ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঢাকার কাছেই ঘুরে আসুন বাঁশ-কাঠের তৈরি ‘রূপগাঁও রিসোর্টে’

ভ্রমণ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ৪ মে ২০২৩  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে নির্মল সবুজের সমারোহ ও আকাশের আলিঙ্গন- সব যেন একাকার হয়ে মিশে গেছে সেখানে। বলছি, বাঁশ ও কাঠের তৈরি গ্রামীন পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিনন্দন রূপগাঁও নলেজ এক্সচেঞ্জ সেন্টারের কথা।

গাছপালা ঘেরা গাঢ় সবুজের ছোঁয়ায় মোড়ানো স্থানটি। এরই মধ্যেই মাথা তুলেছে বাঁশ-কাঠের তৈরি বিশাল আকৃতির লম্বা একটি দোতলা ঘর। সারি সারি বাঁশের খুটিতে বাঁশ-কাঠের যৌথ মেলবন্ধনে ১৭০ ফিট লম্বা ও ৩০ ফিট প্রশস্থ বিশাল দোতলা পরিবেশবান্ধব বাড়িটি বিনোদন প্রেমিদের নজর কাড়ছে।

প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা ব্রাত্য আমিন ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারী রূপগাঁও রিসোর্টের যাত্রা শুরু করেন। বেশ কয়েক বিঘা জমির ওপর গড়ে তুলেছেন এ প্রতিষ্ঠান।

২০ শতাংশ জায়গার উপর ১৭০ ফিট লম্বা এই দ্বিতল বাড়ি। এটি বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি করার কারণ হলো বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে আগামী প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া।

চমৎকার এই রিসোর্টে প্রবেশ করতে কোনো টাকা লাগে না। গাড়ি নিয়েও আপনি যেতে পারবেন। পার্কিংয়েও কোনো টাকা নেওয়া হয় না।

প্রাকৃতিক চিরচেনা সবুজ মনোরম গ্রামীণ পরিবেশে গ্রামে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ যাদের নেই, তারা চাইলে ঢাকা থেকে মাত্র ২০-৩০ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়েই গ্রামীণ পরিবেশে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন।

ইট-পাথরের নগরীকে পাশ কাটিয়ে ঢাকার খুব কাছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্রের’ পার্শ্ববর্তী এলাকার দক্ষিণ দিকে জাঙ্গীর নামক স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে রূপগাঁও রিসোর্টটি।

অবশ্য সেখানে এসির কোনো ব্যবস্থা নেই। ৮০ ভাগ বাঁশ দিয়ে তৈরি এ দ্বিতল স্থাপনায় ছাদ, প্রতিটি রুমের দেওয়াল, দোতলার মেঝে এমনকি দোতলায় ওঠার সিঁড়িও তৈরি করা হয়েছে কাঠ-বাঁশ দিয়ে। এই রিসোর্টের বাইরে দেখবেন মনোমুগ্ধকর গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্য।

পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিনন্দন এ স্থাপনায় আছে রাত কাটানোর ব্যবস্থাও। ডাবল বেডের ৭টি রুম, ৫০-৬০ জনের অংশগ্রহণে বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন, দিনব্যাপী অবস্থান কিংবা অনেকে মিলে রাত্রিযাপনের জন্য একটি বড় হলরুম ও একটি খাবারের ঘর।

নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা দুটি গোসলখানা ও চারটি শৌচাগার। প্রাকৃতিক ও নিরাপদ দেশজ-ভেষজ খাদ্য-পণ্য বিপননের জন্য আছে একটি বিপনন কেন্দ্র। এছাড়া স্থাপনার আঙিনায় আছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা।

ঘরের মুল সিঁড়ি ধরে উপড়ে উঠতে গেলেই চোখে পরবে বিভিন্ন জায়গায় ঝোলানো বাঁশের তৈরি কুলা। যেখানে লেখা আছে ‘আলো হাওয়া বেঁধো না রোগে/ ভোগে মোরো না সহ অসংখ্য উক্তি’।

আবার পযর্টন স্পটের চার পাশে ধানের ক্ষেত। পুকুর, বিল ও ধানক্ষেতসহ বর্তমানে চারদিকে গ্রামীণ প্রাকৃতিক পরিবেশ বিরাজমান। স্থাপনাটির সামনের দিকে চারপাশে আমগাছের বেষ্টনী।

