ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শেরপুরের ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ে এবার বাহারি গোলাপের বাণিজ্যিক চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:২৩, ৪ অক্টোবর ২০২২   আপডেট: ২০:৩০, ৪ অক্টোবর ২০২২

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শেরপুরের গারো পাহাড়ে এবার বাহারি গোলাপের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। বনাঞ্চলের পতিত জমিতে গড়ে তোলা বাগানের বাহারি গোলাপ সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে চারদিকে। ঝিনাইগাতী সীমান্তের সন্ধ্যাকুড়া এলাকায় ১৫০ শতাংশ জমিতে ওই গোলাপ বাগান গড়ে তুলেছেন মোহাম্মদ আলী নামে এক যুবক। এটি জেলায় গোলাপের প্রথম বাণিজ্যিক চাষ। এদিকে গোলাপ চাষ শুরুর পর স্থানীয় বেকার যুবকরা পেয়েছেন কর্মসংস্থানের পথ। তেমনি পড়ে থাকা জমি চাষের আওতায় আসায় ভূমি মালিকরাও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে উচ্চ মূল্যের ফসল গোলাপ আবাদ ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে গেলে কথা হয় গোলাপ বাগানের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আলীর সাথে। তিনি জানান, গত ১৫ বছর যাবত ঢাকার শাহবাগ, উত্তরা, ধানমন্ডি এবং গুলশানে নানা ধরণের ফুলের ব্যবসা করতেন তিনি। এক সময় চিন্তা করেন নিজ গ্রামের বনাঞ্চলে পড়ে থাকা জমিতে গোলাপ চাষ করবেন। এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চুক্তি ভিত্তিতে বাৎসরিক সাড়ে তিন লাখ টাকায় ৮ বছরের জন্য জমি লিজ নেন। গোলাপ বাগানের নাম রাখেন জননী ফ্লাওয়ারস গার্ডেন। মোহাম্মদ আলী আরও জানান, নিজের পুঁজি এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রায় ১৯ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ভারতের চেন্নাইয়ে এক পরিচিত জনের মাধ্যমে দুই দফা চাইনিজ ও থাই জাতের ১৮ হাজার গোলাপের চারা সংগ্রহ করেন। পরে জমিতে জৈব সার, টিএসপি ও ইউরিয়া ব্যবহার করে চারা রোপণ করেন। আর চারা রোপণের এক মাস পর থেকে ফুল আসা শুরু করে। তবে বিক্রি উপযোগী ফুল পাওয়া যায় ৪ মাস পর থেকে। প্রায় ৭ মাস বয়সী ওই বাগানে এখন শোভা পাচ্ছে সাদা, লাল, হলুদ ও পিংক কালারের বাহারি গোলাপ।

বাগানের শ্রমিক কুসুম আলী ও মো. ফজলুর রহমান জানান, তারা বাগানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন। প্রতিটি গাছের পরিচর্যা ছাড়াও বিক্রির জন্য ফুল কাটিং, পরিস্কার করা এবং পাইকারদের হাতে পোঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এ জন্য তারা মাসিক ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা মজুরি পান। এছাড়া প্রতিনিয়ত বাগান আগাছা মুক্ত রাখতে আরও বেশ কিছু শ্রমিক দৈনিক চুক্তি ভিত্তিতে শ্রম দেন। তারা মনে করেন গ্রামে গোলাপ বাগান হওয়ায় বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে স্থানীয় বেশ কয়েকজন।

স্থানীয় পাইকার মোকছেদ মিয়া ও আছর আলী বলেন, উৎপাদিত গোলাপ স্থানীয় বাজার ছাড়াও ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় বিক্রি হচ্ছে। দৈনিক গড়ে প্রায় ১৮০০-২০০০ পিস ফুল সংগ্রহ করা হয়। যার ১শ পিসের ফুলের ঝুড়ি ২ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
ওই বাগানের ভূমি লিজদাতা মনজুর মিয়া বলেন, মোহাম্মদ আলীর সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই গোলাপ বাগান তৈরি করতে আগ্রহী হচ্ছেন। তার আরও কিছু পড়ে থাকা জমি অন্য যুবকরা ভাড়া নিয়ে গোলাপ বাগান করতে চাইছে। স্থানীয় দোকানদার রশীদ জামান ও গেদা মিয়া বলেন, এলাকায় ফুলের রানী গোলাপের দেখা পেতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আসছেন। এ কারণে তাদের বেচাকেনাও বেড়েছে।

এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা এক ইঞ্চি জমিও যেনো পতিত পড়ে না থাকে। আমরা সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এখানে স্থানীয় যুবক মোহাম্মদ আলী গোলাপ বাগান করেছেন। মাত্র ৬ মাসে তিনি ওই বাগান থেকে ৪ লাখ টাকা আয় করেছেন। উচ্চ মূল্যের ফসল গোলাপ আবাদ ছড়িয়ে দিতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়