন সফল হওয়ায় কন্ট্রোল রুমে মহাকাশ গবেষকরা উল্লাসে মেতে ওঠেন। নাসা এবং জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের দল একে অপরকে আলিঙ্গন করে অভিবাদন জানান।

ডার্টের গায়ে ক্যামেরা বসানো ছিল। গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ওই ক্যামেরা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে একটি করে ছবি পাঠাচ্ছিল মহাকাশযানটি। পুরো দৃশ্য ওয়াশিংটন ডিসির বাইরে নাসার মিশন অপারেশন সেন্টার থেকে প্রচার করা হয়।

আকারে ভেন্ডিং মেশিনের চেয়েও ছোটো ওই মহাকাশযানের ধাক্কায় গ্রহাণুর গতিপথ আদৌ বদলালো কিনা কিংবা কতটা বদলালো সেটা এখন টেলিস্কোপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করবেন বিজ্ঞানীরা। তারা ধারণা করছেন, ঘণ্টায় প্রায় ১৫ হাজার মাইল বেগে ডার্টের ওই আঘাতে গ্রহাণুটির গতি সামান্য হলেও কমবে। তাতে এর কক্ষপথে সুক্ষ্ম পরিবর্তন আসবে, যা দীর্ঘমেয়াদে এর গতিপথ পাল্টে দিতে পারে।

পৃথিবীর জন্য বিপদজনক গ্রহাণুর গতিপথ বদলে দেয়ার এই কৌশলের নাম দেয়া হয়েছে ‘কাইনেটিক ইমপ্যাক্টর টেকনিক’। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডাইমরফোসের ক্ষেত্রে গতিপথের পরিবর্তন কতটা হল, তা মাপতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। তবে গ্রহাণুকে আঘাত হানার অংশটুকু তারা সফলভাবেই শেষ করেছেন তারা।

নাসার ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পাম মেলোরি বলেন, ‘নাসা কাজ করে মানবজাতির মঙ্গলের জন্য। কে বলতে পারে, হয়ত এ প্রযুক্তিই একদিন আমাদের এই গ্রহকে রক্ষা করতে পারবে।’ ডাইমরফোসের আকারের একটি গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করলে সেটার প্রভাব একটি পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের চেয়েও বহুগুণ বেশি হতে পারে। আর যদি গ্রহাণু এক কিলোমিটার চওড়া হয়, তাহলে পুরো পৃথিবীতে তার প্রভাব পড়তে পারে।

তবে ডাইমরফোসের গতিপথ পৃথিবীর দিকে ছিল না। কোনো হুমকিও এটা তৈরি করেনি। শুধু পরীক্ষার জন্য এটাকে বেছে নেন বিজ্ঞানীরা। সাড়ে ৩২ কোটি ডলারের এই মিশনে গত বছরের (২০২১) নভেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ স্পেস ফোর্স ঘাঁটি থেকে ডার্ট মহাকাশযানটি নিয়ে মহাকাশের দিকে রওনা হয় স্পেসএক্স-এর ফ্যালকন-৯ রকেট।

নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ডার্ট। এরপর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ কাটিয়ে সূর্যের চারদিকে নিজ কক্ষপথে ঘুরতে শুরু করে। সেই পথেই মঙ্গলবার ডাইমরফোসের ওপর আঘাত হানে সে। পুরো পরীক্ষাটি ছিল রোবট আত্মঘাতী মিশনের মতো।