ঢাকা, সোমবার   ২০ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

কোনো শক্তি আমাকে জনগণ থেকে দূরে সরাতে পারবে না

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ১০ মে ২০২৪  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সমালোচকদের উদ্দেশে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, ‘আমাকে জনগণ থেকে দূরে সরাতে পারবেন না। এই দেশের জনগণই আমার শক্তি। জনগণের কল্যাণে আমি কাজ করি, সেটা জনগণ বোঝেন, সে কারণে আমার সঙ্গে আছেন। আমি কাউকে পরোয়া করি না।গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দ্বাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনে সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন। সংসদ নেতার বক্তব্যের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি অডিও রেকর্ড সংসদে শোনানো হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন কর্তৃক অধিবেশন সমাপ্তির ঘোষণাটি পড়ে শোনান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করি।দেশের জনগণের প্রতি আমার আস্থা ও বিশ্বাস আছে। কাজেই ভোট করবেন সবাই, কথায় কথায় প্রশ্ন তুলবেন, সেটা হবে না। কে কোন দল করেন, দলের জন্মবৃত্তান্ত আগে জানবেন, তারপর সরকারের সমালোচনা করবেন। একমাত্র আওয়ামী লীগই দেশের কল্যাণে কাজ করছে।সে কারণেই টানা ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগ ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকে না। জনগণই ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে।’

তিনি বলেন, ‘দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে দেশের কল্যাণে যা যা করণীয়, তা করব। আমি কাউকে পরোয়া করি না।আমি জানি, আমার বাবার সঙ্গেও এমন করা হয়েছে। মাত্র সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় ছিলেন। এই সময়ে এমন কোনো কাজ নেই, যা তিনি করে যাননি। কিন্তু তার পরও তাঁর বিরুদ্ধে অনেক কথা বলা হয়েছে। কুৎসা রটানো হয়েছে, লেখা হয়েছে। তা-ও যখন পারেনি, তখন হত্যা করা হয়েছে। আর আমাকে তো বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি জনগণের জন্য কাজ করছি। জনগণ থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। দেশের কল্যাণে কাজ করছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতাসহ ১৫ আগস্ট ঘাতকের হাতে নির্মমভাবে নিহত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব শহীদকে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রয়াত স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে কেউ কেউ গণতন্ত্রের প্রবক্তা হয়ে গেছে। তারা কি গণতন্ত্র বোঝে? তাদের জন্ম কি গণতন্ত্রে হয়েছিল? সেনাছাউনি থেকে বের হয়ে দল করে। হ্যাঁ-না ভোট। হ্যাঁ-তে ভোট আছে, না-তে ভোট নাই। এটা ছিল তাদের গণতন্ত্র। তাদের কাছ থেকে শুনতে হয় গণতন্ত্রের সবক।’ তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের ক্ষমতার সময়ে হাজার হাজার সৈনিককে হত্যা করা হয়। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীর সৈনিকদের হত্যা করা হয়। ১৯টি ক্যু হয়েছিল সে সময়। পিতাহারা সন্তানের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী ছিল। জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসেছিল, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার যেন না হয়, সে জন্য ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। খুনিদের রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়। সে সময় বিচারের সংস্কৃতি ছিল না। এলিট শ্রেণি তৈরি করা হয়। আজকে ঋণখেলাপির কথা বলা হয়। এটা জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধভাবে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সেনা আইন ভঙ্গ করে রাষ্ট্রপতির ভোট করে। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া জিয়াউর রহমানের আমল থেকে শুরু। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করেছি, অনেক প্রতিকূল অবস্থায়। এরপর আবারও ’৮৮ সালে ভোটারবিহীন রাষ্ট্রপতি ভোট করলেন এরশাদ সাহেব। এর বিপরীতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরাই আন্দোলন করি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট করেছিলেন খালেদা জিয়া। ভোটারবিহীন ভোট। কিন্তু সেই ভোটে তিনি টিকতে পারেননি। জনগণের রুদ্ররোষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। এরপর বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলন করা কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়। পানির জন্য ঢাকা শহরে হাহাকার ছিল। বিএনপির এক নেতাকে পানির জন্য মানুষ দৌড়ানি দেয়।’

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানুষ বুঝতে পারে ক্ষমতা জনগণের কল্যাণের জন্য। ২০০১ সালের আগে আমার কাছে প্রস্তাব আসে, গ্যাস বিক্রির। আমি রাজি হইনি। তাই ক্ষমতায় আসতে পারিনি। এই নির্বাচনের আগে আমাদের নেতাকর্মীদের অত্যাচার করা হয়েছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি। সেনাবাহিনী তাদের বেঁধে নিয়ে নির্যাতন করেছে। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। বিএনপি আওয়ামী লীগের ওপর অত্যাচার করে। ছয় বছরের রজুফা, ফাহিমা, পূর্ণিমাকে ধর্ষণ করেছিল। তাদের মা-বাবা আওয়ামী লীগে ভোট দিয়েছিলেন, এটাই তাদের অপরাধ। কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, মমতাজ উদ্দিনসহ অনেককেই হত্যা করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল। এরপর নির্বাচন, ভুয়া ভোটার তৈরি করে ভোট করার প্রস্তুতি। এরপর জনগণ আন্দোলন করে। বাধ্য হয় ক্ষমতা ছেড়ে দিতে। এরপর খালেদা জিয়ার প্রিয় লোক ফখরুদ্দীনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করে। মঈন উ আহমেদকে সেনাপ্রধান বানায় ৯ জন অফিসারকে ডিঙিয়ে। কথা ছিল তাদের নির্বাচন দেবে। কিন্তু টালবাহানা করে। তারা গ্রেপ্তারসহ নানা অপকর্ম শুরু করে। আমি প্রতিবাদ করি। আমাকেও গ্রেপ্তার করে। এরপর খালেদা জিয়াকেও গ্রেপ্তার করা হয়। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বরে বিএনপির সমাবেশ থেকে পুলিশ রেহাই পায়নি। সাংবাদিকরাও রেহাই পাননি। প্রেস ক্লাবে ঢুকে সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। পুলিশকে হত্যা করেছে। প্রধান বিচারপতির বাড়িও রক্ষা পায়নি। প্রধান বিচারপতির কামড়ায় বিএনপির লাত্থি দেওয়ার অভ্যাস আছে।’

বিদ্যুৎ নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশ নাই ক্যাপাসিটি চার্জ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয় না। আজকে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। কেন বিশেষ আইন করলাম। আইন না করলে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ দেওয়া যায় না। আমি কিন্তু কাউকে ক্ষমা করিনি। প্রথম বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করে সামিট গ্রুপ। তারা দেরি করে। আমরা কিন্তু তাদের কাছ থেকে জরিমানা নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি। মুদ্রার স্ফীতি কমাতে সবাইকে উৎপাদন বাড়াতে হবে। সবর্জনীন পেনশন চালু করেছি। সাংবাদিক, বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য, এমনকি সবচেয়ে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত ও প্রবাসীদের জন্য এই কাজ হাতে নিয়েছি।’

সংসদ নেতা বলেন, ‘সামনে জুন মাসে বাজেট অধিবেশন বসবে। সেই অধিবেশনে আবার দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা যেন একটা ভালো বাজেট দিতে পারি,  সে জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’

সর্বশেষ
জনপ্রিয়