ঢাকা, রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী

সংকটেও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশ রোল মডেল

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ৬ মে ২০২৪  

সংকটেও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশ রোল মডেল

সংকটেও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশ রোল মডেল

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘‌বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক রাজনীতিসহ নানা সমস্যার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থনীতি, সামাজিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব সূচকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। এখন বাংলাদেশের উন্নয়ন অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য রোল মডেল।’

গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ‘‌ফার্স্ট ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ঢাকা’য়  এসব কথা বলেন তিনি। ‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে উন্নয়নের পথ অনুসন্ধান’ (নেভিগেটিং ডেভেলপমেন্ট পাথওয়েজ ইন ইভলভিং গ্লোবাল অর্ডার) শীর্ষক দুদিনব্যাপী এ সম্মেলন আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ ও বণিক বার্তা।

আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসেকা আয়েশা খান বক্তব্য রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রথম অধিবেশনে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ ও সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার বলেন, ‘‌বিশ্বের অনেক দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক দেউলিয়া হওয়া, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, দরিদ্রতাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশকে এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছরে একটি নীতিকাঠামো ঠিক করেছিলেন সোনার বাংলা গড়ার। এখনকার বিশ্বে অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু তনয়ার নেতৃত্বে এসব সমস্যা মোকাবেলা করছি এখন।’

শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘‌বিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে উন্নয়নের পন্থাগুলো নিয়ে সবাই শঙ্কিত। দ্রুত বৈশ্বিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে। সে বিষয়গুলোর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করছে সব দেশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সেটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। এর মধ্যে বাংলাদেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে। কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, আমরা সে জন্য উত্তম পলিসি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসেকা আয়েশা খান বলেন, ‘‌জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা বিনির্মাণ, যেখানে জনগণ স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি ও মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে দেশের আর্থসামাজিক খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌বৈশ্বিক ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে প্রবৃদ্ধি উন্নয়নে বাংলাদেশের শক্তিশালী ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। জনশক্তি, পর্যাপ্ত রফতানি, রেমিট্যান্সের স্বাভাবিক প্রবাহ এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা প্রায় এক দশক ধরে সামগ্রিক অর্থনীতির গতিপ্রবাহকে ত্বরান্বিত করেছে। বাংলাদেশ আগেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে, শিগগির স্বল্পোন্নত দেশে রূপান্তর ঘটবে।’ এছাড়া দেশে যে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে তা তার আলোচনায় উঠে এসেছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘‌আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তার সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের উদ্যোগ বাড়াতে হবে। বৈশ্বিকভাবে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে, এটাকে এক্সপ্লোর করতে হবে। এজন্য আমাদের অর্থনৈতিক কূটনীতি দক্ষতা বাড়াতে হবে। এমনকি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার রুল বেইজড সিস্টেমে আমাদের যে সুবিধা প্রদান করা হবে তার সেফ গার্ড নিশ্চিত করতে হবে।’

সম্মেলনে সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক খান বলেন, ‘‌বিশ্বের কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রগুলো সুশাসনের অভাবে সংকটের মধ্যে পড়েছে। ২০ বছর ধরে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ, তার বিপরীতে ইচ্ছেমতো ব্যয়, অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে কর্তৃত্বপরায়ণ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে রয়েছে। আমাদের এখন সুশাসনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সবচেয়ে কম দামে কীভাবে সবচেয়ে মানসম্পন্ন অবকাঠামো তৈরি করতে পারি, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বাথের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর রিসার্চ ড. জো ডিভাইন বলেন, ‘‌বাংলাদেশের মতো দেশে কিছু জেলায় দারিদ্র্য হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু কিছু জেলা ধীরে ধীরে আরো বেশি দরিদ্র হচ্ছে। এর বড় কারণ হচ্ছে, এখানে অধিকার হিসেবে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় না, আনুকূল্য হিসেবে দেয়া হয়।’

নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল স্টাডিজের রেক্টর ড. আর আর গ্যানজিভোর্ট বলেন, ‘‌ডিজিটাল উন্নয়ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে জটিল পর্যায়ে রয়েছে। এটা শুধু উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশে নয়, পৃথিবীর সর্বত্র একই অবস্থা বিদ্যমান। এ জটিলতর পরিস্থিতি শুধু শহর কিংবা গ্রামে নয়, দুই জায়গায় সমানভাবে বিচরণ করছে।৷আমাদের কাজ হচ্ছে এ আপাতবৈরিতাকে মোকাবেলা করা। এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আমাদের দক্ষতাকে ব্যবহার এবং অপ্রয়োজনীয় ক্ষতি হ্রাস করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘‌অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণ এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সামাজিক-আঞ্চলিক সংঘাতসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ সম্মেলন বিভিন্ন দেশের শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের জন্য এক্ষেত্রে একটি কমন প্লাটফর্ম তৈরি করবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাশেদ আল তিতুমীর বলেন, ‘‌বিশ্বের উন্নয়ন মডেল নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হবে। কীভাবে আমরা বিশ্ব মঞ্চে আমাদের অবস্থান তৈরি করতে পারি, এটা নিয়ে কাজ করছি আমরা। প্রজন্মের মধ্যে এ আলোচনা চলছে। উয়ারী-বটেশ্বরের সর্বশেষ আবিষ্কার আমাদেরকে উৎসাহিত করছে।’


সর্বশেষ
জনপ্রিয়