ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবন করা হয়েছে ‘রাস’ পদ্ধতির মাছ চাষ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:০৭, ৩১ অক্টোবর ২০২২  

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবন করা হয়েছে ‘রাস’ পদ্ধতির মাছ চাষ

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবন করা হয়েছে ‘রাস’ পদ্ধতির মাছ চাষ

অল্প জায়গায় অধিক মাছ চাষ করে উদ্যোক্তাদের ভাগ্য বদলে দিতে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) উদ্ভাবন করা হয়েছে ‘রাস’ পদ্ধতির মাছ চাষ। মাছ চাষে যান্ত্রিকিকরণের জন্য আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশিয় প্রযুক্তিতে বিদ্যমান সম্পদ ব্যবহার করে কম খরচে আধুনিক প্রযুক্তি রিসারকুলেটিং একোয়াকালচার সিস্টেম (রাস) উদ্ভাবন করেছেন শেকৃবির একদল গবেষক।

প্রকল্পের পিআই অধ্যাপক ড. এ. এম. সাহাবউদ্দিন জানান, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মাছ চাষে জৈব নিরাপত্তা সঠিকভাবে রক্ষা করে বিদ্যমান মাছ চাষের চেয়ে ৮০-১০০ গুন বেশি মাছ উৎপাদন সম্ভব। তাছাড়াও দেশিয় সম্পদ ও কারিগরে দক্ষতা ব্যবহার করে উৎপাদিত প্রযুক্তি আমদানিকৃত প্রযুক্তির অর্ধেকেরও কম মূল্যে পাওয়া সম্ভব।  

তিনি বলেন, সাধারণ যেকোনো বদ্ধ জলাশয়ে ১ শতকে ২-৩ কেজি এবং নিবিড় চাষ করা গেলে সর্বোচ্চ ২০-৩০ কেজির মতো মাছ চাষ করা যায়। তবে প্রতি ঘনমিটার জায়গায় ১ হাজার লিটার পানিতে রাস পদ্ধতি ব্যবহার করে উৎপাদন করা যাবে ৮০-৯০ কেজি মাছ। এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত প্রতিটি ট্যাংক সাড়ে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার লিটার পানি ধারণ করতে পারে। সে হিসেবে একটি ১০ হাজার লিটার সম্পন্ন প্রতি ট্যাংকে উৎপাদন করা যাবে প্রায় ৮০০ কেজি মাছ। 

রাস পদ্ধতিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, মাছের মলগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্যাংক থেকে বের করে ভর্টেক্স ফিল্টারে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে মলগুলো বের করে প্রয়োজনে একুয়াফনিক্সসহ বিভিন্ন কৃষি কাজে ব্যবহার করা যায়। অন্যান্য আন্তর্জাতিক ট্যাংকগুলোতে পাম্প ব্যবহার করে এ কাজ করা হলেও গ্রেভিটি ফোর্স ব্যবহারের ফলে এতে আমাদের কোনো পাম্পের প্রয়োজন হয় না। এভাবে ৫টি জায়গায় পাম্পের কাজ কমিয়ে আনায় প্রাথমিক খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে ট্যাংকে নতুন পানি সাপ্লাইয়ের জন্য ছোট একটি মোটরের প্রয়োজন পড়ে যেটিকে সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। আর বাতাসের অক্সিজেনকে পানিতে মিশিয়ে বুদবুদ তৈরির মাধ্যমে মাছের অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।

বায়োফ্লক ও রাস পদ্ধতির পার্থক্য জানতে চাইলে অধ্যাপক সাহাবউদ্দিন জানান, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে বেশি প্রয়োজন হয় কারিগরি দক্ষতা এবং নিয়মিত দেখভালের। তবে রাস পদ্ধতির বেশিরভাগ অংশে মেশিন কাজ করে বলে উদ্যোক্তাদের বেশি পেরেশানির প্রয়োজন হয় না।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশে এ পদ্ধতির মাছ চাষ নতুন নয়, তবে বর্তমানে সবগুলোই বিদেশ থেকে আমদানি করা। যা কিনতে গেলে একজন উদ্যোক্তাকে পরিবহন খরচ এবং শুল্ক মিলিয়ে কেনা দামের দ্বিগুণ টাকা গুণতে হয়। তার ওপর টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকায় এতে কোনো সমস্যা দেখা গেলে পর্যাপ্ত সাপোর্টের অভাবে হতাশ হয়ে চাষ বন্ধ করে দেন অনেক উদ্যোক্তা। তবে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা এ চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করা সহজ এবং সুলভ হওয়ায় অল্প জায়গায় অধিক মাছ চাষ করে সফল হতে পারবেন যেকোনো উদ্যোক্তা।

তিনি বলেন, যেসব মাছের পোনা পাওয়া যায় এবং যারা ফিড খায় সেসব মাছকে এ পদ্ধতিতে চাষ করা যাবে। সারাদেশে দেশীয় পদ্ধতির এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। দেশে আগে শুরু হওয়া যেসব প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলোকেও আমরা আমাদের পরামর্শের মাধ্যমে নতুন করে চালু করার চেষ্টা করছি।

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়