ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অনুগল্প: আব্বার একটি লাঠি দরকার

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

প্রকাশিত: ১৩:০১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৩  

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

আব্বার আঙুল ধরে হাঁটতে শিখেছি। তার হাত ধরে হেঁটে গেছি কতদূর। বাড়ির উঠোন থেকে স্কুলের বেঞ্চ পর্যন্ত। দুপুরের গোসলে পুকুরের ঘাট কিংবা নদীর পাড়ে। তার হাতের তালুতে শিখেছি সাঁতার।

কর্মব্যস্ততায় আমরা এখন দূরে। আব্বা গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। অবসরের পর থেকেই শারীরিক-মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। কঠোর পরিশ্রমী মানুষটি কেমন যেন চুপসে যান।

একদিন বিকেলে আব্বা ফোন করলেন। বরাবরের সেই উচ্ছ্বাস নেই। মধুর কণ্ঠে বলেননি, ‘বাবা কেমন আছো?’ আহত কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘হঠাৎ ডানপায়ে খুব ব্যথা। হাঁটতে কষ্ট হয়।’ আমি বললাম, ‘ডাক্তার দেখাতে হবে। ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে।’

আহত হৃদয়ের দীর্ঘশ্বাসে জানালেন, তার একটি লাঠি দরকার। অন্তত ঘর থেকে মসজিদ পর্যন্ত যেতে। আমি তখন প্রায় বাড়ির পথে। আব্বার জন্য তখন লাঠি নিয়ে যেতে পারিনি। যাত্রাপথে কোথাও পাওয়া গেল না।

ফোন রেখে চুপ হয়ে গেলাম। কোনোদিন ভাবিনি, আব্বা বৃদ্ধ হয়ে যাবেন। যাকে হাঁটতে শিখেয়েছেন, তার কাছেই নিজের হাঁটার জন্য একটি লাঠি চাইবেন। বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। মনে হলো, বাবারা কেন বুড়ো হয়ে যায়?

বাড়ি থেকে ফেরার সময় আব্বাকে কথা দিয়েছিলাম, কিছুদিন পর কিনে পাঠাবো। আব্বাকে দেওয়া কথা রাখতে পারিনি। লাঠি আর কিনে পাঠাতে হয়নি। অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে ঢাকায় এসেছিলেন আব্বা। দু’মাস ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে চলেও গেলেন অভিমানে।

আব্বার সেই আব্দার পূরণের ব্যর্থতা প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খায় আমার হৃদয়। কাঁধের খাটিয়া যেন ক্রমশই ভারী হয়ে ওঠে। এখন স্বপ্নে আসেন আব্বা, একটি লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটেন। খুব ধীরে, খু-উ-ব ধীরে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়