ঢাকা, সোমবার   ২০ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর বগুড়ায় দই বিক্রির হিড়িক

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৫০, ৮ আগস্ট ২০২৩  

জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর বগুড়ায় দই বিক্রির হিড়িক

জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর বগুড়ায় দই বিক্রির হিড়িক

ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর বগুড়ায় দই বিক্রি আরো বেড়েছে। জেলায় বিভিন্ন শোরুমে দই বিক্রির হিড়িক পড়েছে। বগুড়ার আশপাশের জেলা ছাড়াও বাস যোগে প্রতিদিন যাচ্ছে সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায়। দইয়ের কদর বেড়ে যাওয়ার সুযোগে বগুড়ার ব্যবসায়ীরা দইয়ের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের থেকে দই বিক্রি বেড়েছে। 

জানা যায়, কয়েকশত বছর ধরে বগুড়ায় খাবার হিসেবে দই তৈরী হয়ে আসছে। দই উৎপাদনের পর থেকে দেশের বাজারে মিষ্টান্ন খাবার হিসেবে বেশ প্রশিদ্ধতা লাভ করে। এরপর দিনে দিনে যত সময় গড়েছে ঠিক ততটায় দই এর ব্যপ্তি বেড়েছে। দেশের মধ্যে বগুড়ার দই একটি অতি পরিচিত ও সুস্বাদের খাবার। বলা হচ্ছে, একটা দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও মানুষের সৃজনশীলতা মিলে কোনো পণ্য তৈরি হলে তাকে বলা হয় সেই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন বা জিআই) পণ্য। 

বেশ কিছু প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে জিআই স্বীকৃতি পেতে হয়। যথাযথ আবেদনের ভিত্তিতে ও নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) এই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে। যারা জিআইয়ের জন্য আবেদন করেন, তাদেরই দেওয়া হয় মেধাস্বত্ব। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ জুন শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের সভায় বগুড়ার দই জিআই স্বীকৃতি লাভ করে। 

ডিপিডিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. জিল্লুর রহমান জানান, বগুড়ার দই জিআই স্বীকৃতির জন্য সে জেলার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ আবেদন করে। আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই শেষে ২০২৩ সালের ২৬ জুন দই জিআই পণ্য হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কোনো পণ্যের জিআই স্বীকৃতির আবেদন এলে তা যাচাই-বাছাই করে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এরপর দুই মাস সময় দেওয়া হয়, এ নিয়ে কারও কোনো আপত্তি আছে কি না। আপত্তি না থাকলে ওই পণ্যের স্বীকৃতি দিয়ে দেওয়া হয়। বগুড়ার দইয়ের ক্ষেত্রেও কেউ কোনো আপত্তি তোলেনি। তাই এর স্বীকৃতি মিলেছে। আরও কয়েকটি পণ্য প্রক্রিয়াধীন। শিগগিরই এগুলোর স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

বগুড়ার দই ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিয়ে, জন্মদিন, ঈদ, পূজা, আকিকা হালখাতা বা পারিবারিক যে কোন অনুষ্ঠানে দই বিশেষ খাবার হিসেবে পরিবেশিত হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতিদিন পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে দই কিনে থাকেন ভোক্তারা। বগুড়ায় খাবার হিসেবে দইয়ের প্রচলন বেশি হওয়ায় জেলা শহরের আনাচে কানাচে দইয়ের শোরুম গড়ে উঠেছে। হিসেব কষলে ১২ উপজেলায় প্রায় চার সহস্রাধিক দই শোরুম রয়েছে। এসব শোররুম থেকে প্রতিদিনিই দই বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে বর্তমানে সুনাম ছড়িয়েছে বগুড়া শহরের কবি নজরুল ইসলাম সড়কের আকবরিয়া লিমিটেড, মিঠাই মেলা, এশিয়া সুইট মিট, এনাম দই ঘর, নবাববাড়ীর রুচিতা, বিআরটিসি মার্কেটের দইবাজার, মিষ্টিমহল, মহরম আলী, শ্যামলী দই ঘর, শেরপুর দই ঘর, চিনিপাতা ও রফাত দই ঘর। এছাড়া জেলার শেরপুরের রিপন দধি ভান্ডার, সাউদিয়া, জলযোগ, শম্পা, বৈকালী ও শুভ দধি ভান্ডার থেকে প্রতিদিন প্রচুর দই বিক্রি হয়।

বগুড়ার দই ক্রেতা আমিনুল ইসলাম জানান, পরিবারের সদস্যদের জন্য দই নিতে এসেছেন। দইয়ের দাম বেড়েছে। দাম বাড়লেও দোকানে রয়েছে ভিড়। ভিড়ের মধ্যে ৩২০ টাকা করে দুটি দই তিনি কিনেছেন।

বগুড়া শহরের এনাম দই ঘরের মালিক এনামুল হক জানান, দই তৈরীর উপকরণের দাম বেড়েছে। উপকরণের মধ্যে মুল উপাদন চিনি ও দুধের অস্বাভাবিক মূল্য বেড়েছে। যে কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে। দইয়ের সঠিক স্বাদ টিকিয়ে রাখতে গিয়ে দাম পড়ছে বেশি। 

বগুড়া সদর থানা সড়কের দই ব্যবসায়ী মিঠাই মেলার মালিক রাকিবুল ইসলাম রাকিব জানান, আগের থেকে দই বিক্রি বেড়েছে। জিআই পণ্য স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে দই নিতে ভোক্তারা ভিড় করছেন। দাম বাড়লেও দইয়ের স্বাদ ও মান একই রকম রয়েছে। বাজারে বিভিন্ন মানের ও স্বাদের দই রয়েছে। এর মধ্যে প্রিমিয়ার সরা দই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। এছাড়াও স্পেশাল দই বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা, রেগুলার সরা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা, সাদা সরা (চিনিমুক্ত) বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা, টক দই বিক্রি হচ্ছে ১৮০টাকা। 

বগুড়া জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী আলাল জানান, ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর ডিপিডিটিতে বগুড়ার দইকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আবেদন করা হয়। এরপর এ নিয়ে বেশ কিছু প্রক্রিয়াধীন ছিলো। এই আবেদনের প্রায় সাড়ে চার বছর পর দই এর স্বীকৃতি পাওয়া গেলো। 

তিনি বলেন, কোনো একটি দেশের নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মাটি, পানি, আবহাওয়ার প্রেক্ষাপটে সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে সেই দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে দইয়ের বাণিজ্য আগামীতে আরো বড় হবে। উৎপাদকরাও স্বীকৃতির বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারবে। 

বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, বগুড়ার দই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় সুনাম আরো বেড়েছে। আগে বাংলাদেশ জুড়ে বগুড়ার দইয়ের কদর ছিল। এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দই রপ্তানি হবে। 

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়