ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ছাত্রদলের নতুন কমিটি দিয়ে ১০০ কোটি টাকা বাণিজ্য করেছে তারেক

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ৩ অক্টোবর ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির রাজনীতি আর ধান্দাবাজি সমার্থক শব্দ- এই কথাটা বিএনপিবিরোধী অপর রাজনৈতিক দলের নয়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর। বিএনপির নোংরা রাজনীতির কারণে লাঞ্ছিত হয়ে দলত্যাগ করার পর এক বৈঠকে তিনি এই কথাটি বলেছিলেন। প্রার্থী মনোনয়ন, কমিটি প্রণয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপুল অঙ্কের চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি নিয়মিত ঘটনা। বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠনের সময় হলেই টাকার বিনিময়ে পদ পাওয়ার দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়। ব্যবসায়ী এবং মাঝবয়েসী লোকজনও টাকার বিনিময়ে ছাত্রদলের পদ পেয়ে যান। কখনো রাজনীতি না করা লোকজনও বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন।

গত ১১ই সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদলের ৩০২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার প্রায় ৫ মাস পর এই কমিটি ঘোষণা করা হলো। যেখানে ২২ জনকে সহ-সভাপতি এবং ৮২ জনকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এই কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনের এক ভয়ঙ্কর তথ্য বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে।

জানা যায়, ২২ জনকে সহ-সভাপতি করার জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। আর ৮২ জন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের প্রত্যেকেই ১০ লাখ টাকা করে দিয়েছেন। আর সাধারণ সদস্য পদের জন্য ৫ লাখ টাকা করে বরাদ্দ ছিল। এই কমিটি গঠনে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বাণিজ্য করে তবেই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর এই পুরো টাকা চলে গেছে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে।

উল্লেখ্য, গত ১৭ই এপ্রিল ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই আংশিক কমিটিতে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি এবং সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। এছাড়াও কেন্দ্রীয় সংসদে ৫ সদস্যের নামও ঘোষণা করা হয়েছিলো। তারপর দীর্ঘ ৫ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর নতুন কমিটি ঘোষণা করা হলো।

ছাত্রদলের কমিটিতে যারা জায়গা পাননি এমন একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কমিটি বাণিজ্য হয়েছে, টাকাও চাওয়া হয়েছে। যারা টাকা দিতে পেরেছেন শুধু তাদেরকেই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

পুরো টাকা লেনদেন হয়েছে একটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে, জানান বিক্ষুব্ধরা। গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদলের নেতারা এ নিয়ে প্রতিবাদ করছেন। তাদের দাবি, বিবাহিত, বয়স্ক এবং রাজনীতি থেকে নির্বাসিতদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে টাকার বিনিময়ে।

উল্লেখ্য, এই পূর্ণাঙ্গ কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন লন্ডনের পলাতক তারেক রহমান। আর তাকে সহযোগিতা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আরও ২ জন নেতা। মূলত এদের মাধ্যমেই আর্থিক লেনদেন হয়েছে এবং সমস্ত টাকা বুঝে পাওয়ার পরপরই তারেক রহমান কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির ঢাকার দুজন এবং চট্টগ্রামের একজন বড় ব্যবসায়ী নেতা লন্ডনে টাকা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করেছেন। এই চক্রে আবদুল আউয়াল মিন্টু, মির্জা আব্বাস এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।

মজার ব্যাপার হলো, ছাত্রদল এমন একটি সংগঠন যার কোনো গঠনতন্ত্র নেই। কারা এই সংগঠনের সদস্য হতে পারবে, কত বয়স পর্যন্ত সদস্য হতে পারবেন কিংবা কোন কোন ক্রাইটেরিয়ার কারণে সদস্য পদ পাওয়া যাবে না- এমন কিছুই উল্লেখ নেই। এমনকি কত সদস্যের কমিটি হবে সে সম্পর্কেও কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা নেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রথমে ছাত্রদলের সহ-সভাপতি করার কথা ছিল ২০ জনকে। তাদের ওপর ২০ লাখ টাকা করে ধার্য করা হয়েছিল। তবে সম পরিমাণ অর্থ দিয়েছেন ২২ জন। ফলে কমিটির পরিধি বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করার কথা ছিল ৫০ জনকে, সেখানে ৮২ জনকে করা হয়েছে। ধার্যকৃত টাকা দিতে পারায় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের সংখ্যাও বেড়েছে। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ৬২ জনকে, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে ৪৮ জনকে এবং সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে ৭৩ জনকে, সাধারণ সদস্য করা হয়েছে ১৯ জনকে।

টাকা যে যেভাবে দিতে পেরেছে সেভাবেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, সংগঠনের প্রতি আনুগত্য ও নিবেদন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অবদান ইত্যাদি কোনো কিছুই আমলে নেওয়া হয়নি। ফলে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন কমিটির পদ প্রত্যাশী ত্যাগী ও পরীক্ষিত ছাত্র নেতারা। দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতি করে কী পেলাম- স্ব স্ব ইউনিটের নেতৃবৃন্দ তাদের এমন প্রশ্নবাণে জর্জরিত। ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সাবেক একজন নেতা ও বর্তমানে মালয়েশিয়া যুবদলের সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে আক্ষেপ করে বলেন, এভাবেই আদর্শহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠছে বিএনপিতে। প্রতিবাদ করতে গেলে টাকায় কেনা পদ হারাবো।

ছাত্রদলের এই কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন, এমন আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তিনি ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। তাকে বলা হয়েছিল ২০ লাখ টাকা দিতে পারলে তিনি সহ-সভাপতি করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ওই পরিমাণ অর্থ যোগাড় করতে পারেনি।

ওই নেতা আরও বলেন, এমনিতেই এখন আমরা বিরোধী দলে। ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। কিন্তু যেহেতু দলীয় একটা পরিচয় থাকা দরকার, সেজন্যই কমিটিতে ঢুকলাম। ধার করে এই টাকা জোগাড় করেছি। কমিটিতে যারা ঢুকেছে তাদের ৯০ ভাগই বিভিন্ন ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, কেউই ছাত্র নয়।

এদিকে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতৃবৃন্দ যারা পদ পাননি, তাদের অনেকেই জানালেন, কমিটি ঘোষণার পর শুধু ঢাকা মহানগরে নয়, সারাদেশে বিক্ষোভ ও হতাশা চলছে। টাকা দিয়ে কমিটি গঠনের এই প্রবণতা সংগঠনকে চিরতরে ধ্বংস করে দেবে। নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে লন্ডনে মৌজ-মাস্তি করছেন দলের প্রধান নেতা। আর আমরা পড়ে পড়ে মরছি দেশে। এই ধান্দাবাজিই হলো বিএনপির রাজনীতির কফিনের পেরেক। টাকা দিয়ে পদ কিনে আর রাজনীতি করা সম্ভব না। খেয়ে-না খেয়ে অনেক কষ্ট করেছি। রাজনীতিকে বিদায় জানাবো।

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়