ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

২৫ মিনিটেই বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:১৪, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

২৫ মিনিটেই বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর

২৫ মিনিটেই বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর

পূর্বাচল থেকে মাত্র ২০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডেই জোয়ার সাহারার নতুনবাজার, আর ৪০ মিনিটেই মতিঝিল পৌঁছানো যাবে। এমন স্বপ্ন থেকেই দেশের প্রথম পাতাল রেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন নিয়ে মানুষের ছিল বিশেষ আগ্রহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কাজের উদ্বোধন করবেন। সে জন্য ছিল রূপগঞ্জবাসীর বাড়তি আগ্রহ। গত বৃহস্পতিবার উদ্বোধন উপলক্ষে পূর্বাচল চার নম্বর সেক্টরে সুধী সমাবেশ থাকলেও তা এক পর্যায়ে জনসমাবেশে রূপ নেয়। কিন্তু নিরাপত্তা ও সমাবেশস্থলে যোগদানে বিধিনিষেধের কারণে অনেকেই মূল সমাবেশস্থলে যেতে পারেননি। হাজার হাজার মানুষ আশপাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাতাল রেলের ভৌত অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার সাক্ষী হয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কুড়িল থেকে শুরু করে সমাবেশস্থল পর্যন্ত এবং আশপাশের সড়ক-উপসড়ক ছিল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী এবং পেশাজীবীদের ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুন-হোর্ডিংয়ে পূর্ণ। উৎসবের আমেজ ছিল রূপগঞ্জজুড়ে।

প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, এমআরটি-১ নামের এ প্রকল্পের জন্য ডিপো হবে রূপগঞ্জের পীতলগঞ্জে। কাঞ্চনে হবে প্রথম স্টেশন। সেটি গিয়ে মিলবে নতুনবাজারে। এটুকু হবে উড়াল সড়কের ওপরে। নতুনবাজারে গিয়ে এটি ভূগর্ভে প্রবেশ করবে। কারণ বিমানবন্দর থেকে আরেকটি মেট্রো রুট মাটির নিচ দিয়ে কমলাপুর যাবে। নতুনবাজারে এ দুটি লাইনের সংযোগ ঘটবে। ২০২৬ সালের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এটি চালু হলে প্রতিদিন ২৫টি ট্রেনে আট লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। প্রতিটি ট্রেনে আটটি বগি থাকবে। ৩ হাজার ৮৮ জন যাত্রী একটি ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন। ২৪ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর; কমলাপুর থেকে ৪০ মিনিটে পূর্বাচল এবং ২০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডে নতুনবাজার থেকে পূর্বাচলে যাওয়া যাবে।
এ প্রকল্পের কাজ ১২টি প্যাকেজের মাধ্যমে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্যাকেজ-১ এর আওতায় ডিপোর ভূমি উন্নয়ন করা হবে। অসমতল জমি ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রস্তুত করা হবে। সেখানেই হবে মেট্রোরেলের ডিপো। রূপগঞ্জের পীতলগঞ্জে প্রায় ৯৩ একর জমিতে ডিপো নির্মিত হবে। থাকবে বিদ্যুতের রিসিভিং সাব-স্টেশন। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কাজের উদ্বোধন করেন।

গত ২৩ নভেম্বর এই প্যাকেজের ঠিকাদারের সঙ্গে ৬০৭ কোটি টাকার চুক্তি স্বাক্ষর হয়। জাপানের টোকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড যৌথভাবে ভূমি উন্নয়নের কাজ করবে। ছয়টি জোনে ভূমি উন্নয়নের কাজ চলবে। এ জন্য স্ট্যাটিক সেন্ড কম্প্যাকশন পাইল, ডায়নামিক সেন্ড কম্প্যাকশন পাইল, প্রি-ফেব্রিকেটেড ভার্টিক্যাল ড্রেন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষে প্যাকেজ-২ এর আওতায় অবকাঠামো নির্মাণ এবং ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম স্থাপন করা হবে। এখানে ট্রেন সংরক্ষণ ও পরিচালনার যাবতীয় অবকাঠামো হবে।
এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ দেবে। বাকি ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকা জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার।
এমআরটি-১ এর ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার বিমানবন্দর-কমলাপুর অংশের ১২টি স্টেশনও নির্মিত হবে মাটির নিচে। স্টেশনগুলো হবে বিমানবন্দর, টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, নদ্দা, নতুনবাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, আফতাবনগর, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর। এ রুটের দূরত্ব হবে প্রায় ২০ কিলোমিটার।

টানেল বোরিং মেশিনে (টিবিএম) দুই দিক থেকে মাটির নিচে রেলপথ নির্মিত হবে। প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম ভুঁইয়া জানিয়েছেন, চারটি প্যাকেজে টানেল তৈরি হবে। সেগুলোর প্রাক-যোগ্যতার আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। এর পর হবে দরপত্র আহ্বান। ঠিকাদার নিয়োগের পর টানেল নির্মাণের কাজ হবে।

সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি টিবিএম দিনে ১০ মিটার সুড়ঙ্গ খনন করতে পারবে। সুড়ঙ্গ খননের সঙ্গে সঙ্গে কংক্রিট স্ল্যাব বসিয়ে তৈরি হবে টিউব। এর ভেতরে বসানো হবে ডাবল রেললাইন। সেই লাইন দিয়ে দু'দিকে চলবে ট্রেন। তবে স্টেশন তৈরি হবে ওপেন কাট পদ্ধতিতে। নির্মাণের পর মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে। স্টেশনে ওঠানামার জন্য থাকবে সিঁড়ি, লিফট ও এস্কেলেটর।

পীতলগঞ্জ থেকে কাঞ্চন হয়ে নতুনবাজার পর্যন্ত মেট্রোরেল লাইন তৈরি হবে ৩০০ ফুট সড়কের ওপর দিয়ে। এ জন্য আগেই সড়কটি মাঝখানে প্রয়োজনীয় জায়গা রাখা হয়েছে। এ রুটের দূরত্ব হবে ১১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার। স্টেশনগুলো হবে নতুনবাজার, নদ্দা, জোয়ার সাহারা, বোয়ালিয়া, মস্তুল, শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব, পূর্বাচল টার্মিনাল। পীতলগঞ্জে থাকবে ৯টি এলিভেটেড স্টেশন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখন কাঞ্চন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দুই ঘণ্টার কম সময়ে কখনও যাওয়া যায় না। আবার বিমানবন্দর যেতে এক ঘণ্টা লেগে যায়। এখন কাঞ্চন থেকে ৪০ মিনিটে মতিঝিল আর বিমানবন্দর থেকে ২৪-২৫ মিনিটে মতিঝিল যেতে পারলে মানুষের রাস্তার ভোগান্তি আর থাকবে না। তবে প্রকল্পের কাজ যেন দ্রুত শেষ হয়- সেটাই তাদের দাবি।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়