ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ১ হাজার ৮৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:২৮, ৬ নভেম্বর ২০২৩  

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ১ হাজার ৮৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ১ হাজার ৮৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ১ হাজার ৮২ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে এ বাজেট ঘোষণা করেন কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। এটি কেসিসির ইতিহাসের সব থেকে বড় বাজেট।

বাজেট ঘোষণায় কেসিসি মেয়র বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের বাজেট শুধু আয়-ব্যয়ের খতিয়ান নয়। এর মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ভাবনা প্রতিফলিত হয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশন জন-প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা যে প্রতিশ্রুতি নগরবাসীকে দিয়েছিলাম, এ বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তা বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা করছি। বর্তমান অর্থবছর তথা ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটটিও সেভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে। একইসঙ্গে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের প্রকৃত অবস্থার ওপর ভিত্তি করে উক্ত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও প্রণয়ন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক দেশ আর্থিক মন্দার সম্মুখীন হয়েছে, কিন্তু সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সকল চলমান প্রকল্পে বরাদ্দ কিছুটা কমিয়ে প্রকল্পগুলো চলমান রেখেছে। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮২ কোটি ৯৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা। বাজেটের রাজস্ব ব্যয় ১৯৬ কোটি ৫২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা এবং সরকারি বরাদ্দ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩৬ কোটি ৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। নিজস্ব আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা, সরকার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার প্রতিশ্রুতি এবং জনগণের প্রত্যাশার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।

বিগত অর্থবছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৬১ কোটি ৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়ায় ৬৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৮১%। এই বাজেটে রাজস্ব তহবিলের ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১৯২ কোটি ১১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। যা সংশোধিত বাজেটে দাঁড়িয়েছে ২৮২ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। নিজস্ব তহবিলে অর্জনের হার ১৪৭%। উন্নয়ন তহবিলে তথা সরকারি অনুদান ও দাতা সংস্থার বিশেষ প্রকল্পে বিগত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৬৮ কোটি ৯৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কিন্তু আমরা পেয়েছি ৪১৪ কোটি ৭৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে অর্জনের হার ৬২%। মূলত সরকারের কাছ থেকে আশানুরূপ অর্থ পাওয়া গেলেও দাতা সংস্থা থেকে অনুরূপ বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে উন্নয়ন বাজেটে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এ সময় সিটি মেয়র বাজেটের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন। 

বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে-

 এ বাজেটে নতুন কোনো কর আরোপ করা হয়নি। বকেয়া পৌরকর আদায়, নবনির্মিত সকল স্থাপনার ওপর প্রচলিত নিয়মে কর ধার্য এবং নিজস্ব আয়ের উৎস সম্প্রসারণ। যেমন-মার্কেট, দোকানঘর, আয়বর্ধক স্থাপনা নির্মাণ ও কর্পোরেশনের সীমানা সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এটি একটি উন্নয়নমুখী বাজেট। এ বাজেটে শহরের সড়ক ও ড্রেনেজ তথা জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাত ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাজেটে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের ওপর এ বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

 বাজেটে নাগরিক সেবা সম্প্রসারণ ও সেবার মান উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

 বাজেটে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন, পার্ক, ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং কেসিসির বিভিন্ন দপ্তর আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাজেটে ডেঙ্গু মোকাবেলায় মশক নিধন কার্যক্রম এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যে ক্ষতি নিয়মিত হচ্ছে তা মোকাবেলা, অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলাসহ বস্তি এলাকার রাস্তাঘাট, ড্রেন, ল্যাট্রিনসহ শিক্ষার মান সম্প্রসারণ করার দিক নির্দেশনা এ বাজেটে আছে।

মেয়র জানান, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে জাতীয় এডিপিতে কেসিসির ৩টি প্রকল্পে ৪৯৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা চলতি অর্থ বছরে পাওয়া যাবে।

তিনটি প্রকল্প হচ্ছে- খুলনা সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত ও উন্নয়ন, খুলনা মহানগরীতে ড্রেনের ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন।

এছাড়া প্রস্তাবিত জাতীয় এডিপিভুক্ত ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশন ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক জানান, খুলনা মহানগরীর সার্বিক উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণের জন্য আমরা সরকারের পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, জার্মান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এ সকল উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করি। তারাও আমাদের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন দাতা সংস্থার ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্প খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চলমান রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব প্রকল্পে ১৭৯ কোটি ৪৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকার উন্নয়ন সহায়তা পাওয়া যাবে এমন আশা করা হচ্ছে।

কেসিসি মেয়র বলেন, খুলনা মহানগরীকে সর্বাঙ্গীণ সুন্দর তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করতে আমাদের আন্তরিকতা এবং প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। যে কোনো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অর্থের। অর্থ সংস্থানের জন্য একটি স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে খুলনা সিটি কর্পোরেশন শুধু সরকারি বা বিদেশি সাহায্য ও ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে পারে না। তাকে নিজস্ব আয়ের ওপর নির্ভর করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চিন্তা করতে হবে। এটা আজ সময়ের দাবি। এজন্য প্রয়োজন সকল শ্রেণীর নাগরিকের পরিপূর্ণ আন্তরিকতা ও সহযোগিতা। কর্পোরেশনের যেমন দায়িত্ব রয়েছে নগরবাসীর নাগরিক স্বাচ্ছন্দের ব্যবস্থা করা, তেমনিভাবে নাগরিকদেরও কর্তব্য রয়েছে কর্পোরেশনকে তার কাজে সার্বিক সহযোগিতার হাত প্রশস্ত করা। তাই আমি আপনাদের মাধ্যমে কর্পোরেশনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নিয়মিত কর পরিশোধসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সর্বাত্মক সহায়তা করার জন্য খুলনা নগরবাসীকে আহ্বান জানাই।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়