ঢাকা, শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

টেকসই উন্নয়নে অর্থনৈতিক অঞ্চল

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ৫ মে ২০২৪  

টেকসই উন্নয়নে অর্থনৈতিক অঞ্চল

টেকসই উন্নয়নে অর্থনৈতিক অঞ্চল

সকল অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণকাজ শেষ হলে দেশে শিল্পবিপ্লবের যাত্রা শুরু হবে। শত শত শিল্পকারখানা স্থাপিত হবে। পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে। ৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির পথ সুগম হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪১ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বাংলাদেশকে বিনিয়োগ হাবে পরিণত করতে দেশী-বিদেশীদের জন্য বিশেষ অঞ্চল রাখা হয়েছে। চীন ও জাপানের বিনিয়োগ বাড়াতে নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে দুটি অঞ্চল নির্মাণ হচ্ছে।

ভারতের জন্য থাকছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের একটি অংশ ও মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল। সৌদি আরব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে জিটুজি ভিত্তিতে একটি অঞ্চল করার প্রস্তাব দিয়েছে। আরও কয়েকটি দেশের জন্য জিটুজি অঞ্চল স্থাপনের আলোচনা চলছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক রূপান্তরে অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।

দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, উৎপাদন এবং রপ্তানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণে উৎসাহ প্রদানের জন্য পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর এলাকাসহ সম্ভাবনাময় সকল এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। বিনিয়োগে সকল ধরনের সুবিধা দিয়ে বড় পরিসরে পরিকল্পিত শিল্পায়নে যেতে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা শুরু হয় প্রায় এক যুগ আগে। বড় পরিসরে পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে ২০১০ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।২০১৪ সালে শুরু হয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মূল কাজ। উদ্দেশ্য ছিল ৭৫ হাজার একর জমিতে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করা। এরপর লক্ষমাত্রা বাড়িয়ে এক লাখ একর নির্ধারণ করা হয়।  প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, তা বাস্তবায়নের জন্য জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। বর্তমানে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬ বা ৭ শতাংশের মধ্যে। 
এ লক্ষ্য পূরণে পদ্ধতিগতভাবে সরকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা করা। একইসঙ্গে গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠা, আন্তঃবিভাগীয় রাস্তা নির্মাণ, প্রশস্তকরণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা, রেলযোগাযোগের উন্নতি সাধন প্রভৃতি।

সাধারণত, যেসব জেলার জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলনামূলক ভালো, সেই জেলাগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকার ফলে বেকারত্ব কম। অন্যদিকে, দরিদ্র জেলাগুলোতে শিল্পকারখানা কম থাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ কম এবং বেকারত্ব বেশি এবং উৎপাদনও তুলনামূলক কম। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে এসব অবহেলিত অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা খুবই জরুরি।বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশে মোট ৮টি ইপিজেড রয়েছে। এসব ইপিজেডে মোট শিল্পকারখানার ৫৮ শতাংশ বিদেশী নাগরিকের মালিকানাধীন। 
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ মোট ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে ১১টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল। ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বেজা সরকারি ৫৪টি, বেসরকারি ২৩টি এবং চীন, ভারত ও জাপানের জন্য ৪টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে। ভারতের স্পেশাল ইকোনমিক জোনের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা হচ্ছে প্রস্তাবিত স্থান।চীনের জন্য প্রস্তাবিত স্থান হলো চট্টগ্রাম এবং জাপানের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে শুরু হয়েছে। তাছাড়া কোরিয়ান ইকোনমিক জোনের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। এ পর্যন্ত বেসরকারি ১১টি অঞ্চলকে চূড়ান্ত সনদ দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে মেঘনা ইপিজেড, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইপিজেড, সিটি অর্থনৈতিক ইপিজেড, আবদুল মোমেন ইপিজেড, আমান ইপিজেড, বে-ইপিজেড, হোসেনদি ইপিজেড প্রভৃতিতে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া রয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট, সিরাজগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ ইপিজেড। 
বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সরকারি উদ্যোগে করা হয়েছে ৬টি। সেগুলো হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর, জামালপুর ইকোনমিক জোন, সারবাং ট্যুরিজম পার্ক, মহেশখালী ইকোনমিক জোন-৩ এবং শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোন। বাকিগুলো বেসরকারি এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে করা হচ্ছে। সুবিধাজনক স্থান নির্বাচন করতে পারাটাই হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিষয়। বাংলাদেশের ইকোনমিক জোনটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে এবং মেঘনা-গোমতী নদীর মোহনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা একদিকে যেমন নদীপথ ব্যবহার করতে পারবে, তেমনি মহাসড়কের মাধ্যমে সরাসরি বিমানবন্দর বা সমুদ্রবন্দরেও যেতে পারবেন। কানেকটিভিটি ভালো হওয়ায় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে যোগাযোগ স্থাপন সহজ হয়েছে। চীনের দুটি পাওয়ার সেক্টর কোম্পানির মাধ্যমে প্রায় ২৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে।

এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশ বাংলাদেশের স্পেশাল ইকোনমিক জোনগুলোতে ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইকোনমিক জোনগুলো প্রতিষ্ঠিত হলে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ৪ লাখ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করা সম্ভব হবে। 
ভুটান, উজবেকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এনার্জি সেক্টর, জাহাজনির্মাণ, অটোমোবাইল, ওষুধ তৈরি প্রভৃতি বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। তবে স্পেশাল ইকোনমিক জোন কার্যকর করার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সরবরাহ বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। একইসঙ্গে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও দূর করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের সঙ্গে পাশর্^বর্তী বাজারের পরিধি বৃদ্ধি পাবে।

বাজারের দোকানগুলোতে বিলাসী সামগ্রী বিক্রি হবে। বিভিন্ন ব্যাংক, ব্যাংকের বুথ স্থাপিত হবে এবং রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে। এতে করে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে, দোকানগুলোতে বিক্রি ও মুনাফা বৃদ্ধি পাবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে পাশর্^বর্তী জমির দাম বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। সুউচ্চ দালানকোঠা গড়ে উঠবে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলসহ মাগুরা, শরীয়তপুর প্রভৃতি অঞ্চলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক অথবা স্পেশাল ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা করলে জেলাগুলোতে জনগণের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখা সম্ভব হবে। 
বেজা বলছে, সকল অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণকাজ শেষ হলে দেশে শিল্পবিপ্লবের যাত্রা শুরু হবে। শত শত শিল্পকারখানা স্থাপিত হবে। পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে। ৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির পথ সুগম হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪১ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বাংলাদেশকে বিনিয়োগ হাবে পরিণত করতে দেশী-বিদেশীদের জন্য বিশেষ অঞ্চল রাখা হয়েছে।

চীন ও জাপানের বিনিয়োগ বাড়াতে নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে দুটি অঞ্চল নির্মাণ হচ্ছে। ভারতের জন্য থাকছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের একটি অংশ ও মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল। সৌদি আরব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে জিটুজি ভিত্তিতে একটি অঞ্চল করার প্রস্তাব দিয়েছে। আরও কয়েকটি দেশের জন্য জিটুজি অঞ্চল স্থাপনের আলোচনা চলছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক রূপান্তরে অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। 
শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি ও সহজ করে দেওয়া এবং সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করার মাধ্যমে এই রূপান্তর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। সেজন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রের সহায়ক নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, বিভিন্ন প্রণোদনা ও ভর্তুকি প্রদানের পাশাপাশি নিজেদের প্রতিযোগিতা সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে। ত্বরান্বিত করতে হবে সেবা দেওয়ার গতিকে।

অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা যাতে বেশি আগ্রহী থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। স্বচ্ছতা ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে। এসব বিষয় যথাযথভাবে নিশ্চিত করা না হলে অঞ্চলগুলো থেকে পুরোপুরি সুফল আসবে না। বর্তমানে যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে।

বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে উৎপাদনের জন্য বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যেসব কাঁচামাল আমদানি করবে, সেগুলো পরিবহন সহজ ও নিরাপদ করতে হবে। তাছাড়া নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা বাড়াতে হবে। প্রতিটি স্তরে সুশাসন নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি। 
চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই ও সীতাকু- এবং ফেনীর সোনাগাজী এলাকায় ৩০ হাজার একরজুড়ে গড়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। এটি দেশের প্রথম বড় আকারের পরিকল্পিত শিল্পনগর। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিল্পনগর হবে এটি। হালকা, মাঝারি ও ভারী পণ্য উৎপাদনের জন্য নগরটিকে আবার বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এই শিল্পনগরে ৫০০ একর ভূমিজুড়ে থাকবে বিজিএমইএ গার্মেন্ট ভিলেজ। বেপজা ইকোনমিক অঞ্চলকে দেওয়া হয়েছে ১১শ’ একর জমি।

