ঢাকা, শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে জমি সংকটের বাধা কাটল

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০৯, ৪ মে ২০২৪  

বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে জমি সংকটের বাধা কাটল

বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে জমি সংকটের বাধা কাটল

চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা কেটেছে। জমির সুরাহা হয়ে গেল। অবশেষে প্রতীকী মূল্যে ৫০১ একর খাস জমি পাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর।জমির প্রতীকী মূল্য হিসেবে তিন কোটি তিন টাকা জমা দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে পৃথক তিনটি চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ৩০ এপ্রিল জেলা প্রশাসন থেকে পাঠানো এই চিঠি বৃহস্পতিবার বন্দর কর্তৃপক্ষ বুঝে পেয়েছে।চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, সাগর উপকূলে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য মোট ৮৭০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন ছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে ব্যক্তিমালিকানাধীন ৬৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে। আরও ৮০৩ একর ভূমি বরাদ্দ পেতে ২০১৪ সাল থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জেলা প্রশাসন তাদের অধিগ্রহণ করা জমির মূল্য নির্ধারণ করে তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ ভূমির জন্য এই বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয়ের পরিবর্তে প্রতীকী মূলে তা পাওয়ার চেষ্টা করছিল। এ নিয়ে মতৈক্য না হওয়ায় জেলা প্রশাসন শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দ্বারস্থ হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় ১০ বছর পর আরও প্রায় ৫০১ একর জমি বুঝে পাচ্ছে বন্দর। এ নিয়ে মোট ৫৬৭ একর জমি হাতে পাচ্ছে বন্দর। প্রকল্পে আরও প্রায় ৩০০ একরের মতো জমি লাগবে। সেই জমির সংস্থান এখনও হয়নি।

জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘বন্দর কর্তৃপক্ষকে ৫০১ একর জমির জন্য টাকা জমা দিতে ইতোমধ্যে চিঠি দেয়া হয়েছে। টাকা জমা দেয়ার পর ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বন্দোবস্ত দলিল স্বাক্ষর হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, জমি বন্দোবস্তের জন্য টাকা জমা দেয়া হবে। এছাড়া প্রায় ৩০০ একর জমি বরাদ্দ পেতে প্রক্রিয়া চলছে।

সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহেল জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় বে-টার্মিনাল প্রকল্পে সরাসরি ৮০০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসতে পারে।

বে-টার্মিনাল প্রকল্পের দুটি কন্টেইনার টার্মিনাল, একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এবং একটি তেল ও গ্যাস টার্মিনাল সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।

এক দশক ধরে ব্যবসায়ীরা বে-টার্মিনাল প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছেন। নতুন এই প্রকল্পে বন্দরের সেবা বর্তমানের তুলনায় অনেক বাড়বে। সেখানে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা বড় জাহাজ ভেড়ানো যাবে। কন্টেইনার ও পণ্য খালাস করে শহরে না ঢুকেই তা দেশের অন্যত্র নেয়া যাবে। সে সুবাদে বন্দর ব্যবহারের খরচ কমবে। আর সেজন্য ব্যবসায়ীরা এই বে-টার্মিনাল প্রকল্পকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বে-টার্মিনালে প্রাথমিকভাবে তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে একটি এক হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার টার্মিনাল, একটি ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার টার্মিনাল এবং একটি দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। তিনটি টার্মিনালের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার।

মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই টার্মিনালে জেটি থাকবে ছয়টি।

বাকি দুটি টার্মিনাল সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল ও আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড নির্মাণ এবং পরিচালনা করবে। এজন্য প্রতিষ্ঠান দুটি ১৫০ কোটি ডলার করে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে।

আবুধাবি পোর্টস আরেকটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হতে পারে। নৌপথ তৈরিতে ৫৯ কোটি ডলার বিনিয়োগ পাওয়ারও প্রক্রিয়া চলছে।

এছাড়া বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে ইস্ট কোস্ট গ্রুপ ৩৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগে তেল ও গ্যাসের টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘জমি নিয়ে যে জটিলতা ছিল তা কেটে গেছে। জেলা প্রশাসন প্রতীকী মূল্যে জমি দিতে রাজি হওয়ায় সৃষ্ট জটিলতার অবসান হয়েছে বলা যায়। শিগগির চাহিদা মোতাবেক টাকা পরিশোধ করা হবে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়