ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিস্ময়ের উৎসভূমি

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ৪ অক্টোবর ২০২২  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

উন্নয়নের অভিযাত্রায় দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে শুধুই সামনের দিকে। করোনা মহামারিও এখানকার উন্নয়ন অভিযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারেনি। গত জুন মাসে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে। এই পদ্মা সেতু আমাদের গৌরবের প্রতীক। এটি আমাদের আত্মপ্রত্যয় ও দৃঢ়তার প্রতীক। এ ধরনের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা প্রথম। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন আমাদের আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে। বিশ্বের বহু দেশের কাছে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিস্ময়ের উৎসভূমি হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।

বাংলাদেশি বাঙালি হিসেবে আমাদের আত্মবিশ্বাসের একটু ঘাটতি রয়ে গেছে। আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি যে রয়েছে তার বড় উদাহরণ হলো পদ্মা সেতু-দেশের অনেক-বুদ্ধিজীবী, বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বড় একটি অংশ মনে করেছিলেন- বিশ্বব্যাংক ছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোভাবের সোনালি ফসল হয়ে আমাদের গৌরবযাত্রায় নতুন চমক হয়ে দেখা দিয়েছে পদ্মা সেতু। আমরা প্রমাণ করেছি-আমরা পারি। আমাদের সক্ষমতা থাকার পরও আমরা শুরুটা করতে চাই না। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবার ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু আমাদের সহায়তা করবে। এগিয়ে যাবার প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে এই পদ্মা সেতু।

এবার আমাদের জন্য আরেক সুসংবাদ হলো- কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এই টানেল দেশে প্রথমবারের মতো হতে যাচ্ছে। এই টানেলের দু’টো টিউবের একটি আগামী অক্টোবরে এবং অন্যটি নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ তথ্যটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনেক অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে। যেমন প্রথমবারের মতো দেশে মেট্রোরেল নির্মাণ হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। আর দেশে প্রথমবারের মতো নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ হচ্ছে চট্টগ্রামে।কর্ণফুলি নদীর তলদেশে এই টানেল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। সবমিলে কাজ এগিয়েছে ৮৭ শতাংশ। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের টানেলটি আসলে সুড়ঙ্গপথ। টানেলের ভেতর দিয়ে যান চলাচল করবে। যোগাযোগ, পর্যটন , ব্যবসা সম্প্রসারণে টানেলটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করার জন্য তৈরি হচ্ছে।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। টানেলটি ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ। টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দুই সুড়ঙ্গে দুটি করে মোট চারটি লেন রয়েছে। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্বে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক থাকছে। আর আনোয়ারা প্রান্তে আছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়ালসেতু। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ। টানেল প্রকল্পটি বাস্তব করে তুলছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। সেতু কর্তৃপক্ষের অধীনেই বাস্তবায়ন করা হয়েছিল দেশের অন্যতম আলোচিত অবকাঠামো পদ্মা সেতু। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন টানেলটি ঢাকা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরত্ব ও চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার কমাবে। চট্টগ্রাম মহানগরী এড়িয়ে মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সারা দেশের সড়কপথে যোগাযোগ সহজ করে তুলবে।নদীর দক্ষিণ পারবাসীর জন্য সহজ হবে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার।এ টানেল দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পর্যটন ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দরজা আরও খুলে দেবে। 
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবকাঠামো নির্মাণের বিকল্প নেই। তার মধ্যে যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।গত এক যুগের বেশি সময় ধরে সরকার তাই সড়ক ও রেল খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।নেয়া হয়েছে বড় বড় প্রকল্প। একেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে আর আমাদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দূর হচ্ছে, সাহস বাড়ছে, উচ্ছ্বাস বাড়ছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়।তাই বিনিয়োগবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তোলার প্রবণতা বেড়েছে। এটা উন্নয়নের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু টানেল নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে। এই টানেল নির্মাণ প্রকল্প বাংলাদেশ ও চীন সরকারের (জি টু জি) যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তার কাজ হচ্ছে।এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা।তার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার জোগান দিচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা।বাকি অর্থায়ন করছে চীন সরকার। ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন পায়।

আমরা জানতে পেরেছি-এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে ফিন্যান্সিয়াল এবং ইকোনমিক আইআরআর-এর পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ৬.১৯ শতাংশ ও ১২.৪৯ শতাংশ। এছাড়া ফিন্যান্সিয়াল ও ইকোনমিক ‘বেনিফিট কস্ট রেশিও’র (বিসিআর)পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ১.০৫ ও ১.৫০ শতাংশ। টানেলটি জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই পরিসংখ্যান, হিসাব আমাদের আশাকে আরও রঙিন করে তোলে।এ টানেল হওয়ার পর বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাই প্রদেশের মতো করে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কর্ণফুলী নদীর ওপর দুটো সেতু আছে।এ দুই সেতু দিয়ে চট্টগ্রামের দক্ষিণ অংশের সঙ্গে মূল মহানগরীর সংযোগ নেই। টানেলের মাধ্যমে এক্ষেত্রে যোগাযোগ সম্ভব হবে। এ টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।এশিয় মহাসড়ক বা এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে তার মাধ্যমে।

টানলের জন্য কর্ণফুলী নদীর পূর্ব দিকে প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন বেগবান হবে। এছাড়া পশ্চিম দিকে অবস্থিত চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলটির নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। প্রথম দফায় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের বাস্তব কাজ শুরু হয়। তার আগে পেরোতে হয় নানা প্রক্রিয়ার প্রতিবন্ধকতা।সেই অর্থ বছরে প্রকল্প-ব্যয় বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা করা হয়। 

কাজ শুরুর পরও নানা জটিলতা পেরিয়েছে প্রকল্পটি। এখন এটির কাজ শেষ পর্যায়ে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশের টানেলটি চট্টগ্রাম বন্দর ও আনোয়ারা উপজেলাকে যুক্ত করবে। আরও একটা বিষয় আমাদেরকে আশাবাদী করে তুলছে তা হলো টানেল সামনে রেখে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অবাধ উদ্যোগ। গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা জানতে পেরেছি-টানেল নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে চট্টগ্রামে। পুরোনো শিল্প কারখানা পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে।টানেল নির্মাণকে কেন্দ্র করে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে এরই মধ্যে শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। এই টানেলের ফলে বন্দর নগরীর দক্ষিণাঞ্চল ব্যবসা কেন্দ্রে রূপ নেবে। কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে গার্মেন্টস, জাহাজ নির্মাণ, ভোজ্যতেল, মাছ প্রক্রিয়াকরণ, ইস্পাত, সিমেন্টসহ ৮০টি শিল্প কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। 

পরিশেষে বলতে চাই, কর্ণফুলী নদীর তলদেশের এই টানেল এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এটি স্বপ্নকে বাস্তব করার অবকাঠামো।একে ঘিরে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা যেনো সহজে সব সহযোগিতা পান-তাহলে আরও বেগবান হবে অর্থনীতির চাকা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ সব প্রতিবন্ধকতা যেন দূর হয়-তার জন্য সরকারের জোর পদক্ষেপও সময়ের জোর দাবি। 
 

সর্বশেষ
জনপ্রিয়