ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দৃষ্টিনন্দন নয়াবাদ মসজিদ দেখতে কোথায় ও কীভাবে যাবেন?

সাজেদুর আবেদীন শান্ত

প্রকাশিত: ১৪:৪৩, ৬ মে ২০২৩  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কয়েকদিন আগে ঘুরে এলাম দিনাজপুরের নয়াবাদ মসজিদ থেকে। সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন দিনাজপুরের বন্ধু আসমাউল ও মৌ। মসজিদটি দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়াবাদ গ্রামে অবস্থিত। জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ঢেপা নদীর পশ্চিম তীরে এর অবস্থান।

দিনাজপুর সদরের লিলির মোড় থেকে একদম নয়াবাদ মসজিদ পর্যন্ত ১৫০ টাকা দিয়ে একটা অটো ভাড়া করলাম। ঢাকা-পঞ্চগড় হাইওয়ে ধরে অটো আমাদের নিয়ে চললো গন্তব্যের দিকে। প্রায় ঘণ্টাখানেক পথ অতিক্রম করে ঢেপা নদী পার হয়ে এগোতে লাগলাম।

মসজিদে যাওয়ার রাস্তার দু’ধারে বিশাল আমের বাগান। আর এই আমের বাগানের মাঝখান দিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম। কিছুদূর যেতেই আমের বাগানের ফাঁকে উকি দিলো নয়াবাদ মসজিদ।

বেশ কয়েকবার ছবিতে দেখেছি নয়াবাদ মসজিদ। তবে সামনাসামনি যে এতো সুন্দর হবে তা কল্পনার বাইরে। এক দেখাতেই চোখ জুড়িয়ে যাবে। নয়নাভিরাম কারুকার্যে মুগ্ধ হবে যে কেউ। অটো থেকে নেমে চারদিকে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলাম।

জানা যায়, সম্রাট শাহ আলমের রাজত্বকালে ১৭৯৩ সালে এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। কান্তাজিউ মন্দির নির্মাণের সময় মুসলিম স্থাপতি ও কর্মীরা তাদের নামাজের জন্য এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। শুধু তাই নয়, এ স্থাপতিরা পরবর্তীতে এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন বলে জানান এলাকাবাসীরা।

১.১৫ বিঘা জমির উপর নির্মিত নয়াবাদ মসজিদটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট। এর চার কোণে চারটি অষ্টভুজ মিনার রয়েছে। মিনারের উপরেও আছে ছোট ছোট গম্বুজ। পূর্বপাশে আছে তিনটি।

এর মাঝের প্রবেশদ্বারটি আকারে অন্য দুটির থেকে তুলনামূলক কিছুটা বড়। প্রধান প্রবেশদ্বারের উপরে দেখলাম ফারসি ভাষার ফলক। মসজিদটিতে যে পোরামাটির ফলক বা টেরাকোটা ব্যবহার করা হয়েছে, তার অধিকাংশই এখন ভগ্ন অবস্থায়। বর্তমানে ১০৪টি টেরাকোটা অবশিষ্ট আছে।

কয়েকদিন আগেই এ মসজিদটি ঘুরে এসেছেন সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন। ঘোরার অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘নয়াবাদ মসজিদটি ঘোরার অনুভূতি খুবই আনন্দের। মসজিদটি দেখতে অতি দর্শনীয় ও শৈল্পিক।’

‘মসজিদ দেখে এতোটায় আমি মুগ্ধ যে, খুব নিমগ্নচিত্তে ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করেছি। মসজিদের বাহিরের অংশের মতো ভিতরের অংশও অতি চমৎকার, যা দেখে আমার মনে হয়েছে তৎকালীন সময়ে মুসলিম কারিগররা কতই না গুণী ও দক্ষ ছিলেন! সব মিলিয়ে নয়বাদ মসজিদ দেখে আমি বিমোহিত।’

নয়াবাদ মসজিদটির ভিতরেও খুবই কারুকার্য বাহির থেকে মসজিদটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনই ভেতরেও। মসজিদটি আকৃতিতে ছোট হওয়ায় মাত্র দুই কাতারে মুসল্লিরা নামাজ পড়তে পারেন।

মসজিদের বাইরে পূর্বপাশ ফুলের বাগানে সুসজ্জিত। মসজিদের পাশেই কবর লেখা একটি ফলক আছে, তবে এ কবরটি কার, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, মসজিদ নির্মাণ করা কোনো শ্রমিকের কবর হয়তো।

ঢাকা থেকে বাস ও ট্রেন দুই পথেই যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী বাসগুলো সাধারণত ছাড়ে গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে। ভাড়া এসি-নন এসি ভেদে ৬০০-১৫০০ টাকা।

ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন দ্রুতযান এক্সপ্রেস ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে। আর আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে।

ঢাকা থেকে একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস বন্ধ থাকে যথাক্রমে মঙ্গল ও বুধবার। ভাড়া শোভন চেয়ার ২৫০, এসি চেয়ার ৬১৮ ও এসি বার্থ ৮৯৭ টাকা।

ঢাকা ছাড়া অন্য যে কোনো বিভাগ থেকে আসতে চাইলে আপনাকে প্রথমেই চলে আসতে হবে দিনাজপুর। এরপর দিনাজপুর শহর থেকে অটোরিকশায় কিংবা নিজস্ব পরিবহনে পৌঁছে যেতে পারবেন নয়াবাদ মসজিদে।

মসজিদসংলগ্ন কান্ত নগর এলাকায় আছে একটি সরকারি রেস্ট হাউজ। এছাড়া দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল হচ্ছে পর্যটন মোটেল।

পর্যটন মোটেলে এসি টুইনবেড ১৫০০ টাকা ও এসি টুইনবেড ডিলাক্স কক্ষ ১৮০০ টাকা। এছাড়া দিনাজপুরের অন্যান্য সাধারণ মানের হোটেলে ১০০-১২০০ টাকায় রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা আছে।

চাইলে রামসাগরের ভেতরে অবস্থিত বাংলোতেও থাকতে পারেন। সেখানে থাকতে হলে স্থানীয় বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হবে।

একতলা ভবনটিতে তিনটি সাধারণ ও একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ আছে। প্রতিটি সাধারণ কক্ষের ভাড়া প্রতি রাত ৫০০ টাকা ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ভাড়া ১০০০ টাকা।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়