রোজার প্রথম কয়েকদিন যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি
হেলথ ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
অনেকেই সুস্থ থাকতে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করেন। রোজার সময় সারাদিন না খেয়ে থেকে ব্যায়াম করতে চাইলে কিছু বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন।
শরীরচর্চা প্রশিক্ষক বেলাল হাফিজ ও পুষ্টিবিদ নাজিমা কুরেশি এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ। যুক্তরাজ্যে ‘দ্য হেলদি মুসলিমস’ হিসেবে পরিচিত এই দম্পতি রোজা রেখে ব্যায়াম করার বিষয়ে ‘দ্য হেলদি রামাদন গাইড’ নামে একটি বইও লিখেছেন।
হাফিজ বলেছেন ‘রোজার উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রার্থনা, আধ্যাত্মিকতা ও আত্মিক উন্নতি সাধনের দিকে মনোযোগ দেয়া – এবং এই মাসের পবিত্রতা অক্ষুণ্ণ রাখা। আমরা যা খাই এবং যেভাবে ব্যায়াম করি, তা এই উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে বড় ভূমিকা রাখে। কারণ আমাদের খাদ্য ও ব্যায়াম আমাদের মানসিক চাপের মাত্রা, জীবিকা ও জীবনযাপনের ভারসাম্য ও পরিবারে বড় ধরণের প্রভাব তৈরি করেন’।
আপনি যদি ৩০ দিন রোজা রেখে স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি আপনার ফিটনেসও অক্ষুণ্ণ রাখতে চান, তাহলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন।
পুষ্টিবিদ নাজিমা কুরেশি বলেন, ‘অনেক মানুষই অভিযোগ করেন যে রোজার প্রথম কয়েকদিন তারা মাথা ব্যাথায় ভোগেন। এটি সাধারণত পানিশূণ্যতার কারণে হয়ে থাকে। লক্ষ্য হল, স্বাভাবিক সময়ে আমরা যেই পরিমাণ পানি পান করে থাকি, রোজার সময় একই পরিমাণ পানি সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত পান করা। অর্থাৎ, ঐ সময়ের মধ্যে কিছুক্ষণ পরপর অল্প অল্প পানি পান করা যেতে পারে।’
এছাড়া, আপনি যদি ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় খেয়ে অভ্যস্ত থাকেন, তাহলেও রোজার প্রথম কয়েকদিন আপনার মাথা ব্যাথা হতে পারে। কারণ ক্যাফেইনের অভ্যাস থাকা ব্যক্তিদের শরীরে ক্যাফেইনের ঘাটতি হলে মাথা ব্যাথা তৈরি হয়।
দিনের প্রথম খাবার পুষ্টিকর রাখুন: হাফিজের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘দিনে যেহেতু তিনবারের বদলে দুইবার খাবার গ্রহণ করবেন আপনি, আপনার ঐ দুইটি মিল যেন আপনাকে সারাদিনের চালিকাশক্তি দিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে আপনার। মানুষ অনেক সময় মনে করে, তারা যেহেতু দুর্বল অনুভব করছে তাই ভোররাতে সেহেরি না খেয়েই রোজা রাখবে। কিন্তু এরকম ক্ষেত্রে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হয়।’
ইফতারে অতিরিক্ত খাবার না গ্রহণ করতে বলেন বিশেষজ্ঞরা: ‘আপনার ভোররাতের খাবারে প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিজাতীয় খাবারের পাশাপাশি কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা-জাতীয় খাবার থাকা প্রয়োজন। সাথে যদি কিছু সবজি ও ফল থাকে তাহলে তা বোনাস।’
পুষ্টিবিদ নাজিম কোরেশি অবশ্য স্বীকার করেন যে যাদের অভ্যাস নেই তাদের জন্য এত সকালে খাওয়া অনেক সময় বেশ কষ্টকর হতে পারে। তবে তিনি বলেন যে আপনার শরীর দ্রুত এই অভ্যাসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।
তিনি বলেন, ‘প্রথম কয়েকদিন যদি আপনার খুব ভোরে খেতে কষ্ট হয়, তাহলে শুরুতে কয়েক কামড় খাবেন। সাধারণত চতুর্থ বা পঞ্চম দিনের মধ্যে ব্যক্তির ঐ সময় খাবার গ্রহণের অভ্যাস হয়ে যায়।’
