ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

আনারসের রাজ্য মধুপুর

ভ্রমণ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:১৫, ১৬ মে ২০২৩  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মধুমাসে মধুপুর ভ্রমণের পরিকল্পনা একদম যুৎসই! পুরো মধুপুর জুড়েই আনারসের প্রচুর চাষ হয়। মধুপুরের অরুণখোলা, ষোলাকুঁড়ি, আউশনাড়া ইউনিয়নে আনারসের সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। এ এলাকায় চাষ হওয়া আনারসের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় আনারস হল জলডুগি। মধুপুরের এসব ইউনিয়নের যে কোনো গ্রামে গেলে দেখা যাবে বিস্তীর্ণ আনারসের ক্ষেত। ভরা মৌসুমে মধুপুর শুধু আনারসের রাজ্য নয়, পর্যটন কেন্দ্রও হয়ে ওঠে!

আনারসের রাজ্য দেখতে মধুপুর পৌঁছাই সকালেই। গাড়ি থেকে নেমে বাজারে এলাম নাশতা করতে। চওড়া পাকা সড়কের পাশের এই জায়গার নাম জলছত্র। ঢাকা শহর বা তার বাইরে যারা আনারস কেনায় অভ্যস্ত, তারা জলছত্র নামের সঙ্গে পরিচিত। সাত সকালে সরগরম এই হাট। ফজরের আজান দেওয়ার পরপরই হাটুরের দল হাজির জলছত্র বাজারে। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার কাহিনি যেন! চারদিক থেকে কিলবিল করে মানুষ ঢাকা মহাসড়ক বা প্রধান সড়কের দুই পাশে এসে জড়ো হচ্ছে। কেউ বাইসাইকেলে ঝুলিয়ে, কেউ ঘোড়ার গাড়িতে, কেউ পিকআপ ভ্যানে করে ঠেলে-ঠুলে নিয়ে আসছে আনারস। দাপুটে এই আনারসের বাজার যেন দেখার মতো।

২৫ মাইল থেকে সাইকেলে করে বের হয়ে আসছে ভ্যান বোঝাই আনারস, অরুণখোলার দিক থেকে মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ি করে আসছে আনারস। ষোলাকুঁড়ি থেকে সাইকেলের দুই পাশে আনারস ঝুলিয়ে সাইকেল হাতে টেনে নিয়ে আসছে। দূরদূরান্ত থেকে জড়ো হওয়া পাইকাররা দুই পা চালিয়ে রাস্তার মুখে ঘিরে ধরছে বিক্রেতাদের। যদি কম দামে সবার আগেই কিনে ফেলা যায়, সে আশায়।

এই ব্যস্ততা তো মাত্র শুরু! ভরা মৌসুমে (আষাঢ়-ভাদ্র) বাজারের গণ্ডি ছাড়িয়ে পুলিশ ফাঁড়ি থেকে শুরু করে ২৫ মাইলের মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত হয় আনারসের বাজার। ব্যস্ততাও বেড়ে যায় সবার।

ঢাকা থেকে আসা আনারস ব্যবসায়ী আনোয়ার বললেন, ‘উজ্জ্বল রং আর আকারে বড় আনারস বেছে কেনার চেষ্টা করছি। কারণ, এই আনারস ঢাকায় বিক্রি হবে। সেখানে বড় আনারসের দাম ভালো পাওয়া যায়।’ স্থানীয় মানুষেরা খাওয়ার জন্য বেছে বেছে ছোট আনারস কিনে নেন। আমরাও ছোট আনারস কিনে আনলাম। বাজার দেখা শেষ করে যেতে পারেন আনারসের বাগানের দিকে। এখানে মধুপুরের শালবন লাগোয়া গ্রামগুলোতে শুধুই আনারসের বাগান। এ সময়ে বাগানগুলোতে পাকা আনারসের আধিক্য। চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যের এসব আনারসের বাগানে বেড়াতে ভালো লাগবে।

আনারস বাগান দেখতে একটা ভ্যানে চড়ে বসলাম। ভ্যান করে দোখলা যাবার জার্নিটাই ছিল এই ট্রিপের সবচেয়ে মজার অংশ। রাস্তার দু’পাশে আনারসের বাগান। রাস্তাটা ছিল অসাধারণ। কিছু কিছু জায়গা ভাঙ্গা হলেও বেশিরভাগ রাস্তাটাই ছিল মসৃণ। আমরা নামলাম মধুপুর বনের সামনে। এই বনের ভিতরেই দোখলা রেস্ট হাউজ ও ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। মাটি ফুঁড়ে এক লাঠির মত বের হয়ে আছে শত শত আনারস! বাগানে বেশিক্ষণ সময় না কাটিয়ে আবার ভ্যানে চড়ে বসলাম।

