ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

লাল ইটের ৭১ ফুট স্থাপনা, দেশের সবচেয়ে উঁচু শহিদ মিনার এটিই

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৩৫, ২৬ মার্চ ২০২৩  

লাল ইটের ৭১ ফুট স্থাপনা, দেশের সবচেয়ে উঁচু শহিদ মিনার এটিই

লাল ইটের ৭১ ফুট স্থাপনা, দেশের সবচেয়ে উঁচু শহিদ মিনার এটিই

৭১ ফুট উচ্চতার লাল ইটের স্থাপনা। এই একটি স্থাপনাতেই তুলে ধরা হয়েছে বাঙালির দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি হাজারো মানুষকে শ্রদ্ধাবনত করছে অনন্য নির্মাণশৈলীতে তৈরি এই মিনার। যেটি অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরই মধ্যে খ্যাতি পেয়েছে দেশের সবচেয়ে উঁচু শহিদ মিনার হিসেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সামনে নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীতে লাল ইটে দাঁড়িয়ে থাকা এই স্থাপত্যকর্মে চিত্রিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি ও গৌরবগাঁথা।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের অর্জনকে ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করে তৈরি এ মিনারের ভিত্তিমঞ্চের ব্যাস রাখা হয়েছে ৫২ ফুট। আর একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ স্মরণে ভিত্তিমঞ্চ থেকে উন্মুক্ত আকাশগামী তিনটি স্তম্ভের উচ্চতা ৭১ ফুট।

প্রত্যেক স্তম্ভের আবার রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। প্রথমটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য-সংস্কৃতি, দ্বিতীয়টি মাটি, মানুষ, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ও আন্দোলন-সংগ্রাম এবং তৃতীয়টি স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মুক্তি ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতীক। ঊর্ধ্বগামী এই স্তম্ভগুলো আমাদের স্বাধীন হতে শেখায়। বাধা ডিঙিয়ে অসীমকে জয় করার অনুপ্রেরণা যোগায়।

শহিদ মিনারের মূল বেদিতে ওঠার জন্য রয়েছে আটটি সিঁড়ি। বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত নানান আন্দোলন-সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত আটটি বছরকে নির্দেশ করে এই সিঁড়িগুলো। সেগুলো হলো- ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০ ও ১৯৭১।

পুরো শহিদ মিনারটি তৈরি হয়েছে লাল ইটে। এই লাল বাঙালির বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে বিসর্জন দেয়া রক্তের স্মৃতি বহন করে। মিনারের চারপাশ সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত হওয়ায় তা পাখির চোখে যেন এক টুকরো বাংলাদেশের পতাকার আকার ধারণ করে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান যারা মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের স্বাধিকার আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে শহিদ হয়েছেন তাদের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শহিদ মিনার নির্মিত হয়েছে সেটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে তথা বাঙালির সংগ্রাম জানতে এর ভূমিকার শেষ নেই।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের নকশা করেছেন প্রখ্যাত স্থপতি রবিউল হোসাইন। এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০০৪ সালের ৬ নভেম্বর। এরপর ২০০৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহিদ মিনারের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে যেমন তুলে ধরছে তেমনি এই শহিদ মিনার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কেও দিয়েছে আলাদা পরিচয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেডমার্ক হয়ে উঠেছে এই মিনার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত জাহাঙ্গীরনগরের সৌন্দর্যে আলাদা মাত্রাও যোগ করেছে এটি।

প্রতিবছর বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সকাল কিংবা সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আড্ডার সঙ্গী হয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ।

আবার বিভিন্ন প্রতিবাদ, আন্দোলনেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শহিদ মিনারের পাদদেশে জড়ো হন। এছাড়া রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে শহিদ মিনারের সৌন্দর্য। সবার মনে স্বাধীনতা ও বাঙালির চেতনার উদ্রেক করে এই মিনার।

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়