ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বোরোর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ২৭ এপ্রিল ২০২৪  

বোরোর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক

বোরোর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক

বগুড়ায় মাঠের পর মাঠ সোনালি ধানের শিষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। মৌ মৌ গন্ধে কৃষকের চোখেমুখে ছড়াচ্ছে হাসির ঝিলিক। ৪০ ভাগ ধানই কাটার উপযোগী হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে কেউ ধান কাটছে। আবার কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছে। ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। বৃষ্টি না থাকায় ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বগুড়ার কৃষকরা। জানা যায়, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় বগুড়ার ১২টি উপজেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩২ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সারা দেশে ধান-চালসহ বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদনের উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে বগুড়ার খ্যাতি রয়েছে। জেলার মাঠগুলো এখন সোনালি রঙে অপরূপ শোভা ছড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে বোরো মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাই কৃষকের মনে দোলা দিচ্ছে খুশির আমেজ। বগুড়া অঞ্চলে বর্তমানে বিপুল পরিমাণে শাকসবজির উৎপাদন শুরু হলেও কৃষি অর্থনীতির চাকা সচলে মুখ্য ভূমিকায় থাকে বোরো ধান। প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও বর্গা চাষি এবং কৃষি শ্রমিক মিলিয়ে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার সংগ্রাম চলবে মাসব্যাপী। জেলার বিভিন্ন উপজেলার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বোরো জমির ধান পেকে সোনালি রঙে শোভা ছড়িয়ে দুলছে। পাকা ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক-শ্রমিক। শ্রমিকের পাশাপাশি ধান কাটায় ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক যন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন ও রিপার মেশিন। জেলার শাজাহানপুর উপজেলার জামাদারপুুকর এলাকার কৃষক আবদুল বারিক জানান, নানা প্রতিকূলতার পরও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে এবার বোরো মৌসুমের শুরু থেকেই বৈরী আবহাওয়ার ধকল, তারপর দফায় দফায় কৃষি উপকরণের বাড়তি দাম গুনতে হয়েছে কৃষককে। তিনি সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে মিনিকেট জাতের ধান আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন ৭০ মণ ধান ঘরে তুলতে পারবেন। যদি বাজারে ধানের ন্যায্য মূল্য পান এতে তার খরচ বাদে লাভ হবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।

জেলার সোনাতলার হুয়াকুয়া গ্রামের কৃষক মুসা মন্ডল জানান, গত মৌসুমের চেয়ে এবার চাষাবাদে বিঘাপ্রতি আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। কৃষি উপকরণের বাড়তি দর আর বৈরী আবহাওয়ার ধকল থাকলেও শেষ মুহূর্তে কাক্সিক্ষত ফলন হয়েছে। এবার শ্রমিক মজুরি বেশি। এক বিঘা জমির ধান কাটতে ছয় থেকে সাত শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এতে প্রতি বিঘা জমির ধান ঘরে তুলতে শ্রমিক মজুরি দিতে হয় ৪ হাজার টাকা। তবে নতুন ধান হাটে তোলার পর ন্যায্য মূল্য পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফবিদুর রহমান ফরিদ জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩২ মেট্রিক টন। অর্জন হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ১৫০ হেক্টর। জেলায় চলতি মৌসুমে অন্তত ১২ থেকে ১৩ জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের ধান চাষ হয়েছে। বাকি জমিতে হাইব্রিড ও স্থানীয়সহ অন্যান্য জাতের ধান চাষ হয়েছে। বগুড়ায় এ পর্যন্ত ধান কাটার উপযোগী হয়েছে ২ থেকে ৩ শতাংশ। বৈশাখের শেষ সপ্তাহে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানান, বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়া, সহায়ক ধানের জাত নির্বাচন আর কৃষকদের আধুনিক কলাকৌশল প্রদান করায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলন হয়েছে। জেলার কিছু কিছু স্থানে বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। আশা করছি কৃষকরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাবেন। এবারও বগুড়ার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, বগুড়া কৃষি দেশজুড়ে পরিচিত। বগুড়ার মাটিতে সোনা ফলে। শুধু ধান নয় সব ফসলই বগুড়ায় বাম্পার ফলন হয়। বগুড়ার আলু সারা দেশে বিক্রি হয়। শাকসবজি সবই হয় বগুড়ায়। এবার সার ও সেচের কোনো ঘারতি না থাকায় বগুড়ায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে, যাতে কৃষকরা ধান বিক্রিতে সঠিক দাম পান। সে বিষয়ে জেলার সব উপজেলায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ধান কেনাবেচায় কোনো প্রকার অনিয়ম করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়