দেশী-বিদেশী ১৪টি প্রতিষ্ঠান শিল্প স্থাপনের কার্যক্রম এখানে শুরু করেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে দেশী-বিদেশী যে বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, তার মধ্যে শুধু এ অঞ্চলেই এসেছে ২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৮ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। বেজার প্রত্যাশা, অন্তত ৩০ বিলিয়ন ডলারের বিনোয়োগ এখানে হবে। এতে ১৫ লাখ মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। দেশের পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে তিনটি ট্যুরিজম পার্ক স্থাপন করছে বেজা।

কক্সবাজারের মহেশখালীতে প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্ক এবং টেকনাফে এক হাজার জমিতে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক এবং ২৯১ একর জমিতে নাফ ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ করছে বেজা। এ সকল পার্কে পাঁচতারকা হোটেল, আকো-ট্যুরিজম, মেরিন অ্যাকুরিয়াম, সি-ক্রুজ, ভাসমান জেটি, শিশুপার্ক, পানির তলদেশে রেস্টুরেন্ট, ঝুলন্ত সেতুসহ বিনোদনের জন্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থাপনা থাকবে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০ কোটি ডলারের বিদেশী বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে পার্কগুলোতে। 
অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ভারত, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, জার্মানি, নরওয়ে প্রভৃতি দেশ থেকে বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এই ১৩টি দেশের ৩৮ প্রতিষ্ঠানের ৩০৯ কোটি ৪৩ লাখ ডলার বিনিয়োগ করার প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে চীন থেকে সবচেয়ে বেশি ৭০ কোটি ২৭ লাখ ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। ৪৯ কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়ে থাইল্যান্ড রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য ১৩ কোটি ৭৩ লাখ ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে।

বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানা স্থাপন করেছে। বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসা ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চীনের ৯টি, যুক্তরাজ্যের ৫টি, ভারতের ৪টি, অস্ট্রেলিয়ার ৪টি, জার্মানির ২টি, যুক্তরাষ্ট্রের ২টি, জাপানের ২টি, নেদারল্যান্ডেসের ২টি, সিঙ্গাপুরের ২টি। এ ছাড়াও নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের ১টি করে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগ প্রস্তাবের প্রায় ২০ শতাংশ এসেছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ এসেছে পেইন্ট ও কেমিক্যাল খাতে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ভোজ্যতেল পরিশোধন খাত। সবচেয়ে বেশি প্রস্তাব মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অঞ্চলে। এরপর রয়েছে আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল। 
অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সরকার বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন কাগজপত্রের অনুমোদন ব্যবসায়ীরা বেজার মাধ্যমে পাচ্ছেন। তুলনামূলক কম দামে বরাদ্দ, দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ, শিল্পবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ সুবিধা, ওয়ানস্টপ সার্ভিস থেকে বিভিন্ন সংস্থার ২৭ ধরনের ১২৫টি সেবা দেওয়া হচ্ছে। ২০ হাজার দক্ষ জনবল তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে।

সেখান থেকে বিনিয়োগকারীরা দক্ষ জনবল পাবেন। বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন হারে আয়কর অব্যাহতি, কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা, ভূমি উন্নয়ন কর অব্যাহতি, স্থানীয় সরকারের অন্তর্ভুক্ত কর, স্ট্যাম্প ডিউটি অব্যাহতি ও উৎসে কর অব্যাহতির পাশাপাশি বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধা, কাস্টমস প্রক্রিয়ার সহজীকরণ প্রভৃতি সুবিধা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এখন প্রয়োজন অবকাঠামোগত কানেক্টিভিটি।

যার ফলে, তৈরি পোশাক শিল্প, টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ, লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রকৌশল ইন্ডাস্ট্রিজগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিপণনের সুযোগ পাবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য বন্দর এবং সংশ্লিষ্ট সুবিধাগুলো আরও সহজ করা দরকার। ইকোনমিক জোন পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করলে প্রায় এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে। তবে ইকোনমিক জোনে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে কোয়ালিটি জব ক্রিয়েশনস, মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়