ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নেত্রকোণায় ১৫০০ কোটি টাকার ধান উৎপাদনের আশা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:১১, ২০ এপ্রিল ২০২৪  

নেত্রকোণায় ১৫০০ কোটি টাকার ধান উৎপাদনের আশা

নেত্রকোণায় ১৫০০ কোটি টাকার ধান উৎপাদনের আশা

রোদেলা আকাশ। বাতাসে পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধ। কৃষকদের কারো মাথায় ধানভর্তি ঝাঁপি। কেউ কুলোয় ধান ঝাড়ছেন।কেউ মেশিনে ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত। আবার কেউ ধান সিদ্ধ ও শুকানোর কাজ করছেন। একদল লোক কাটছে ধান। চলছে ভেজা ধান কেনাবেচাও।গতকাল নেত্রকোণার কয়েকটি হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, হাওরপারের কিষান-কিষানিরা এখন এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছেন।

হাওর এলাকায় বোরো ধান কাটার ধুম পড়েছে। ৮০ শতাংশ পাকলেই ধান কাটার কথা বলছে কৃষি বিভাগও। বৈশাখের মধ্যভাগে বোরো ধান কাটা শুরুর কথা থাকলেও আগাম বন্যার ভয়ে কৃষকরা এবার আগেভাগেই ধান কাটা শুরু করেছেন।এ বছর অনুকূল আবহাওয়া ও ধানগাছে কোনো রোগবালাই দেখা না দেওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে।

নেত্রকোণা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২ লাখ ৩৭ হাজার ২২৩ মেট্রিক টন ধান। প্রতি টন ধানের বাজারমূল্য ১২ হাজার টাকা হিসেবে এর সম্ভাব্য বাজারমূল্য প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। হাওরে এবার বেশি আবাদ হয়েছে হাইব্রিড জাতের ধান এবং ব্রি ধান ৮৮, ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান ৯২ ও ব্রি ধান ২৮।হাওরে ৫৬০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন ধান কাটছে। এ ছাড়া প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক মাঠে কাজ করছেন।

কৃষকরা জানিয়েছেন, হাওরে এখনো পানি না আসায় তাঁরা খুশি। আর ১৫ দিন সময় পেলে সব ধান কাটা শেষ হবে। মৌসুমের শুরুতে ঋণের টাকা পরিশোধ ও শ্রমিকের খরচ মেটাতে অনেকেই ভেজা ধান মাঠেই বিক্রি করছেন। মোটা জাতের ভেজা ধান প্রতি মণ ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা আর চিকন ধান ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাওর অধ্যুষিত উপজেলা খালিয়াজুরী, মদন, মোহনগঞ্জ, আটপাড়াসহ জেলার ১৩৪টি হাওরের নিম্নাঞ্চলে কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ।

মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের কৃষক মঞ্জুর আলী বলেন, ‘এই বছর ফসল খুব ভালা অইছে। এক কাঠায় (১০ শতাংশ) সাত থাকয়্যা আট মণ ধান অইছে। দামও ভালা। আমরা খুবই খুশি।’ একই উপজেলার উচিতপুর গ্রামের কৃষক নাজমুল হাসান বলেন, ‘ফসল খুবই ভালা ফলছে। এক কাঠা জমির আট মণ ধান আট হাজার টাকা বিক্রি করছি। ভিজা ধানের দাম ভালাই পাইতাছি।’ একই গ্রামের কিষানি জোবেদা খাতুন বলেন, ‘এই বছর যে রকম ভালা ফসল অইছে, ঘরে তুলতে পারলে এবার আর অভাব থাকত না। সবার মুখে শুধু হাসি আর হাসি থাকব।’

নেত্রকোণা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘এ বছর প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ কারণে সঠিকভাবে সার ব্যবহার ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হাওরে খুবই ভালো ফলন হয়েছে। এখন পুরোদমে চলছে ধান কাটা। কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে এ মাসের মধ্যেই হাওরের ধান কাটা শেষ হবে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের লোকজন সার্বক্ষণিক ধান কাটা তদারকি করছেন। আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হবে।’

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়