ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ছোট গল্প: বিয়ের দিনে কান্না

মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ২৭ মার্চ ২০২৩  

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

২০১৫ সালের নভেম্বর মাস। সবে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি। হঠাৎ আমার মেঝ মামাতো ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হলো। বিয়ে উপলক্ষে আমার মাঝে বেশ আমেজ কাজ করছে।

এক শনিবার দুপুরে কনের বাড়িতে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হলো। সবার সঙ্গে আমিও রওনা হয়েছি। ওর বিয়ে আমার বাড়ির পাশেই। সেখানকার সবাই আমার পূর্বপরিচিত।

বিয়ের দিন বরপক্ষের লোক হিসেবে বেশ খাতির-যত্ন পেয়েছি। বিশেষত মামাতো ভাইয়ের বিয়েতে আমি বেশ ভূমিকা রেখেছিলাম। তাই দুই পরিবারেই আমার বেশ কদর ছিল। এ জন্য বরের হাতে কনে তুলে দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতায় আমাকে বরের পাশেই বসিয়েছিল।

গ্রামাঞ্চলে বিয়ের অনুষ্ঠানে সাধারণত বরের সবচেয়ে নিকটাত্মীয় বা ঘনিষ্ঠজনকে কনে তুলে দেওয়ার সময় বরের পাশে বসানো হয়। বিয়ের এ পর্ব বেশ আবেগঘন। কন্যার আত্মীয়রা একে একে সবাই বর ও কনেকে মিষ্টিমুখ এবং আশীর্বাদ করেন। বিয়ের এ পর্বটি খুব গুরুত্বের সঙ্গে উদযাপন করেন।

এ পর্বে আমি মামাতো ভাইয়ের পাশে বসেছিলাম। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আমি সে পরিবেশে ঘটিয়েছিলাম এক কাণ্ড। একে একে কনের বাবা, বড় ভাই, ভাবি, মামা, মামি ও নিকটাত্মীয়রা বর ও কনেকে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছিলেন। আশীর্বাদ করছিলেন।

পর্বের শেষে কনের মা মিষ্টি খাওয়াতে এসে কান্না করে দিলেন। কান্না করতে করতে একপর্যায়ে মা-মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কান্না শুরু করে দিলেন। হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। কনে এবার জোরে কান্না করতে লাগলো।

এ দৃশ্য দেখতে দেখতে হঠাৎ আমিও আবেগী হয়ে পড়লাম। তাদের আবেগঘন দৃশ্য আর আত্মীয়দের রোনাজারি দেখতে দেখতে আমার চোখেও পানি জমতে লাগলো। আমিও কান্না জুড়ে দিলাম। এবার আমাকে কে থামায়? সে কী কান্না!

আমাদের বরপক্ষের কয়েকজন মিলে আমাকে বাইরে নিয়ে গেল। অনেকক্ষণ কান্না করেছিলাম। সেদিন আমার স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লেগেছিল।

আজও মনে পড়ে সেই দৃশ্য। ভাবলেই কেমন লজ্জায় মুখমণ্ডল লাল হয়ে যায়। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো, যখন ভাবি আমি বিয়ে করবো; কনে তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানে এমন কান্নাকাটি হবে। সেদিন আমি যে কী করবো! ভাবতেই আঁতকে উঠি।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়