ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সবচেয়ে প্রাচীন নর্তে চিকো সভ্যতা

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩২, ৩ অক্টোবর ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল থেকে ২৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে শুষ্ক সুপে উপত্যকা। এখানে প্রায় ৫০০০ বছরের পুরনো দুটি কারাল পিরামিড। এটি এখন পর্যন্ত জানা সবচেয়ে প্রাচীন আন্দীয় সভ্যতা। পেরুর এই অঞ্চলকে কথ্য ভাষায় নর্তে চিকো (স্পেনীয়, অর্থ উত্তরের ছোট্ট স্থান) বলা হয়।। আবার কেউ কেউ বলে পবিত্র শহর।

কারাল নামটি এসেছে পেরুর সুপে উপত্যকায় অবস্থিত কারাল অঞ্চলের নাম থেকে। এইস্থানেই এই সভ্যতার সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্তূপটি আবিস্কৃত। খ্রিস্টজন্মের নয় হাজার বছর আগেই এই সভ্যতার সূচনা হয়। তবে খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার - আঠারোশো অব্দকে এই সভ্যতার সবচেয়ে বেশি বিকাশকাল বলে মনে করা হয়।

উত্তর-মধ্য পেরুর সমুদ্র উপকূলে এই সভ্যতার অন্তত ৩০টি কেন্দ্র খুঁজে পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে কারাল, আসপেরো, উয়ারিকাঙ্গা, কাবালেত, প্রভৃতি স্থলে খননকার্যের মাধ্যমে এই সভ্যতার প্রচূর নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে রয়েছে পাথরে তৈরি সম্ভাব্য বড় বড় মন্দিরের উঁচু প্ল্যাটফর্ম, বসবাসের জন্য তৈরি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ, বেশ কিছু ঢিবি, প্ল্যাটফর্মের উপর খাওয়াদাওয়ার চিহ্ন, হাড়ের তৈরি বেশ কিছু বাঁশি, প্রভৃতি। তবে নব্যপ্রস্তর যুগের এই সভ্যতায় ধাতুর ব্যবহার জানা ছিল না। 

এমনকি মৃৎপাত্র তৈরি বা ব্যবহারের কোনো নিদর্শনও এখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য থেকে এখানে যথেষ্ট জটিল একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্রিয়াকলাপের অস্তিত্ব পরিষ্কার বোঝা যায়। কালের বিচারে এই সভ্যতার সর্বোত্তম বিকাশের সময়টি ছিল পুরনো পৃথিবীর সুমের সভ্যতার থেকে হাজার বছর পরে, কিন্তু মিশরে যে সময়ে পিরামিডগুলো নির্মাণ হয়, তার সমসাময়িক। পশ্চিম গোলার্ধের অপর প্রাচীন সভ্যতা কেন্দ্র মেসোআমেরিকার থেকে এই সভ্যতা অন্তত ২০০০ বছর প্রাচীন।

পৃথিবীতে পৃথক-পৃথকভাবে সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছিল। পৃথিবীর এমন ছয়টি কেন্দ্রের অন্যতম ও আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে পুরনো নগরসভ্যতা এই কারাল সভ্যতার কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। সাধারণভাবে অত্যন্ত শুষ্ক এই অঞ্চলের বুক দিয়ে বয়ে গেছে সুউচ্চ আন্দিজ পর্বতমালা থেকে নেমে আসা প্রায় ৫০টি ছোট ছোট নদী। এদের ধার বরাবর প্রতিষ্ঠিত এই সভ্যতার কেন্দ্রগুলিরও মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। কিন্তু তারা চাষ করতো কোনও খাদ্যদ্রব্য নয়, মূলত তুলা।

সেই তুলা দিয়ে মাছ ধরার জাল তৈরি করে সরবরাহ করা হতো সমুদ্রতীরে অবস্থিত এই সভ্যতার কেন্দ্রগুলিতে। এই কেন্দ্রগুলিতে সংগৃহীত মাছ ও সামুদ্রিক নানা খাদ্যদ্রব্যই ছিল এই সভ্যতার মানুষের মূল খাদ্যদ্রব্য। জালের সঙ্গে মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক খাদ্যদ্রব্যের বিনিময়ই ছিল সেই অর্থে এই সভ্যতার ভিত্তি। অবশ্য সঙ্কীর্ণ নদী উপত্যকাগুলিতে কিছু ফল ও সব্জিচাষের নিদর্শনও পাওয়া যায়। এই ধরনের সভ্যতার অন্য কোনও প্রাচীন নিদর্শনের কথা এখনও পর্যন্ত জানা নেই।

আজ থেকে প্রায় ৩৮০০ বছর আগে ভূমিকম্প বা `এল নিনো জাতীয় কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে` এই সভ্যতার পতন ঘটে বলে মনে করা হয়। 

পেরুর একজন নৃবিজ্ঞানী ও প্রত্নতত্ত্ববিদ, ১৯৯৪ সালে কারালে খননকার্য চালান।  সে সময় একে একে আবিষ্কার হতে থাকে হাড়নির্মিত ৩২টি বাঁশি। ধারণা করা হয়ে থাকে এই সংস্কৃতিতে গানবাজনার যথেষ্ট প্রচলন ছিল। এছাড়াও একই অঞ্চলে ৩৭টি শিঙাজাতীয় বস্তুও খুঁজে পাওয়া গেছে, যা থেকে সুরাপানের বিষয়েও কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।

এই সভ্যতার নিদর্শন হিসেবে আবিষ্কার হয়েছে শস্য, ফল ও কন্দজাতীয় উদ্ভিদ। সেগুলো মূলত স্কোয়াশ, কয়েক রকমের বিনস, পেয়ারা, লুকুমা, মিষ্টি আলু প্রভৃতি।  এছাড়া ভুট্টা, মরিচ, মটরশুঁটি, লাউ এসব শস্য ও ফসল চাষের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে। 

সর্বশেষ
জনপ্রিয়