ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অর্থ ছাড়াই সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা মেলে যেখানে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:০৮, ৩ মে ২০২৩  

অর্থ ছাড়াই সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা মেলে যেখানে

অর্থ ছাড়াই সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা মেলে যেখানে

দেশে কম খরচে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এখনো কঠিন। যদিও জয়পুরহাটের ২০ শয্যার সরকারি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটি এর ব্যতিক্রম। এখানে বহির্বিভাগ ও অন্তঃবিভাগে কোনো অর্থ ছাড়াই মেলে সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা। আর এ কারণের মধ্য ও নিম্নবিত্তদের পছন্দের হাসপাতাল এটি।
জানা গেছে, ১৯৭৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জয়পুরহাট শহরের ধানমন্ডির মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে বহির্বিভাগে শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন এবং অন্তঃবিভাগে ১০-১২ রোগী ভর্তি থাকেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই মা, শিশু ও বিভিন্ন কিশোর কিশোরীদের ভিড় দেখা যায় ধানমন্ডির মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে। এখানে চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয় রোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল। ২০ শয্যার এই মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে বহির্বিভাগ ও অন্তঃবিভাগে কোনো অর্থ ছাড়াই মিলছে স্বাস্থ্যসেবা।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার চকশ্যাম গ্রাম থেকে আসা আয়েশা নামে এক মা তার ৬ মাসের সন্তানকে নিয়ে এসেছেন এই কেন্দ্রে। সময় সংবাদের সঙ্গে তার কথা হয়। তিনি জানান, আমার স্বামী একজন ভ্যানচালক। অভাবের সংসারে দুই সন্তানের মা হয়েছি। দামি কোনো ক্লিনিকে যেতে পারিনি। এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এখানেই দ্বিতীয় সন্তান প্রসব করেছি। তারা সব কিছুই বিনামূল্যে দিয়েছেন।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল গ্রামের বাসিন্দা আলেফা বেগম অনেকটা সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, গর্ভে সন্তান আসার কয়েক মাস পর থেকেই এই কেন্দ্র নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছে। মাসে মাসে আমার মোবাইল ফোনে তারা এসএমএস কিংবা কল করে ডেকে নেয়। সর্বশেষ পেটে ব্যথা উঠলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানামাত্র আমার বাসায় অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে দিয়ে আমাকে এই কেন্দ্রে নিয়ে এসে বিনামূল্যে প্রসব করানোসহ ওষুধপত্রও দিয়েছেন। এ ছাড়াও প্রসবের একদিন পর আবারও আমাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাসায় রেখে এসেছেন।

জয়পুরহাট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের বিষয়ে জেলা সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. নূর ই আলম হোসেন বলেন, এমন চিত্র দেশের যে কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে দেখা যায়, তার একটি এই কেন্দ্রটি। এখানে সেবার মান এত ভালো যে, প্রশংসা না করে থাকা যায় না।

হাসপাতালের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক জ্যোতি ও অ্যাটেনডেন্টস নার্স সাবিরা সুলতানা জানান, সারা দেশেই যেখানে সিজারিয়ান প্রসব আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে, সেখানে জয়পুরহাট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র অন্তঃসত্ত্বা মা ও তার পরিবারকে স্বাভাবিক সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করে। এ ছাড়াও এখানে ভর্তির ২৪ ঘণ্টাই মা ও শিশুকে বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান করে থাকে।

জয়পুরহাট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) ডা. শাহানা পারভীন বলেন, হাসপাতালে শিশুদের টিকা দেয়া, প্রজনন, পরিবার পরিকল্পনা পরামর্শ, সন্তান প্রসব এবং বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস দেয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়াও আর্থিকভাবে অসচ্ছল মায়েদের অটোমেশনের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ কিংবা কল করে ডেকে এনে সেবা দেয়া হয়।

এ বিষয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ডা. কেএম জোবায়ের গালিব বলেন, জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব মা আর্থিকভাবে অসচ্ছল, তাদের মোবাইল ফোনে কল করে কিংবা এসএমএস করে ডেকে এনে আমরা নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি। সর্বোপরি সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মাতৃমৃত্যু রোধকল্পে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এই কেন্দ্রটি।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়