জিয়ার কারফিউ গণতন্ত্র থেকে খালেদা ও তারেকের লাঠি-রড তন্ত্র

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৯:৫১ এএম, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ বুধবার

জিয়ার কারফিউ গণতন্ত্র থেকে খালেদা ও তারেকের লাঠি-রড তন্ত্র

জিয়ার কারফিউ গণতন্ত্র থেকে খালেদা ও তারেকের লাঠি-রড তন্ত্র

গত কয়েক বছর শান্তি, মানবতা ও গণতন্রের জন্য কূটনীতিকদের কাছে নানা অভিনয় আর মায়াকান্না করলেও বিএনপি যে একটি নিম্নস্তরের ও মধ্যযুগীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, লাঠি-রড নিয়ে তাদের তান্ডব আর আস্ফালনে সেটি গত কয়েকদিনে গোটা জাতি দেখলো।

বিশেষ করে, গত কয়েক মাস ধরে বিএনপি দেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এবং এ লক্ষ্যে তাদের শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান নিশ্চিত করার জন্য বিদেশি রাষ্ট্র এবং কূটনীতিকদের কাছে ধর্ণা দিয়ে আসছে। বিএনপি নিজেদের মাদার তেরেসা হিসেবে উপস্থাপন করতে কূটনীতিকদের কাছে কতইনা মায়াকান্না করেছে। কূটনীতিক মহলসহ অনেকের চোখ ছানাবড়া করে দিয়ে সেই বিএনপি গত কয়েকদিনে তার আসল চেহেরা উম্মোচন করেছে।

গত কয়েকদিন ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশ/জনসভায় বিএনপি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ট্রাক এবং বিভিন্ন যানবাহনে করে লাঠি সরবরাহ করছে। এই লাঠিগুলোতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে তাদের সন্ত্রাসী/কর্মীদের হাতে দিচ্ছে। এই লাঠি নিয়ে তারা বিভিন্ন জায়গায় তান্ডব চালানোর চেষ্টা করছে। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার বাড্ডা হাই স্কুলের সামনে বিএনপির সমাবেশ স্থলে এই দৃশ্য দেখা গেছে। গতকাল ২৬ সেপ্টেম্বর হাজারীবাগে শিকদার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সংলগ্ন সড়কে বিএনপির সমাবেশে আসা সন্ত্রাসী/ কর্মীদের হাতে এই রকম লাঠি দেখা যায়। তাদের কারো কারো কাছে রড ও আগ্নেয়াস্রও দেখা যায়। তারা এই লাঠি ও রডের জোরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর হামলা করছে এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় অংশ নিচ্ছে। এই লাঠি আর রডের কারণেই তারা নিজেদের শক্তিশালী মনে করছে আর তান্ডব চালাচ্ছে।

বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করে জাতীয় পতাকার অবমাননা করছে। এটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধের মধ্যে পড়ে। জাতীয় পতাকা নিয়ে বিএনপির এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নতুন প্রজন্মের কাছে কী বার্তা দিচ্ছে?

কয়েক মাস আগে মধ্যযুগীয় কায়দায় লাঠি সোটা নিয়ে কয়েকশো বিএনপির সন্ত্রাসী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখল করতে গিয়েছিলো। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের প্রতিরোধের মুখে তারা পালিয়েছিলো। গত কয়েকদিনের বিএনপির মধ্যযুগীয় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দেখলেই বুঝা যায়, তারা আগামী নির্বাচনে কী করতে চায়। তাদের কয়েকদিনের লাঠি-রড তন্ত্র প্রমান করেছে, তারা চর দখলের মতো লাঠি রড অস্র নিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল করে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসতে চায়। কেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি – ভোট জালিয়াতি বন্ধ করার জন্য আমরা যে ইভিএমের দাবি করে আসছি, বিএনপির সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আমাদের দাবীকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শেখ হাসিনার সরকার প্রবর্তিত ই-টেন্ডারিং এর কারণে যেমন এদেশে টেন্ডারবাজি- টেন্ডার ছিনতাই সহ টেন্ডার সংক্রান্ত সকল দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে, ইভিএম এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে কেন্দ্র দখল-ভোট ডাকাতি সহ সকল নির্বাচনী অপরাধ বন্ধ হবে।

