ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে কৃষির বিরল সংগ্রহশালা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:২৩, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, মিসরসহ বহু দেশেই রয়েছে সেখানকার আদি ও আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার নানা সরঞ্জাম এবং শস্য নিয়ে জাদুঘর। কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে না হলেও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে আছে কৃষি ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট বিরল সরঞ্জামের এমন সংগ্রহশালা। যেখানে সংরক্ষিত আছে এই অঞ্চলে প্রচলিত প্রাচীন থেকে আধুনিক প্রযুক্তির কৃষিসংশ্নিষ্ট অন্তত সাতশ নিদর্শন। ছয় কক্ষের এই সংগ্রহশালায় ঢুকেই জানা যাবে কৃষির আদ্যোপান্ত। দারুণ এই কৃষি জাদুঘরটি অবস্থিত ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) চত্বরে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ হোসেন কৃষির বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত, কৃষি ও কৃষকের সঙ্গে সম্পৃক্ত গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া এবং বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন ধরনের উপকরণ যন্ত্রপাতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের লক্ষ্যে কৃষি জাদুঘর গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। এরই অংশ হিসেবে ২০০২ সালের ২৪ জানুয়ারি বাকৃবিতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় কৃষি জাদুঘরের। এরপর ২০০৭ সালের ৩০ জুন এ জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। পাঁচ একর জমিতে ৬২০ বর্গফুটের ভবনে বর্তমানে গড়ে উঠেছে ছয় কক্ষের এই জাদুঘর।

জাদুঘরের প্রথম কক্ষে গিয়ে দেখা যাবে বিভিন্ন ধরনের বীজ, পাট, গাছের ছাল, পাটজাত জিনিস। দ্বিতীয় কক্ষে রাখা আছে ফসলের অনিষ্টকারী পোকা, সাপ, কুকুরের কঙ্কালসহ কৃষিজমির আশপাশে থাকা নানা প্রাণীর সংরক্ষিত দেহ। তৃতীয় কক্ষে আছে জারে রাখা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও কৃষি ক্ষেত্রে নানা নৃগোষ্ঠীর ব্যবহূত জিনিসপত্র। চতুর্থ কক্ষে রয়েছে ঢেঁকি, তামার ডেকচি, ধান রাখার বেড়, ডুলি, মাটির চুলা থেকে শুরু করে গ্যাসের চুলা, জাঁতা, কোদাল, হারিকেনসহ বিভিন্ন তৈজস। পঞ্চম কক্ষে দেখা মিলবে কৃষকের বসতবাড়ি মডেল, কৃষি যন্ত্রপাতি, সিন্দুক। ষষ্ঠ কক্ষে আছে গরুর গাড়ি, নকশিকাঁথা, নৌকা, কুন্দা, পাড়াকলসহ নানা নিদর্শন।

প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা পেশার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা এই জাদুঘর দেখতে আসেন। সম্প্রতি দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন ময়মনসিংহ নগরীর ধোপাখলা এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন ও শরমিন বেগম দম্পতি। শরমিন বেগম বলেন, প্রথমবারের মতো ছেলেমেয়েকে কৃষির সব ধরনের জিনিসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পেরেছি। জাদুঘর না থাকলে তা সম্ভব হতো না।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বনায়ন বিভাগের ছাত্র হোসেন মোহাম্মদ বলেন, প্রথমবারের মতো কৃষি জাদুঘরে এসেছি। একসঙ্গে প্রাচীন থেকে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার সুযোগ আছে এখানে। শিক্ষার্থীদের জন্য এই জাদুঘর খুবই উপকারী। ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান ও এমদুদুল হক বলেন, জাদুঘরে এসে অনেক পুরোনো কৃষি যন্ত্রপাতি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। সেসঙ্গে জানলাম কৃষির বিবর্তন সম্পর্কে।

কৃষি জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক ড. আশরাফুজ্জামান বলেন, এটিই দেশের সবচেয়ে বড় প্রাতিষ্ঠানিক কৃষি সংগ্রহশালা। বর্তমানে এখানে সাতশর মতো জিনিস আছে। সংগ্রহ আরও বৃদ্ধি করতে কাজ করছি আমরা। প্রতিদিন এখানে দুই থেকে আড়াইশ দর্শনার্থী হয়। শুক্রবার ছাড়া বাকি সবদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে এই জাদুঘর।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়