ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বাস্তবায়নের পথে দ্রুত গতিতে চলছে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৪৯, ১১ জানুয়ারি ২০২৩  

বাস্তবায়নের পথে দ্রুত গতিতে চলছে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ

বাস্তবায়নের পথে দ্রুত গতিতে চলছে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ

বাস্তবায়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে কয়লাভিত্তিক মেগা প্রকল্প কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র। পুরোদমে চলছে মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন ছোঁয়ার অপেক্ষায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল অবকাঠামো। স্টিল এবং ইস্পাতের গাঁথুনিতে গড়ে তোলা হচ্ছে বয়লার চেম্বার বা স্টিম জেনারেটরের কাঠামো।

কয়েক বছর আগেও এখানকার হাজার হাজার একর জমিতে লোনাপানি জমিয়ে লবণের চাষ হতো। দিনভর চলতো মাছ শিকার। আজ সেই লবণমাঠেই বাস্তবায়ন হচ্ছে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দর।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাজগুলো শেষ হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ভাগ্য বদলাবে এখানকার মানুষের। মহেশখালী হবে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। সম্ভাবনাকে অস্বীকার করছেন না এখানকার সাধারণ মানুষও। তাদেরও ইচ্ছা, সময়ের পরিবর্তনে লবণ উৎপাদন আর মাছ শিকার বাদ দিয়ে শামিল হবেন উন্নয়নের এই বিপ্লবে।

মাতারবাড়ী ইউনিয়নের ৮০ হাজার জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশের পেশা সমুদ্রের মাছ শিকার এবং খোলা মাঠে লোনাপানি জমিয়ে লবণ উৎপাদন করা। কিন্তু আজ সেখানে নির্মাণ কাজে ব্যস্ত এক হাজারের মতো বিদেশিসহ এখানে কাজ করছেন এক হাজার ৪১০ জন। জমিতে দেশি-বিদেশি শ্রমিক-প্রকৌশলীর ঘামে-শ্রমে মাথা তুলেছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল অবকাঠামো। বড় বড় ক্রেন, ভারি যন্ত্রপাতি দিয়ে দিনরাত চলছে নির্মাণকাজ। জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার (জাইকা) সহযোগিতায় ১ হাজার ৪১৪ একর জমিতে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। 

এরই মধ্যে প্রকল্পের ৮৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০২৪ সালের শুরুতে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। 

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যমতে, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ ৮৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে দুটি জেটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। জেটি দুটিতে বিদেশ থেকে যে কোনো সময় কয়লা নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে। এছাড়া প্রকল্পের বিভিন্ন অবকাঠামোর কাজ শেষ পর্যায়ে। ফলে আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ৬০০ ও জুনে আরও ৬০০ মেগাওয়াট করে মোট ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেশের মূল গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।’

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ ও গভীর সমুদ্র বন্দরের মোট আয়তন ১ দশমিক ৬৮ একর। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। শুরুতে প্রকল্প ব্যয় ছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পরে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা হয়। প্রকল্পে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার ৫০০ জন বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার্বিক অবকাঠামো নির্মাণের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

মাতারবাড়ির কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের তড়িৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান সরকার বলেন, ‘১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আশা করছি, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ৬০০ ইউনিট এবং একই বছরের জুলাই মাসে দ্বিতীয় ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে।’ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ এলাকা হবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির হাব। এ হাবকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে নতুন শহর। যা এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন ঘটাবে।

এদিকে মাতারবাড়ি ধলঘাটার এই বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে ১ হাজার ৮০ একর ভূমিতে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে সমুদ্রবন্দর। এটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান।

সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালে এ বন্দরটি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। বন্দরের সঙ্গেই গড়ে তোলা হবে কনটেইনার রাখার অবকাঠামো। ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোও (আইসিডি) গড়ে তোলা হবে। সমুদ্রবন্দর চ্যানেলে বিদেশি জাহাজ ভিড়ছে প্রকল্প এলাকার দক্ষিণ-পশ্চিমে চার কিলোমিটার সড়কের শেষ প্রান্তে ১৪ কিলোমিটার মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর চ্যানেলে। চ্যানেলের সঙ্গে তৈরি হয়েছে পণ্য খালাসের দুটি জেটি। বঙ্গোপসাগর থেকে এই চ্যানেলে ঢুকে বিদেশি জাহাজগুলো সেখানে পণ্য খালাস করছে।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়