সিয়ং পাও: কলকাতায় ছাপা চীনা ভাষার শেষ সংবাদপত্র

ফিচার ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১১:০১ এএম, ২৩ মে ২০২৩ মঙ্গলবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কলকাতা থেকে এক সময়ে বেশ কয়েকটি ছাপা হতো চীনা ভাষার সংবাদপত্র। তবে কালের পরিক্রমায় এসব হারিয়ে গেছে চীনা ভাষাভাষী মানুষের সংকটে। তবে করোনার আগেও ঐতিহ্যের শহর কলকাতা থেকে প্রকাশিত হতো একটি চীনা ভাষার সংবাদপত্র; যেটির নাম ‘সিয়ং পাও’।

করোনা পরবর্তী সময়ে খবরের কাগজের ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। বহু মানুষই ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের প্রতি ভরসা বাড়িয়েছেন। তার ফলে খবরের কাগজের বিক্রি কমেছে। আর এই কারণেই কলকাতার ইতিহাসের এক অধ্যায়েরও সমাপ্তি ঘটে গেল। বন্ধ হল কলকাতা থেকে ছাপা হওয়া চীনা ভাষার সংবাদপত্র  ‘সিয়ং পাও’ । শুধু কলকাতা নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যেই এটি একমাত্র সংবাদপত্র, যা কি না চীনা ভাষায় ছাপা হত। 

কলকাতার নিউ ট্যাংরা স্ট্রিট থেকে ছাপা হতো ‘সিয়ং পাও’। এর উপর প্রথম কোপটি ফেলে করোনা। করোনার প্রথম আসার সময়েই বন্ধ হয়ে যায় এই কাগজ। তার পরে আজ বেরোবে, কাল বেরোবের চক্কর চলতে থাকে। কিন্তু সেই দিন আর আসেই না। শেষ পর্যন্ত এটি যে আর কখনও বেরোবে না, তা নির্ধারিত হয়ে যায় ২০২১ সালেই। সেই বছরের শেষ দিকে মারা যান এই কাগজের সম্পাদক কুয়ো-সাই চাং। দায়িত্ব নিয়ে এই কাগজ প্রকাশ করার আর কেউ থাকেন না। ফলে ঘোষিত হয়ে যায় ইতিহাসের এই অধ্যায়টির পরিসমাপ্তি।

১৯৬৯ সালে এই কাগজের শুরু। লি ইয়ুন চিন সেই সময়ে এটি শুরু করেছিলেন ট্যাংরা অঞ্চলের মানুষের জন্য। শেষ বেলায় এসে এটি ছিল ৪ পাতার পত্রিকা। প্রতিদিনই এটি প্রকাশিত হত। মূলত চীন, তাইওয়ান, হংকংয়ের খবর এখানে থাকত। তার সঙ্গে অবশ্যই থাকত কলকাতার খবরও। দেশের অন্যান্য প্রান্তের খবরও প্রয়োজন মতো প্রকাশিত হত এখানে। ইংরেজি কাগজ থেকে ম্যান্ডারিন ভাষায় অনুবাদ করা হত খবর। সেগুলোই প্রকাশিত হত এখানে। 

সম্প্রতি এই পত্রিকার অফিসের কার্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা। তারা দেখেছেন, ভগ্ন টেবিল-চেয়ার, পুরোনো কিছু কাগজ ছাড়া প্রায় কিছুই আর অবশিষ্ট নেই এই দফতরে। বহু দিনের অব্যবহৃত থাকার ফলে গোটা অফিসই মালিন্যে ভর্তি। এক সময়ে রোজ ২ হাজারের উপর বিক্রি হওয়া এই কাগজের এমন হাল কী করে হল?

এ প্রসঙ্গে বলতে চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট চেন ইয়াও হুয়া জানিয়েছেন, এর জন্য দায়ী ম্যান্ডারিন ভাষাটি নতুন প্রজন্মের না জানা। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে প্রায় কেউই আর চীনা ভাষা জানেন না। ফলে তাদের পক্ষে আর অনুবাদের কাজ করা সম্ভব নয়। সেই কারণেই এই কাগজটি আর প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর তার ফলেই শেষ হয়ে গেল কলকাতার ইতিহাসের এক অধ্যায়।