ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কাজা রোজা আদায়ের উত্তম সময়, রাখবেন যেভাবে

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ২৩ মে ২০২৩  

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

রমজানের রোজা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার ওপর ফরজ করে দেওয়া একটি ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন- يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ

অর্থ: ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর’। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

তবে অসুস্থতা ও সফরকালীন অবস্থায় রোজা না রাখার অনুমতি আছে এবং মেয়েদের ঋতুস্রাব ও সন্তান প্রসব-পরবর্তী স্রাবের সময় রোজা রাখা নিষেধ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেগুলো কাজা করে দেওয়া আবশ্যক।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নির্দিষ্ট কয়েক দিন (অর্থাৎ রমজান মাসে) রোজা রাখতেই হবে। (তবে সে সময়ে) যদি তোমাদের কেউ অসুস্থ থাকে অথবা সফরে থাকে, সে অন্য সময়ে (ছুটে যাওয়া) দিনগুলো পূর্ণ করে নেবে (অর্থাৎ, যে কয়টা রোজা ছুটে গেছে, সেগুলো অন্য সময়ে কাজা করে দিতে হবে)’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৪)

আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসূল (সা.) বেঁচে থাকা অবস্থায় আমাদের যখন ঋতুস্রাব হতো (এবং এ কারণে আমাদের নামাজ ও রোজা ছুটে যেত), তখন তিনি আমাদের ছুটে যাওয়া রোজাগুলো কাজা করে দেওয়ার নির্দেশ দিতেন, কিন্তু নামাজ কাজা করার নির্দেশ দিতেন না’। (বুখারি ও মুসলিম)

কাজা রোজা কখন রাখতে হবে

চার মাজহাবের সব আলেমের সর্বসম্মত মত অনুসারে, রমজানের পর থেকে শুরু করে পরের রমজান আসার আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় কাজা রোজা রাখা যাবে। আয়েশা (রা.) সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে একদম শাবান মাসে গিয়ে বিগত রমজানের কাজা রোজা রেখেছেন এমন বর্ণনা আছে হাদিসে। (বুখারি ও মুসলিম)

তবে যথাসম্ভব দ্রুত কাজা করে দেওয়া উত্তম। কিন্তু কেউ যদি পরবর্তী রমজান পর্যন্ত কাজা রোজা রাখতে বিলম্ব করে, তার ব্যাপারে আলেমদের দুটি মত আছে। এক. মালেকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাবের মত অনুসারে তাকে কাজার পাশাপাশি প্রতিটি রোজার জন্য ফিদইয়া (১.৬৫ কেজি গম অথবা সমপরিমাণ মূল্য) আদায় করতে হবে। অবশ্য হানাফি মাজহাব অনুসারে তখনো শুধু কাজা করে দিলে যথেষ্ট হবে। ইবনু উসাইমিনসহ আরো অনেকে এ মত অবলম্বন করেছেন। (আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ)

যেভাবে কাজা রোজা রাখবেন

ছুটে যাওয়া রোজাগুলো একনাগাড়ে রাখতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সময় ও সুযোগ অনুসারে একটা, দুইটা করে কাজা করা যাবে। রাসূল (সা.) বলেন, ‘রমজানের রোজা আলাদা আলাদা অথবা লাগাতার- যেভাবে ইচ্ছা রাখা যাবে’। (দারাকুতনি) ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রমজানের কাজা রোজা আলাদা আলাদা করে রাখতে কোনো অসুবিধা নেই’। (বুখারি, তা’লিকাত)

কাজা আদায়ের আগে মারা গেলে

অসুস্থতার কারণে রোজা ছুটে যাওয়ার পর যদি সুস্থ হওয়ার আগেই মারা যায়, তাহলে কাজা বা ফিদইয়া কিছুই দিতে হবে না। (আল মাবসুত) তবে কেউ যদি এমন অবস্থায় মারা যায় যে তার জিম্মায় রোজা কাজা ছিল এবং তা আদায় করার সময় ও সামর্থ্যও ছিল, তাহলে সে যদি অসিয়ত করে যায়, তাহলে তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে রোজার ফিদইয়া (প্রতি রোজার জন্য ১.৬৫ কেজি গম অথবা সমপরিমাণ মূল্য) আদায় করতে হবে। অসিয়ত করে না গেলেও ওয়ারিশরা নিজেদের পক্ষ থেকে ফিদইয়া দিতে পারবে। (ফাতাওয়া শামি) তবে ইমাম শাফেয়ি, নববি, ইবনে বাজসহ অনেক আলেম বলেন, এমন অবস্থায় মৃত ব্যক্তির অলি (নিকটাত্মীয়) তার পক্ষ থেকে রোজা আদায় করে দিতে পারবেন। কারণ, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে রোজা কাজা থাকা অবস্থায় মারা গেছে, তার আত্মীয় তার পক্ষ থেকে রোজা আদায় করে দেবে’। (বুখারি, মুসলিম, আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ)

সর্বশেষ
জনপ্রিয়