একেবারে গোল্ডফিশ না হলেও অনেকটা ভুলোমনা বাঙালি জাতি অসাংবিধানিক ও অবৈধ শক্তির পকেটে জন্ম নেয়া ‘illegitimate child’ কিংস পার্টি বিএনপির ইতিহাস ভুলে গেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক সংবিধান লংঘনকারী ও অসাংবিধানিক শাসক (usurper) হিসেবে ঘোষিত জিয়ার কারফিউ গণতন্ত্রের কথা আমরা ভুলে গেলেও ইতিহাসে সঠিকভাবেই লিপিবদ্ধ আছে। একদিকে সংবিধানকে পদদলিত করে গণতান্ত্রিক শাসন রুদ্ধ করেছিল, অন্যদিকে বিদ্রোহ দমনের নামে মধ্যযুগীয় কায়দায় হাজার হাজার সেনা সদস্যকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল জিয়া। সাবেক প্রধান বিচারপতি সায়েমের কাছ থেকে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতির পদ দখলকারী জিয়ার তথাকথিত গণতন্ত্র সম্পর্কে বিচারপতি সায়েম তার লেখা বইয়ে কী লিখেছিলেন সেটি আমরা জানি। জিয়ার ক্ষমতা গ্রহণকে সায়েম ‘রক্ষণ যখন ভক্ষক’ আখ্যা দিয়েছিলেলন। জিয়ার নির্বাচনী কারচুপিতে দেশে বিদেশী মহল যে ছি ছি করেছিল, সেটি জাস্টিস সায়েমের বইতে উঠে এসেছে। জাতির পিতার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জিয়া সশরীরে পিতার হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া খুনীদের বিদেশে কূটনীতিকের চাকুরী দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল। জাতির পিতার হত্যার বিচার বন্ধ রাখতে জিয়া-এরশাদ- খালেদা ইনডেমনিটি আইন বহাল রেখেছিলো।

সাম্প্রতিক সময়ে গণতন্ত্রের জন্য মায়াকান্না করা বিএনপির ইতিহাস এতো কুৎসিত যা স্বল্প সময়ে বর্ণনা করা যায় না। তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেয়েছিলো। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল। ১৫ ফেব্রুযারীর একদলীয় ভোটার বিহীন নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলো। তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল। মা-ছেলের নির্দেশে গ্রেনেড হামলা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা সহ গোটা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে হত্যা করে দেশকে নেতৃত্ব শুন্য করতে চেয়েছিলো। ক্ষমতায় থাকতে তারা অসংখ্য আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীকে হত্যা করেছিল। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিদেশে লবিস্টের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি খরচ করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এই টাকা বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময় পাচার হওয়া দুর্নীতির টাকা।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কর্মকান্ড এবং তাদের নেতাদের বক্তব্য শুনলেই বুঝা যায়, তারা কোন ধরণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। নির্বাচনে তারা কীভাবে অংশ নিতে চায়। তাদের পুরোনো চরিত্র আর মানসিকতার যে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি, গত কয়েকদিনে সেটিই তারা প্রমান করলো। তাদের কর্মকান্ডে মনে হচ্ছে, এখনও তারা আশির দশকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরু-বাবলুর সন্ত্রাসী রাজনীতির দর্শনে মজে আছে। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে আজ বিশ্বে নেতৃত্বের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, বাংলাদেশ যে একুশ শতকে এসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তথ্য প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়ার অপেক্ষায় আছে, সেই তথ্য কী অর্ধ শিক্ষিত আমানুল্লাহ আমানের বাহিনী জানে ? এরা এখনও মধ্যযুগীয় মানসিকতা নিয়ে বসে আছে। এই মধ্যযুগীয় শক্তিকে আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে। সেটা এখনই।