কুড়িগ্রামে নতুন বাণিজ্য সম্ভাবনা
নিউজ ডেস্ক
কুড়িগ্রামে নতুন বাণিজ্য সম্ভাবনা
বাণিজ্য সম্ভাবনা ও পারস্পরিক সম্পর্ক বাড়াতে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও ভুটানের সহযোগিতায় উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম হতে যাচ্ছে ‘ভুটানিজ বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল’। অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থান, যাতায়াতব্যবস্থা, সোনাহাট স্থলবন্দর, দুই দেশের আন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় আজ বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম সফরে যান ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক।দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন। খাতসংশ্লিষ্ট ও ব্যবসায়ীদের মতে, ভুটানিজ বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম দ্রুত চালু হলে এখানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বাণিজ্যিক হাব হবে।
একই সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।পরিদর্শন শেষে ভুটানের রাজা সড়কপথে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ভারত হয়ে ভুটানে প্রবেশ করবেন। স্বাধীনতার পর এটিই হবে কুড়িগ্রামে প্রথমবারের মতো কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের সফর।ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক গত ২৫ মার্চ চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসেন।
বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আওয়ামী লীগ সরকার গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর এটিই বাংলাদেশে কোনো দেশের শীর্ষ নেতার প্রথম সফর। তাঁর এই সফরে নতুন করে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সেগুলো হলো ভুটানের থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা, কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং অন্যটি ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতাবিষয়ক।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, ভুটানের রাজার কুড়িগ্রাম সফর বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তাঁর সফর এখানকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক বিকাশে মাইলফলক সৃষ্টি করবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে কুড়িগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জোন হিসেবে পরিচিতি পাবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।
শিল্পায়ন ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হলে আগামী এক দশকের মধ্যে কুড়িগ্রাম এই অঞ্চলের অন্যতম শীর্ষ জেলা হবে। সব মিলিয়ে অনন্য রোডম্যাপে উঠতে যাচ্ছে কুড়িগ্রাম। নদ-নদী ও চরাঞ্চল অধ্যুষিত এই জেলায় কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানাসহ শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। শুধু ভুটান ও বাংলাদেশ নয়, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম চালু হলে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের পাশাপাশি ভারতের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত অঞ্চলগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, ভুটান বাংলাদেশের একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র। এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে আরো পারস্পরিক সম্পর্ক বাড়বে। ভোগ্য পণ্যের দিক থেকে বাংলাদেশের বাজার অনেক বড়। সেই বাজারকে ভুটান কাজে লাগাতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ভুটানের কাছ থেকে বিদ্যুতে বিনিয়োগের একটি সুযোগ নিতে পারে। কারণ সেখানে বিদ্যুতে বিনিয়োগ করে কম খরচে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষর (বেজা) চেয়ারম্যান ইউসুফ হারুন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এরই মধ্যে ১৩৩.৯২ একর জমি বেজার কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। আরো ৮৬ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান। এখানে মোট ২১১ একর জমির প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, ‘আশা করি, এই অঞ্চল এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ত্বরান্বিত করবে।’
স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত আইনজীবী ও সমাজকর্মী এস এম আব্রাহাম লিংকন মনে করেন, এই বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে কুড়িগ্রাম জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে, পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থান।
তিনি বলেন, আগামী এক দশকে এই অঞ্চল নেতৃস্থানীয় জেলায় পরিণত হবে। ভুটান আসছে মানে এখানে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এটিকে ধরে জেলাটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বড় এভিনিউ হতে যাচ্ছে। তবে এর জন্য যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করতে হবে। রেল, নৌ, সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি চালু করে আকাশপথেও যোগাযোগ সহজ করতে হবে।
ভুটান অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে কুড়িগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল আজিজ মিয়া বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে কুড়িগ্রামের বেকারত্ব দূর হবে। বাইরে থেকে যদি বিনিয়োগ হয়, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা আসেন, তাহলে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’
জানতে চাইলে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সাইদুল আরিফ বলেন, ‘আরো ৮৬ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব আছে। ভুটানের অর্থনীতি যেহেতু কৃষিভিত্তিক, আশা করছি, এই অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক কারখানা গড়ে তুলবে। সবুজ অর্থনীতিতে তারা বিনিয়োগ বাড়াবে।’
অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে কুড়িগ্রাম বাণিজ্যিক হাব হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে এম জাকির হোসেন বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে কুড়িগ্রাম একটি বাণিজ্যিক হাব হবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও অর্থনৈতিক অঞ্চল নিবিড়ভাবে কাজ করবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক যেসব ইন্ডাস্ট্রি থাকবে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপে যুক্ত হবে। সব মিলিয়ে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার চিত্র ইতিবাচকভাবে বদলে যাবে।’
২০২৩ সালের মে মাসে লন্ডনে ভুটানের রাজা ও রানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সভায় কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রস্তাবিত ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনে জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে ধরলা সেতুর পূর্বে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কের পূর্ব পাশে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসন ও বেজা। এর আগে ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। এতে পিটিএর আওতায় ভুটানের বাজারে বাংলাদেশের ১০০টি পণ্য শতভাগ শুল্কমুক্তভাবে রপ্তানির সুযোগ পাওয়া যাবে। একইভাবে বাংলাদেশের বাজারে ভুটানের ৩৪টি পণ্য বিনা শুল্কে প্রবেশ করতে পারবে।
- Tk 12,500 announced as minimum wage for RMG workers
- মাছ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে সার্বিক সহযোগিতা করবে সরকার : মৎস্যমন্ত্রী
- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে থাকছে রেকর্ড সংখ্যক পর্যবেক্ষক
- PM opens Southeast Asia`s largest fertiliser factory in Narsingdi
- 2024 election was the fairest since 1975: PM
- দ্রুত এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর কাজ
- সুষ্ঠু নির্বাচনে সব সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি
- জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি
- কর্মসংস্থানের জন্য প্রতি ঘণ্টায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যান ১৫২ বাংলাদেশি
- মানবিক নারী পুতুল ও অটিস্টিক শিশুদের নতুন ভোর