ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শেরপুরে কালো আখ চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:২৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

প্রচণ্ড গরমে এক গ্লাস আখের রস প্রাণে তৃপ্তি আনে। ফলে গরমকালে আখের চাহিদা অনেক গুণ বেড়ে যায়। চিনির জন্য আখের চাহিদা সবসময় থাকলেও গ্রীষ্মকালে এর চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। কারণ আখের রসের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে স্বল্প খরচে অধিক ফলন, ঔষুধি গুণ, দেশীয় আখের চেয়ে মোটা, অধিক রসালো এবং দ্বিগুণ লম্বা ফিলিপাইনের ব্ল্যাক সুগার জাতের বা কালো রঙের আখ সম্প্রতি বাংলাদেশে গবেষণা পর্যায়ে থাকলেও শেরপুরে এ আখ চাষে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে কৃষদের মধ্যে।

ফিলিপাইনের এ ব্ল্যাক সুগার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের উত্তর প্রদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা বিভাগ শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু করলেও মাত্র ৮ থেকে ১০ মাসের মধ্যে এ আখ পরিপক্ব হওয়ায় এবং রসালো ও প্রচুর ফলন হওয়ায় কৃষকদের মাঝে বাণিজ্যিকভাবে এ আখ চাষে ব্যাপক আগ্রহ শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, ফিলিপাইনের কালো রঙের বা ব্ল্যাক সুগার শুধু গরমে তৃপ্তিই নয়, এর রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। মুখে ব্রণ ওঠা, মুখের ওপর বলি রেখা দূর করে এ আখের রস। ফলে ঢাকায় এ রসের অনেক চাহিদা। চিবিয়ে খাওয়ার জন্য সব থেকে ভালো জাতের আখ হলো এই ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের আখ। বাজারে যেসব আখ পাওয়া যায় অনেক সময় সেগুলো শক্ত, মিষ্টি কম ও রস কম থাকে। কিন্তু ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের এ আখ সেই দিক দিয়ে বেশ ভালো জাতের আখ। এ আখের মিষ্টতা অনেক বেশি ও নরম থাকায় বৃদ্ধ ও শিশুরা এই আখ অনায়াশেই চিবিয়ে খেতে পারে। এর খোসা হাতের আঙুল দিয়েও ছাড়ানো যায়। বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের আখ চাষ করে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। তাই শেরপুরে এ ফিলিপাইনের ব্ল্যাক জাতের আখচাষ বাণিজ্যিকভাবে শুরু করার চিন্তাভাবনা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার ভায়াডাঙ্গা গ্রামের ঢাকায় একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক আব্দুর রহিম তার গ্রামের বাড়িতে গত বছর থেকে তার নিজস্ব ৫০ শতক জমিতে এই ফিলিপাইনের ব্ল্যাক জাতের প্রায় ১২ হাজার চারা রোপণ করেন। বাজারে দেশীয় যে আখগুলো আমরা দেখতে পাই সেগুলো সাধারণত সর্বোচ্চ ১০ ফুট বা তার একটু বেশি হয়ে থাকে, কিন্তু ফিলিপাইন জাতের আখের উচ্চতা প্রায় দ্বিগুণ হয় অর্থাৎ ১৫ থেকে ২০ ফুট। এ আখের নানা গুণের পাশাপাশি চাষেও রয়েছে ভিন্নতা ও অধিক লাভের সুযোগ। প্রতিটা চারার গোড়া থেকে আরও প্রায় ১০ থেকে ১৫টি চারা গজায় এবং প্রতিটা গাছ লম্বা হয় প্রায় ১৪ থেকে ১৫ ফুট। সার-পানি খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। ফলে স্বল্প খরচেই এ আখ চাষ করা যায়। একবার এ চারা রোপণ করলে পরবর্তী ৩ বছর আর নতুন করে রোপণ করার প্রয়োজন হয় না। কেটে ফেলা আখের গোড়া থেকেই নতুন করে আখের চারা গজিয়ে উঠে এবং তার থেকে পরবর্তী বছরে আবারও ফলন পাওয়া যায়।

এছাড়া প্রতিটি আখ থেকে প্রায় ৩ কেজি রস বের করা যায়; যা দেশীয় আখ থেকে সম্ভব নয়। বাজার মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় কৃষক লাভবান হবেন বেশি। প্রতিটা আখ ১০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। তাই আশপাশের অনেকেই এ আখ ক্ষেত দেখতে আসছেন এবং এ আখচাষের চিন্তাও করছেন কেউ কেউ। শ্রীবর্দীতে ওই চাষির আখ দেখে ইতোমধ্যে তার কাছ থেকে চারা নিয়ে পার্শ^বর্তী মালাকুচা গ্রামে এক কৃষক প্রায় এক একর জমিতে আবাদ শুরু করেছেন। এছাড়া শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের মাছপাড়া গ্রামের তালুকদার এগ্রো নামে এ কৃষি খামারে প্রায় এক একর জমিতে এর আবাদ শুরু করেছে। তিনিও পরীক্ষামূলকভাবে অল্প কিছু চারা রোপণ করে ফলন ভালো পেয়ে এবার বেশি করে আবাদ শুরু করে।

আখচাষি রহিম মিয়া জানায়, ফিলিপাইন এ আখের চারা তিনি রাজশাহী থেকে নিয়ে আসে। এরপর তার ক্ষেতের পরিপক্ব আখ থেকে কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন শুরু করেছে। এ আখে পোকামাকড় বা রোগবালাই নেই বললেই চলে। শুধু সামান্য কিছু সার এবং শুষ্ক মৌসুমে কিছু সেচের প্রয়োজন হয়। আগাছা পরিষ্কার ও চাষ পদ্ধতির নিয়মনীতি মানলে এ আখ পরিপক্ব হতে সাধারণত ৮ থেকে ১০ মাস মাস সময় লাগে এবং উচ্চতাও অনেক বেশি হয়। তিনি জানান, এ আখ ক্ষেতের পূর্ণাঙ্গ আখের চেয়ে এর চারার বেশ চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি তার আখগাছ থেকে প্রায় ৫ হাজার চারা বিক্রি করে লাখ টাকা আয় করেছেন। আর প্রতিটা আখ ১০০ টাকা করে প্রায় ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। রোকেয়া-নবাব এগ্রো ফার্ম নামে একটি অনলাইন পেজ খোলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চারার অর্ডার পাচ্ছেন। বর্তমানে অর্ডার রয়েছে আরও ১৫ হাজার চারা। 

জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস জানান, ফিলিপাইনের এ ব্ল্যাক সুগার জাতের আখটি এখনও গবেষণা পর্যায় থাকলেও এর ফলনে কৃষকরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এটি ১৯১৮ সাল থেকে নটিফাইট ক্রপ হিসেবে গবেষণা চলছে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় স্বল্প পরিষরে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এর গবেষণার ডেটা হাতে এলে এবং ভ্যারাইটি যাচাই-বাছাই শেষে বাণিজ্যিকভাবে যখন কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হবে, তখন কৃষকরা অধিক লাভের এ আখ চাষে আরও বেশি আগ্রহ হয়ে উঠবেন এবং কৃষকরাও লাভবান হবেন।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়