ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

উদ্বোধনের অপেক্ষায় দৃষ্টিনন্দন সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:২২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

উদ্বোধনের অপেক্ষায় আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত দেশের দৃষ্টিনন্দন সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নির্মাণ। স্থানীয় সরকারমন্ত্রীসহ তিন মন্ত্রীর শিডিউল পেলেই টার্মিনালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে এ টার্মিনাল।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, উন্নত বিশ্বের আদলে নির্মিত এ বাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ একদম শেষ পর্যায়ে। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের উপস্থিতিতে আমরা এই প্রকল্পের উদ্বোধন করতে চাই। তাদের শিডিউল চাওয়া হয়েছে। শিডিউল পেলেই টার্মিনালটি খুলে দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চালু হবার পর এ টার্মিনালই হবে দেশের সবচাইতে দৃষ্টিনন্দন ও সুবিধা সম্বলিত বাস টার্মিনাল। এখানে যাত্রীদের বিশ্রাম নেয়ার পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া, প্রত্যেক রুট অনুযায়ী, থাকবে আলাদা বাস পার্কিং জোন, এন্ট্রি ও এক্সিটের ভালো ব্যবস্থা। টার্মিনালটি চালু হবার পর এ এলাকার চেহারা পাল্টে যাবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এখান থেকে যাত্রীরা আধুনিক ও উন্নতমানের সেবা পাবেন।

সিসিক-এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এমজিএসপি (মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট) প্রকল্পের আওতায় সিসিকের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন বাস টানির্মাল কমপ্লেক্স। ৬ তলা ভিত্তির ৩ তলা কমপ্লেক্স প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ডালি কনস্ট্রাকশন। সরেজমিন ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় নির্মিত হয়েছে এ বাস টার্মিনাল। উপরে ইট রং এর স্টিলের টিনের ছাদ, কারুকার্যময় লাল ইটের দেয়াল, গাছপালা আবৃত গ্রিনজোন, বিমানবন্দরের আদলে আলাদা বাস ডিপারচার ও অ্যারাইভাল এবং যাত্রীদের জন্য প্রায় ১৫শ’ সিটের বিশাল ওয়েটিং লাউঞ্জের সুবিধা রয়েছে এ টার্মিনালে।

নির্মাণ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরো টার্মিনালের নির্মাণ কাজ তিনটি অংশ ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে পার্ট-১-এ অবস্থিত ডিপারচার বিল্ডিংয়ের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৩০০ ফুট। এই পার্টে ৪৮টি ‘বাস বে’র সঙ্গে রয়েছে ৯৭০ সিটের যাত্রী বসার সুবিধা সম্পন্ন বিশাল হল। রয়েছে ৩০ সিটের ভিআইপি কক্ষ, ৩০টি টিকিট কাউন্টার ও ৫০ জন মুসল্লি ধারণ ক্ষমতার নামাজ কক্ষ। পুরুষ মহিলাদের পৃথকসহ প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার উপযোগী ৬টি টয়লেট জোন। হুইল চেয়ার নিয়েও যে কেউ টয়লেট ব্যবহার করতে পারবেন। উপরে উঠার জন্য রয়েছে-লিফ্ট এবং খাবারের জন্য রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট। থাকবে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া যাত্রীর জন্য সিক বেড, দুগ্ধপোষ্য শিশুদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং জোন।

পার্ট-২-এ অ্যারাইভাল বিল্ডিংও একইভাবে প্রায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে। ডিপারচার বিল্ডিং-এর মতো এখানে রয়েছে বাস বে, যাত্রীর বসার জন্য ৫১০ সিটের ওয়েটিং স্পেস ও ৩০ সিটের ভিআইপি কক্ষ, আধুনিক টয়লেট সুবিধা, সিক বেড, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, লিফ্ট, রেস্টুরেন্টসহ যাত্রীদের সব সুযোগ সুবিধা। পার্ট-১ ও পার্ট-২ এর মাধ্যমে ডিপারচার ও অ্যারাইভাল আলাদা করা হলেও করিডোরের মাধ্যমে পুরো স্ট্রাকচার একটি সার্কুলার বিল্ডিং-এ পরিণত হয়েছে।

টার্মিনালের পেছনের দিকে পার্ট-৩-এ নির্মিত হয়েছে একটি মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার সেন্টার। যেখানে মালিক ও চালক সমিতির জন্য থাকবে ২৪ বেডের বিশ্রাম কক্ষ, গোসলের ব্যবস্থা, অফিস, লকার ব্যবস্থা, ক্যান্টিন এবং মিটিং ও অনুষ্ঠানের জন্য বিশাল মাল্টিপারপাস মিলনায়তন।

ডালি কনস্ট্রাকশনের সিনিয়র সাইট ইঞ্জিনিয়ার প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন জানান, প্রকল্পের প্রতিটি কাজ অত্যন্ত যত্ন সহকারে করা হয়েছে। বিমানবন্দরের মতো বিশাল ওয়েটিং স্পেস রাখা হয়েছে। আছে পার্কিং জোন, পরিবেশের কথা বিবেচনা করে ভবনের পেছনের দিকে থাকবে গাছপালা আচ্ছাদিত গ্রিনজোন। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের হলেও করোনার কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল বলে জানান তিনি। নতুন এই টার্মিনালের নকশা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আর্কিটেকচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক যথাক্রমে সুব্রত দাশ ও রবিন দে এবং মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন নামে আরেকজন আর্কিকেটচার। এ প্রসঙ্গে সুব্রত দাশ বলেন, সিলেটের ঐতিহ্য আসাম টাইপ বাড়ি, চাঁদনীঘাটের ঘড়ি বিবেচনা করে এবং একই সঙ্গে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয় ঘটানো হয়েছে নকশায়।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়