অসংখ্য গাছে থোকায় থোকায় ধরা আমগুলো বাতাসে দুলছে। পর্যটকদের অনেকে গাছের কাঁচা আম ছিঁড়ে নিচ্ছেন। ঠিক পাশেই ফাঁকা ফাঁকা বসতি সবুজ অরণ্য ফসলী ভূমি।

নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলী। মাটির তৈরী তৈজসপত্রে খাবার পরিবেশনসহ সব মিলিয়ে শান্ত নিরিবিলি গ্রামীণ পরিবেশে বাঁশ-কাঠে নির্মিত রিসোর্টটিকে প্রতিটি পরতে পরতে গ্রাম বাংলার পুরোনো সাংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ করেই নির্মিত হয়েছে রূপগাঁও। ঢাকা থেকে রূপগাঁওয়ে পিকনিক পার্টিতে আসা শবনম খানম বলেন, ‘পাখি ডাকা সবুজে ঘেরা শান্ত নিরিবিলি বাঁশ নির্মিত এ রিসোর্টটি প্রতিটি পরতে পরতে বাঙগালিয়ানা সংস্কৃতির উপস্থিতি আছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ অকৃত্রিম হাওয়া, যা মানসিক প্রশান্তিদায়ক।’

তিথি সুমনা নামক আরেক নারী দর্শনার্থী বলেন, ‘রূপগাঁওয়ের দৃষ্টিনন্দন বাঁশঘর প্রাকৃতিক সবুজ ও মনোরম পরিবেশে মুগ্ধ আমি ও আমার সন্তানরা। সব মিলিয়ে রূপগাঁওয়ে আনন্দঘন একটা দিন কাটালাম।’

ডেমড়া এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন রোকন মিয়া। তিনি জানান, ঢাকার কাছেই এতো সুন্দর একটি রিসোর্ট ভাবাই যায় না। যেখানে বাঁশের তৈরি বিশাল দোতলা পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় সময় কাটানো, সঙ্গে মাটির তৈজসপত্রে খানাপিনা, সবুজ প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ খুবই ভালো লেগেছে।’

রূপগাঁও নলেজ এক্সচেঞ্জ সেন্টারের স্বপ্নদ্রষ্টা ব্রাত্য আমিন বলেন, ‘গতানুগতিক ইট-পাথর ব্যবহার না করেই ২০ শতাংশ জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে ১৭০ ফুট লম্বা বাঁশের তৈরি এই দ্বিতল স্থাপনা। গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই পরিবেশবান্ধব এ স্থাপনাটি তৈরি করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্থাপত্য বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পার্সিভের নকশায় ও নির্দেশনায় পরিবেশবান্ধব করে রূপগাঁও রিসোর্টটি তৈরি করেছি। ইট-পাথরের নগরীর পাশে রূপগাঁওয়ে মানুষ গ্রামীণ প্রকৃতি ও পরিবেশে সময় কাটানোর সুযোগ পাবে।’

‘এখানে থাকবে রাসায়নিক সার ও বিষ মুক্ত ফসলে উৎপাদিত সব দেশীয় খাবার। এখানে খাবার পরিবেশন করা হয় মাটির তৈরী তৈজসপত্রে। সব মিলিয়ে গ্রাম বাংলার চিরাচরিত কৃষ্টি-কালচার ও ঐতিহ্যকে ধারণ ও উপস্থাপন করার প্রত্যয় নিয়ে রূপগাঁও নলেজ এক্সচেঞ্জ সেন্টার যাত্রা শুরু করেছে।’

ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ভুলতা গাউছিয়া চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসে কাঞ্চন ব্রিজের পশ্চিপাড় নেমে ১ কিলোমিটার রাস্তা রিকশা বা অটোতে যেতে পারেন।

এছাড়া ডেমড়া স্টাফ কোয়ার্টার থেকে ডেমড়া-কালিগঞ্জ সড়কের জাঙ্গির ঈদগাহ বাজারের পাশেই রূপগাঁও রিসোর্ট অবস্থিত। এ পথে স্টাফ কোয়ার্টার থেকে রিকশা বা অটোতেও আসতে পারবেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়