ঢাকা, শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

আধুনিক স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:১৫, ৫ মে ২০২৪  

আধুনিক স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ

আধুনিক স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ

কিশোরগঞ্জ শহরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা এক সময়ের খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর তীরে আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদ।এ মসজিদটি নানা ধরণের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে বিখ্যাত।

তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদটিতে একটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে। মসজিদ কমপ্লেক্সটি ৩ একর ৮৮ শতাংশ জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭৯ সালের ১০ মে থেকে ওয়াকফ্ স্টেট মসজিদটি পরিচালনা করছে। সাধারণত প্রতি চার মাস পরপর মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়। প্রতিবার দানবাক্স খোলার পর কোটি কোটি টাকা পাওয়া যায়। এ ছাড়াও আরো পাওয়া যায় ডলার, ইউরো, সৌদি রিয়েল, ইয়েন, দিনারসহ ইত্যাদি বিদেশি মুদ্রা। বিভিন্ন সময়ে স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে মসজিদের দান বাক্স থেকে।

জনশ্রুতি আছে যে, পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদের কাছে স্থির হন এবং তাকে ঘিরে আশেপাশে অনেক ভক্তকুল সমবেত হন। এ পাগলের মৃত্যুর পর তার সমাধির পাশে পরবর্তীতে এই মসজিদটি গড়ে উঠে তাই কালক্রমে এটি পাগলা মসজিদ নামে পরিচিত হয়। 

মসজিদটি শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীর কাছেই নয়, সকল ধর্মাবলম্বীর কাছে অত্যন্ত পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত। এই মসজিদ সম্পর্কে অনেকের বিশ্বাস এই যে, সহি নিয়তে এ মসজিদে দান খয়রাত করলে তার মনের ইচ্ছা পূর্ণ হয়। এটি কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকায় অবস্থিত।

পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মসজিদ। তিন তলা বিশিষ্ট মসজিদটিতে একটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে। মসজিদ কমপ্লেক্সটি ৩ একর ৮৮ শতাংশ জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭৯ সালের ১০ মে থেকে ওয়াকফ্ স্টেট মসজিদটি পরিচালনা করছে।

জনশ্রুতি অনুসারে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক হয়বতনগর জমিদার বাড়ির ঈসা খাঁ-র বংশধর দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর পাগলা সাহেব নামক একজন আধ্যাতিক ব্যক্তি নরসুন্দা নদীর তীরে বসে নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে স্থানটিতে মসজিদটি নির্মিত হয়। জিল কদর পাগলার নামানুসারে মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’হিসেবে পরিচিতি পায়।

অপর জনশ্রুতি অনুসারে, তৎকালীন কিশোরগঞ্জের হয়বতনগর জমিদার পরিবারের ‘পাগলা বিবি’র নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয়। 

কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার জংগল বাড়ি ছিল বাংলার বার ভূঁইয়ার প্রধান মসনদে আলা ঈশা খাঁ’র ২য় রাজধানী। তারই ৫ম তম অধস্তন বংশধর হয়বৎ খাঁ  জংগলবাড়ি থেকে এসে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার এক কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে বসতি স্থাপন করেন ও  নিজ নামের সঙ্গে মিল রেখে এলাকার নামকরণ করেন হয়বতনগর।

হয়বত খাঁর তৃতীয় বংশধর ছিলেন মাসুদ খাঁ, এবং মাসুদ খাঁর তৃতীয় পুত্র দেওয়ান জুলকদর খাঁ বা জুলকরণ খাঁ (পাগলা সাহেব )। জুলকরণ খাঁ একজন ওলি ছিলেন। তিনি প্রথমে হয়বতনগরে তার নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় ঘরটিতে বসে ইবাদত বন্দেগী করতেন সেটি ছিল ইবাদত খানা বা হোসনে দালান। এক গম্বুজ বিশিষ্ট হোসনে দালালটির মূল নকশা ঠিক রেখে, কেবলা নিদর্শন করে ও একটি মিম্বর তৈরি সহ সংস্কার করে মসজিদে রূপান্তরিত করেন।

এটি কিশোরগঞ্জের সর্ব প্রথম মসজিদ বলে মনে করা হয়। মসজিদের সামনেই রয়েছে হয়বৎ খাঁ পরিবারের পারিবারিক কবরস্থান। হয়বতনগর আলীয়া মাদরাসার পশ্চিমে অর্থাৎ বড় গোরস্থানের মাঝামাঝি পশ্চিমে অবস্থিত যে কবরস্থানটি রয়েছে সেখানেই চির নিদ্রায় শায়িত আছেন যুগের শ্রেষ্ঠ সুফী সাদক জুলকদরখাঁ ওরফে পাগলা সাহেব। পাগলা সাহেব একজন আধ্যাতিক জগতের মানুষ ছিলেন বলে জমিদারি রেখে নরসুন্দা নদীর পাড়ে একটি হুজরাখানা ও ছোট আকারে মসজিদ নির্মাণ করে সেখানে সর্বদা অবস্থান করতেন ও ইবাদতে মশগুল থাকতেন। যা আজ পাগলা মসজিদ নামে পরিচিত। বিগত শতকের শেষাংশেও এই মসজিদটি অনেকে প্রত্যক্ষ করেছেন।

পাগলা মসজিদটি ঘিরে আজ কোটি কোটি টাকার মানত আসে। এই মসজিদের আয়ের একটা অংশ  আশেপাশের অন্যান্য  মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা সহ বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবামূলক খাতে ব্যয় করা হয়। এছাড়া ২০০২ সালে মসজিদের পাশে একটি হাফেজিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ক্যান্সার, কিডনি রোগে আক্রান্ত দরিদ্র ব্যক্তিদেরও এই তহবিল থেকে সাহায্য দেয়া হয়।

বর্তমানে লেকসিটি প্রকল্পের আওতায় পাগলা মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদী খনন, দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ, মসজিদের শোভাবর্ধন এবং রঙিন আলোকসজ্জার জন্য দিনে ও রাতে মসজিদটি দেখতে চমৎকার লাগে। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ মসজিদটি দেখতে ভিড় জমান। 

বিশেষত জুমার নামাজের সময় অত্যাধিক মানুষের সমাগমে মসজিদসহ আশে পাশের রাস্তা ঘাট পরিপূর্ণ হয়ে যায়। মুসল্লিদের সুবিধার্থে মসজিদের পরিসর আরো বিস্তৃত করতে মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্সের জন্য ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়ন হলে ৫০ হাজার মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন বলে জানা গেছে। 

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়