মধুপুর ঘোরা শেষ। এখন যাবো ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। রাজবাড়ি দেখতে ও বিখ্যাত মন্ডা খেতে। আবার সেই প্রান্তিক বাস। ঘণ্টাখানেক জার্নি শেষে আমাদের নামিয়ে দিলো রাজবাড়ির গলির মুখে নামিয়ে দিলো। হেলেদুলে আশপাশ দেখতে দেখতে রাজবাড়িতে ঢুকলাম। ঢোকার পর চারিদিকে ভালোভাবে তাকানোর আগেই নিরাপত্তারক্ষী বললো, সময় কম, একেবারে শেষে যান আগে। পেছন থেকে দেখতে দেখতে আসেন। আমরা ভাবলাম শেষ আর কতটুকুই হবে। কিন্তু ভিতরে ঢুকতে গিয়ে অবাক। একের পর এক গেট পার হচ্ছি শেষ আর হয় না। বিশাল ব্যাপার স্যাপার। আসলেই যেন রাজবাড়ি। রাজবাড়িটি যথেষ্ট সুন্দরও। তাড়াহুড়া করে যতটুকু পারা যায় দেখলাম আর ছবি তুললাম। তবে এতে করে মন ভরে নি! সময় নিয়ে আসতে হবে অন্যকোনো দিন।

রাজবাড়ি থেকে বের হয়ে হাতের বাম পাশের গলি ধরে মুক্তাগাছার বিখ্যাত মন্ডার দোকানে চলে আসলাম। সুন্দর ব্যবস্থা। অনেক চেয়ার আছে। চেয়ারে গিয়ে বসতে হয়। দোকানের বয় এসে জিজ্ঞাসা করবে, ‘কয়টা মন্ডা খাবেন?’ অর্ডার দিলেই এসে দিয়ে যায়। ২২টাকা পিস। আধা কেজিতে ১০ পিস থাকে ২২০ টাকা দাম। স্বাদ ভালোই। দেড়শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী মন্ডা খেয়ে আমাদের ঘুরার তালিকা অবশেষে শেষ হলো। এখন বাড়ি ফিরতে হবে। এজন্য যেতে হবে ময়মনসিংহ। সেখান থেকে ঢাকা। তবে যারা মুক্তাগাছা যাবেন না, তারা টাঙাইল ঘুরেই বাস ধরতে পারেন।

প্রাকৃতিকভাবে আষাঢ়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শ্রাবণের শেষ অবধি আনারসের ভরা মৌসুম। প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও মঙ্গলবার হাট বসে মধুপুরের জলছত্রে।

ঢাকা থেকে মধুপুর যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম সড়কপথ। ঢাকার মহাখালি বাস স্টেশন থেকে বিনিময় ও শুভেচ্ছা পরিবহনের বাস যায় মধুপুর। এছাড়া মহাখালী থেকে যেকোনো বাসে চড়ে টাঙ্গাইল সদরে এসে সেখান থেকেও সহজেই মধুপুর আসতে পারেন। মধুপুর সদর থেকে অটোরিকশা ভাড়া করে আসতে হবে জলছত্র বাজার।

দিনে দিনেই ঘুরে আসা যায় মধুপুরের আনারসের হাট থেকে। তবে আপনি যদি মধুপুরে রাত্রিযাপন করতে চান সেক্ষেত্রে মধুপুর উপজেলা সদরে আবাসিক হোটেল হল-হোটেল আদিত্য, হোটেল সৈকত, হোটেল ড্রিম টাচ ইত্যাদিতে অবস্থান করতে পারেন। এসব হোটেলে ৫শ’ থেকে দেড় হাজার টাকায় কক্ষ আছে। এছাড়া মধুপুরের কাছাকাছি থাকার ভালো জায়গা ধনবাড়ি নবাব প্যালেস বাংলো।

এছাড়া পূর্বানুমতি নিয়ে বনবিভাগের কোনো বিশ্রামাগারে থাকতে পারলে আপনার ভ্রমণ পরিপূর্ণ হবে। জাতীয় এ উদ্যানের ভেতরে জলই, মহুয়া, বকুল, চুনিয়া কটেজ ছাড়াও দোখলা বন বিশ্রামাগারে রাত যাপন করতে সহকারী বন সংরক্ষক অথবা টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কার্যালয় (০৯২১-৬৩৫২৪) থেকে অনুমতি নিয়ে বুকিং নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়