চালু হচ্ছে বন্ধ তিন রেলপথ

অনলাইন ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০১:২২ পিএম, ৪ অক্টোবর ২০২২ মঙ্গলবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

১৯৬৫ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে রেল রুটগুলো একে একে চালু হচ্ছে। প্রায় ৫৩ বছর বন্ধ থাকার পর ২০০৮ সালে ঢাকা-কলকাতা রুটে মৈত্রী এক্সপ্রেস দিয়ে বিচ্ছিন্ন রেল সংযোগ চালু করে বাংলাদেশ-ভারত। এর মাধ্যমে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয়। এরপর একে একে পাঁচটি রুট চালু হয়েছে। ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর দুদেশের প্রধানমন্ত্রী চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথের শুভ উদ্বোধন করেন।

এর সাড়ে ৭ মাস পর ওই পথে পণ্যবাহী ট্রেন চালু হয়। গত বছরের ২৬ মার্চ চালু হয় যাত্রীবাহী ট্রেন। বাকি তিনটি রুটও শিগগিরই চালু হবে। এগুলো হচ্ছে শাহবাজপুর-মহিশাসন, বুড়িমাড়ি-চেংরাবান্ধা এবং মোগলহাট-গিতলদহ। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যে আটটি ইন্টারসেকশন বন্ধ হয়েছিল, এরই মধ্যে তার পাঁচটি চালু হয়েছে। বাকি তিনটির কাজ চলছে পুরোদমে।

বন্ধ লাইনগুলোর বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন  বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা লাইনগুলো চালু করতে ভারতের সহযোগিতা পাচ্ছি। যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ বাকি ৩টি লাইনও চালু হবে। একই সঙ্গে চালু রুটগুলো দিয়ে আরও বেশি যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চালানোর উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। দুদেশের মধ্যে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশ। আমরা পর্যায়ক্রমে রেলব্যবস্থাকে ব্রডগেজে রূপান্তর করছি। ভারতের সব রেললাইন ব্রড গেজে। এদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা-বাংলাদেশের আখাউড়ার মধ্যে নতুন একটি রেলপথ নির্মাণকাজ দ্রুততার সঙ্গে চলছে। ভারতীয় অর্থায়নে এ প্রকল্পটি সমাপ্ত হচ্ছে। আশা করছি আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে এর উদ্বোধন করা সম্ভব হবে।

রেলসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একসময় দুদেশের মধ্যে ৮টি পয়েন্ট দিয়ে ট্রেন চলাচল করত। কিন্তু ১৯৬৫ সালে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুদেশের মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থায় সম্ভাবনার গুরুত্ব বুঝতে ভুল করেননি বাংলাদেশ-ভারতের নীতিনির্ধারকরা। এ কারণে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ট্রেন যোগাযোগ শুরু হয়। যাত্রী পরিবহণের পাশাপাশি মালবাহী ট্রেনও চালু হয়েছে। পাঁচটি রুটে রেল চলছে। এর তিনটি উত্তর বঙ্গে, দুটি দক্ষিণ বঙ্গে। এছাড়া আগামী বছরের মাঝামাঝি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আখাউড়া-আগরতলা নতুন রেলপথ।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। সেখানে দুদেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রেল যোগাযোগ আরও বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। চলমান রুটে আরও ট্রেন চালানোর পাশাপাশি বন্ধ তিনটি রেলপথ দ্রুত চালুর বিষয়েও আলোচনা হয়। চালু ৫টি রুটের মধ্যে বেনাপোল-পেট্রাপোল, দর্শনা-গেদে, রোহনপুর-সিংহাবাদ, বিরল-রাধিকাপুর, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া লাইনগুলো চালুর ক্ষেত্রে ভারত বিশেষ সহায়তা দিচ্ছে। তারা ১০টি রেল ইঞ্জিন উপহার হিসাবে দিয়েছে। আরও ২০টি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। সবকটি লাইন চালু হলে ভারত ছাড়াও নেপাল, ভুটানের সঙ্গে কানেকটিভিটি বাড়বে। এসব দেশে আরও বেশি যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চালানো যাবে। এজন্য বাংলাদেশে নতুন লাইনগুলো ব্রডগেজ করা হচ্ছে। পুরোনো লাইনও ব্রডগেজে রূপান্তর করা হচ্ছে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, দুদেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল আরও কার্যকর ও সক্রিয় হলে বাংলাদেশই বেশি লাভবান হবে। আঞ্চলিক বাণিজ্য খাত আরও জোরদার হবে। বিশেষ করে বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল) এবং বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে।

দুদেশের মধ্যে রেলপথে উভয় দেশের যাত্রী পরিবহণ হচ্ছে। তবে মালামাল পরিবহণের ক্ষেত্রে শুধু ভারত থেকে মালবাহী ট্রেনযোগে বাংলাদেশে পণ্য আসে। বাংলাদেশে পণ্য খালাস শেষে খালি কনটেইনার ভারতে ফিরে যায়। দুদেশের মধ্যে ট্রেনযোগে পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু করতে উভয় দেশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আগামী বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকেও পণ্যবাহী ট্রেন যাবে ভারতে।

রেলওয়ে অপারেশন দপ্তর সূত্র বলছে, ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রেন বাংলাদেশে আসায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা আয় করেছে বাংলাদেশ রেল। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ আয় আরও ১০ কোটি বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্ধ থাকা বাকি তিনটি রুট চালু হলে পুরোদমে রেলযোগে পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু হবে। এতে বছরে ৫০০ থেকে ২০০ কোটি টাকা আয় হবে বাংলাদেশ রেলের। বর্তমানে রেলে যাত্রী পরিবহণ করে বছরে আয় করে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।