ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

রংপুরের বিএমডিএর ২১০ কোটি টাকার ছয় প্রকল্প

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩০, ২৭ আগস্ট ২০২৩  

রংপুরের বিএমডিএর ২১০ কোটি টাকার ছয় প্রকল্প

রংপুরের বিএমডিএর ২১০ কোটি টাকার ছয় প্রকল্প

দেশের উত্তরাঞ্চলে অসংখ্য খালবিল, পুকুর ও নদনদী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। একটা সময় এসব জলাভূমিতে স্থানীয়ভাবে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যাপক ব্যবহার ছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এখন ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ ও ধারণক্ষমতা হারিয়ে গেছে। ফলে প্রতিবছর অনাকাক্সিক্ষত অতিবৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় জনজীবনে দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে জমা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় কৃষি ও কৃষকের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাও ঘটেছে ব্যাপক।

বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের খালবিল ও নদীনালা পুনঃখনন করে পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) বাস্তবায়নে এরই মধ্যে ছয়টি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে। চলতি বছরের ২ আগস্ট রংপুরের মহাসমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তার মধ্যে বিএমডিএর ছয় প্রকল্প অন্যতম।

বিএমডিএ সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীর তালুক ধর্মদাস এলাকায় ৬৬ শতক জমির ওপর আট কোটি ছয় লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে পাঁচতলা-বিশিষ্ট বিএমডিএর রংপুর বিভাগীয় অফিস ভবন নির্মাণসহ ১২ কোটি ৬৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার নলেয়া নদী পুনঃখনন, পীরগাছা উপজেলায় পাঁচ কোটি ৩২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৯ দশমিক ২৪ কিলোমিটার আলাইকুমারী নদী পুনঃখনন, বদরগঞ্জ উপজেলায় এক কোটি ২১ লাখ ২৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৪ দশমিক ৫৭ একর নইমুল্লা বিল পুনঃখনন, মিঠাপুকুরের দুর্গাপুর এলাকায় এক কোটি ৩৯ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৯ দশমিক ৬৩ একর চিথলী বিল পুনঃখনন এবং বদরগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় এক কোটি ১৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৮ দশমিক ৮৯ একর ভারারদহ ও পটুয়াকামরি বিল পুনঃখনন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রংপুর অঞ্চলের কৃষি এবং কৃষকের সার্বিক উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। খননের ফলে রংপুরের কয়েকটি নদী প্রাণ ফিরে পেয়েছে এবং বিভিন্ন খাল-বিল-নালা ও পুকুর পুনঃখনন এবং জলাবদ্ধতা দূর করায় হাজার হাজার কৃষকের জমিতে সোনার ফসল উৎপাদন বাড়ছে। রংপুর অঞ্চলে কৃষিবিপ্লব হলেও ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে বন্ধ করা হয়েছে গভীর নলকূপ স্থাপন। নদীনালার পানি বাড়তে থাকে সেচের আওতায়, কিন্তু সেটিও পর্যাপ্ত নয়। ফলে বরেন্দ্র এলাকার বৃষ্টির পানি আহরণে নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুর পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়া হয়। পুনঃখননের ফলে বিদ্যমান জলাবদ্ধতা দূর করে ৩৫০ হেক্টর অনাবাদি পরিত্যক্ত জমি চাষের উপযোগী করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় দুই লাখ ৩০ হাজার বিভিন্ন জাতের ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করে পরিবেশবান্ধব ভূ-কাঠামো গড়ে উঠবে। শুধু তাই নয়, প্রকল্পের মাধ্যমে অতিরিক্ত বনজ সম্পদ সৃষ্টি ও পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন এবং পুষ্টিমান বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রংপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান খান বলেন, পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০৯ কোটি ৮৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছরে ২৩০ কিলোমিটার খাল, ১০টি বিল এবং ৯৮টি পুকুর পুনঃখনন করে সঞ্চিত ও ধারণকৃত পানির সাহায্যে প্রায় ১০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। এছাড়া ২১৩টি এলএলপিতে ৩১৯ কিলোমিটার ভূ-গর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণ করে সেচের পানির অপচয় রোধের মাধ্যমে কৃষকের সেচ ব্যয় হ্রাস ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উত্তরণ ও সেচ সম্প্রসারণে পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিএমডিএর মাধ্যমে এই প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছে সরকার। এতে করে ২০৩০ সালের মধ্যে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার ৩০ শতাংশ উন্নীত করা সহজ হবে এবং ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’-এর অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখা যাবে বলে মনে করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়