কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি ব্যয় নেমেছে অর্ধেকে
নিউজ ডেস্ক
কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি ব্যয় নেমেছে অর্ধেকে
দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা সাত হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। এসব কয়লার সিংহভাগই আমদানিনির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি ব্যয় অর্ধেকে নেমেছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের মার্চের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কয়লাভিত্তিক প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয় এখন গড়ে ৭ টাকা ৩০ পয়সার মতো।
বিপিডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চে পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি কিলোওয়াট উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয় ছিল ৬ টাকা ৩৪ পয়সা। চট্টগ্রামের বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এসএস পাওয়ারের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৬ টাকা ৮৮ পয়সা। ৭ টাকা ৩৫ পয়সা ছিল রামপাল ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। ওই সময় ভারত থেকে আমদানি করা আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি কিলোওয়াটে জ্বালানি ব্যয় পড়ে ৬ টাকা ৯২ পয়সা। এছাড়া বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৮ টাকা ৪৬ পয়সা এবং মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি ব্যয় পড়ে ৭ টাকা ৯২ পয়সা।
আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫ শতাংশ কমেছে। কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫০৫০ কিলোক্যালরি গ্রেডের প্রতি টন কয়লার দাম গড়ে ১১৫ ডলার। এ দামে দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় কয়লা পৌঁছে দিচ্ছে রফতানিকারকরা। আগে এ পরিমাণ কয়লা কিনতে লাগত ১৮০-১৯০ ডলার। ওই সময় বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছ থেকে বিপিডিবিকে ১৬-১৮ টাকায় প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে হয়েছে।
দেশে বর্তমানে চাহিদার ভিত্তিতে জাতীয় গ্রিডে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেয়া হচ্ছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে। ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় (পিক আওয়ার) ২৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেয়া হয় এসএস পাওয়ারের কাছ থেকে। একই দিন সন্ধ্যায় (পিক আওয়ার) মাতারবাড়ী থেকে নেয়া হয় ৪৫০ এবং রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নেয়া হয় ৫৮৬ মেগাওয়াট। ভারতের আদানি পাওয়ার থেকে নেয়া হয় সবচেয়ে বেশি, ১ হাজার ৩১২ মেগাওয়াট। এর বাইরে মাতারবাড়ী থেকে আসে ৪০০ মেগাওয়াটের বেশি।
আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় নিয়ে এর আগে নানা সমালোচনা হয়েছে। জ্বালানি ব্যয় ও ক্যাপাসিটি চার্জসহ নানা খরচ মিলিয়ে এসব কেন্দ্র থেকে ১৮ টাকার নিচে বিদ্যুৎ পাওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে জ্বালানি খরচ কমে যাওয়ায় এখন বিদ্যুতের দাম কম হবে বলে জানিয়েছেন বিপিডিবির কর্মকর্তারা।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকৃত সক্ষমতা ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট। ১৮ এপ্রিল পায়রা থেকে দিনের বেলায় পিক আওয়ারে ৭২০ এবং সন্ধ্যায় (পিক) বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ৬০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিচালনা করছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। যে কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয়ও কমে এসেছে। কয়লার বাজার স্থিতিশীল থাকলে পায়রা থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব।’
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৫০৫০ কিলোক্যালরি মানের কয়লা ব্যবহার হয়। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে ল্যান্ডিং কস্ট ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রতি টন কয়লার দাম পড়ছে গড়ে ১১৫ ডলার।
বিসিপিসিএল সূত্রে জানা গেছে, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি ব্যয়, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রশাসনিক ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মিলিয়ে বর্তমানে ইউনিটপ্রতি ব্যয় ৬ টাকা ৩৪ পয়সা। এর সঙ্গে ক্যাপাসিটি চার্জ যুক্ত হলে কিলোওয়াটপ্রতি বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় পড়বে ৯ টাকার মতো। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পায়রা থেকে প্রতি কিলোওয়াট/ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ছিল ১৬ টাকা ২ পয়সা। চলতি অর্থবছরে এ ব্যয় আরো অনেক কমে আসবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিপিডিবির সংশ্লিষ্ট বিভাগের দুজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার নিম্নমুখী দামের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয় সাশ্রয় হচ্ছে। দেশে বিদ্যুতের চাহিদায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর লিস্ট কস্ট জেনারেশনকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে পায়রা, রামপাল, এসএস পাওয়ার ও আদানির মতো কেন্দ্রগুলো থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে।
দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জ্বালানি ব্যয় কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ চলতি অর্থবছরে কম হতে পারে বলে জানিয়েছে বিদ্যুতের নীতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল। একই সঙ্গে কয়লা ও গ্যাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশি হওয়ায় বিপিডিবির ভর্তুকি ও আর্থিক গ্যাপ কম হওয়ার প্রত্যাশাও করে প্রতিষ্ঠনাটি।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘বিশ্ববাজারে গ্যাস ও কয়লার দাম কমে এসেছে। এ কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয় কমে এসেছে। সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্যটি আমদানি করা যাচ্ছে বিধায় গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে লিস্ট কস্ট জেনারেশনের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত বিদ্যুৎ নেয়া যাচ্ছে।’
মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আগে সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেত, এখন সেখান থেকে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। ফলে ব্যয়বহুল জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ব্যবহার কম হচ্ছে। এভাবে গ্যাস ও কয়লা থেকে বিদ্যুৎ নেয়া গেলে আগামীতে বিপিডিবির আর্থিক ঘাটতি কমে আসার পাশাপাশি ভর্তুকি কম লাগবে।’
- Tk 12,500 announced as minimum wage for RMG workers
- মাছ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে সার্বিক সহযোগিতা করবে সরকার : মৎস্যমন্ত্রী
- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে থাকছে রেকর্ড সংখ্যক পর্যবেক্ষক
- PM opens Southeast Asia`s largest fertiliser factory in Narsingdi
- 2024 election was the fairest since 1975: PM
- দ্রুত এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর কাজ
- সুষ্ঠু নির্বাচনে সব সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি
- জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি
- কর্মসংস্থানের জন্য প্রতি ঘণ্টায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যান ১৫২ বাংলাদেশি
- মানবিক নারী পুতুল ও অটিস্টিক শিশুদের নতুন ভোর