ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ছোটগল্প: পাণিপীড়ন যুদ্ধ

ফরহাদ সাদেক

প্রকাশিত: ১৪:১০, ২৫ মার্চ ২০২৩  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

রাত দশটা বেজে পনেরো মিনিট। নগরজুড়ে এই অল্প রাতেই মধ্যরাতের নীরবতা নেমে এলো। দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন। রাস্তায় কেবল সাইরেন বাজানো টহল পুলিশের গাড়ি। মেইন রোড ধরে হাঁটা অসাধ্য। ঝুঁকি নিয়ে অলিগলি পথ ধরেই এগোতে হবে।

হাঁটতেই পারছে না বৃষ্টি। আঘাতের স্থান ঠিক কোথায় ঠাহর করতে পারে না। তবে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ অনবরত চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। পরিবারের সঙ্গে যুদ্ধ করে আবিরের হাত ধরে এই মহামারির কালো রাতে অজানার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছে।

খুড়িয়ে খুড়িয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর একটি রিকশা পাওয়া গেল। শর্ত একটাই, পুলিশ দেখলেই নেমে পড়তে হবে। মাঝপথে তেমন কোনো বেগ পেতে হলো না। ত্রিশ টাকার ভাড়া দেড়শ মিটিয়ে সেজ খালার বাসায় পৌঁছলো অসাড় হয়ে আসা দুটো ক্লান্ত দেহ। সেজ খালা দরজা খুলতেই বৃষ্টি জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লো।

পহেলা রমজান। তারাবির নামাজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল আবির। হঠাৎ বৃষ্টির ফোন। কাঁপা স্বরে বলল, ‘আব্বু আম্মু তোমাকে এক্ষুণি বাসায় আসতে বলছেন, তুমি তাড়াতাড়ি আসো।’ আবির খুব সহজেই বুঝে গেল, বড় ধরনের গণ্ডগোল হয়েছে। তাই দেরি না করে বৃষ্টির বাসায় রওনা দিলো।

প্রবেশ করেই বাকবিতণ্ডা শুরু। বৃষ্টির চোখে চোখ রাখা দায়, খুব করে মার খেয়েছে। চোখ-মুখ ফুলে ঢোল। সবশেষে বৃষ্টির বাবা-মার সিদ্ধান্ত একটাই, হয়তো আবিরের সঙ্গে আর কোনো দিন দেখা করতে পারবে না। অন্যথায় এক্ষুণি বাসা থেকে চিরদিনের জন্য বের হয়ে যেতে হবে। তারা কখনোই এ সম্পর্ক মেনে নেবেন না।

ক্ষাণিক পরে ছোট্ট একটি হাতব্যাগ সমেত এক কাপড়ে বেরিয়ে এলো বৃষ্টি। বৃষ্টির হাতে হাত রেখে আবিরের মনে হতে লাগলো, সে আজ তার আরাধ্যকে পেল। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শক্তির উৎস আজ আবিরের হৃদয়ে।

পরিবার-পরিজন যখন আস্থা হারায়; তখন বন্ধুরাই হয়ে ওঠে আত্মার আত্মীয়। সবচেয়ে বড় বাধা দেশের অচলায়তন, কঠোর লকডাউন। যেখানে ঘরের বাইরে যাওয়া বারণ; সেখানে বিয়ের স্বপ্ন বড়ই অযাচিত। আদালত ভবনের মসজিদের ইমাম আকদ পড়ালেন।

আবির আর বৃষ্টির জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত। নিকাহনামায় সাক্ষী হিসেবে রইলো দুই বন্ধু আর কঠোর লকডাউন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়