ইফতারে অতিরিক্ত খাবার না গ্রহণ করা: যেহেতু রোজার সময় আমরা সারাদিন না খেয়ে থাকি, ইফতারের সময় আমাদের অনেকেরই মনে হতে পারে যে সারাদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে অনেক খেতে হবে। বিশেষত বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সাথে খাওয়ার সময় এই প্রবণতা আমাদের মধ্যে বেশি কাজ করে।
রোজার পর ইফতারের প্রস্তুতি: হাফিজ বলেন, ‘রোজা ভাঙা একটি আনন্দঘন মুহুর্ত, যখন মানুষ বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে খেতে বসে। কিন্তু ইফতারে আমরা অনেকেই যা খাই তা অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার হয়ে যায়। যদি সপ্তাহে একদিন কিছুটা বেশি খাওয়া হয়, তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু রমজান মাসে দেখা যায়, প্রতিদিনই আমরা অতিরিক্ত ইফতার খেয়ে ফেলি। তাই কার্যত সারাদিন না খেয়ে থাকলেও, দিন শেষে দেখা যায় আমরা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলছি।’
কোরেশির মতে, ‘অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আপনি অনুভব করবেন যে আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে দুর্বল অনুভব করছেন এবং পরেরদিনের রোজার জন্য উৎসাহী অনুভব করছেন না।’
‘আমরা বলি, আপনি পানি দিয়ে ইফতার শুরু করুন এবং এরপর খেজুর ও কিছু ফল খান। এরপর খাবার খওয়ার আগে প্রার্থনা শেষ করুন। খাওয়ার সময় আপনার ঐতিহ্যবাহী খাবারই খান, কিন্তু সেখানে যেন প্রোটিন কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ও সবজি থাকে তা নিশ্চিত করুন। সেখানে সুপ, স্টু, মাছ বা মুরগির মাংসের আইটেম থাকতে পারে।’
হাফিজ বলেন, ‘আমরা সবাইকে বলি খাওয়ার সময় ধীরে খাওয়া শেষ করুন। সময় নিন, আশেপাশের মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। আপনি যদি কোনো দাওয়াতে গিয়ে তাকেন আর আপনার হোস্ট আপনার প্লেট খালি দেখে, তাহলে আপনাকে আবার খেতে বলতে পারে। সুতরাং খুব ধীরে নিজের খাবার শেষ করুন যেন আরো খাবার নিতে কেউ চাপ না দিতে পারে।’
ব্যায়ামের সময় নির্ধারন করা: অধিকাংশ মানুষই ইফতারের এক বা দুই ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন কারণ সেক্ষেত্রে ব্যায়াম শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা খাবার ও পানি পেতে পারে।
শক্তি ও স্থিতিশীলতার দিকে মনোযোগ দিন: দিনের যেই সময়েই আপনি ব্যায়াম করেন না কেন, আপনার কার্যক্রমের সঙ্গে মানিয়ে নেয়াটা জরুরি। রোজার সময় ব্যায়ামের তীব্রতা কমিয়ে ফেলুন। এই মাসে আপনার শরীরের শক্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি, নাড়াচাড়া ও গতিশীলতা বাড়ানোর দিকে নজর দিন। শারীরিকভাবে আগের চেয়ে কার্যকর হওয়ার পেছনে মনোযোগ দিন।
এই মাসে কঠিন ধরনের ব্যায়ামের রুটিন শুরু না করে হাঁটা বা হালকা দৌড়ানোর মত ব্যায়াম করা বেশি কার্যকর।
- রমজানে সুস্থ থাকতে যেসব বিষয় মেনে চলা জরুরি
- ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু, বাড়ল শনাক্ত
- ভাত কম খাওয়ার পরও কেন ওজন বাড়ে?
- করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা ও করণীয়
- দেশে আরো ২৬ জনের করোনা শনাক্ত
- দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৬ জন আক্রান্ত
- দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু নেই, শনাক্তের হার ১.৯৭ শতাংশ
- গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ৪৩
- দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়নি, বাড়ল শনাক্ত
- ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি আজ, শনাক্তের হার ১.৯০ শতাংশ