ঢাকা, শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

ইমান আমল ক্ষুণ্ন করা উচিত নয়

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:২০, ২১ এপ্রিল ২০২৪  

ইমান আমল ক্ষুণ্ন করা উচিত নয়

ইমান আমল ক্ষুণ্ন করা উচিত নয়

গুনাহ করার পর খাস দিলে তওবা করতে হয়। অর্থাৎ অনুতপ্ত হয়ে ওই গুনাহ একদম ছেড়ে দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে না করার দৃঢ় অঙ্গীকার নিতে হয়। সাবধান! বারবার কবিরা গুনাহ যেন না করা হয়। কারণ বারবার করার পর আল্লাহতায়ালা যদি তওবা কবুল না করেন, কিংবা তওবা করার তৌফিকই না হয়, তাহলে তো দুনিয়া ও আখেরাত উভয় বরবাদ হবে। সামান্য টাকা-পয়সা খ্যাতির জন্য মূল্যবান ইমান-আমলকে নষ্ট না করাই হলো বুদ্ধিমানের কাজ।

আমরা গুনাহ করার সময় আল্লাহকে ভয় করি না, কিন্তু ওস্তাদ, পিতা-মাতা, পুলিশ ও মাস্তানকে ভয় করি। যিনি মহান মালিক, সৃষ্টিকর্তা, বিশ্ব জাহানের অধিপতি আমরা তাঁকে ভয় করি না। এটা কি বুদ্ধিমানের কাজ? সমাজে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের দায়িত্ব কী? তাদের কাজের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী? তাদের আখলাক ও আমল কেমন হওয়া উচিত, বিষয় সম্পর্কে তারা বেখবর থাকে। নিজেরা নিজেদের মান-মর্যাদার ব্যাপারে খবর না রাখলে কে রাখবে? আমি এ সম্পর্কে ‘তাবলিগের পথ ও পাথেয়’ নামক বইয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। মজলিসে দাওয়াতুল হকের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়েছে এটি। আইম্মায়ে মাসাজিদের জন্য খুবই প্রয়োজন এসব বই পড়া এবং নিজের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা।

আমাদের মসজিদগুলো আজ বাজারে পরিণত হচ্ছে। শুক্রবারে নামাজ পড়তে এলে মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির পরিবর্তে আলাপের বাজার বসিয়ে দেয়, হইহুল্লোড় করে। ইমাম সাহেবদের দায়িত্ব, বয়ানের মাধ্যমে তাদের বোঝানো। আমি গুলশানের খতিব হওয়ার আগে ওই মসজিদে কমিটির মিটিং হতো। প্রথম জুমা পড়িয়ে যখন শেষ করলাম তখন দেখি মানুষকে সরিয়ে দিয়ে চেয়ার-টেবিল আনা শুরু হচ্ছে মিটিং করার জন্য। মানুষ সুন্নত শেষ করেনি অথচ তারা মিটিংয়ের আয়োজনে ব্যস্ত। দেখলাম, বাইরে দাঁড়ানো বেনামাজি লোকেরা এসে চেয়ার-টেবিলে বসতে শুরু করল। সবচেয়ে অবাক কান্ড হলো হঠাৎ দেখি দুজন মহিলাও মসজিদে প্রবেশ করছে মিটিং করার জন্য। তারাও নাকি কমিটির সদস্য। কিছুক্ষণ পরে চা-বিস্কুট, পান-সিগারেটেরও আগমন ঘটল। আমি ভারাক্রান্ত মনে মসজিদ থেকে বেরিয়ে চলে গেলাম। বাইরে আমাকে একজন মুসল্লি মন খারাপ অবস্থা দেখে বলল, হুজুর! আমরা ক্ষমাপ্রার্থী, মন খারাপ করে চলে যাবেন না।

এটা বারো আউলিয়ার জায়গা; আপনি চলে গেলে নিরেট অজ্ঞদের আড্ডাখানায় পরিণত হবে। আপনিই পারবেন এই করুণ অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ দিতে। আলহামদুলিল্লাহ, আজ সেখানে গেলে দেখতে পাবেন, হাজার হাজার মানুষ নামাজ পড়ছেন, কোনো আওয়াজ নেই, ঝামেলা নেই, অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশ! এগুলো বলার উদ্দেশ্য অহংকার প্রকাশ নয়, বরং আমি বোঝাতে চাচ্ছি যে; আমরা যদি এভাবে হিম্মতের সঙ্গে চেষ্টা করি তাহলে মসজিদ আড্ডাখানায় পরিণত না হয়ে জান্নাতি পরিবেশ ধারণ করবে।

মসজিদে সালাম-কালাম নিষেধ। নিয়ম হলো- সুন্নত তরিকায় মসজিদে প্রবেশ করে ইতিকাফের নিয়তে অবস্থান করে নামাজ, জিকির আসকার ও তেলাওয়াত করা। অনেক মসজিদে দেখা যায় ইমাম সাহেব মুসল্লিদের সঙ্গে সালাম-মুসাফাহা করছেন। (খতিব হলে তো কোনো কথাই নেই) জোরে আওয়াজ করছেন, মুসাফাহার জন্য লাইন ধরে আছে, মুসল্লিদের নামাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে, আরও কত কিছু।

মসজিদে এসব কাজ করে মানুষের ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি করা খুব অন্যায় কাজ। আমাদের দেশের অধিকাংশ ইমাম সাহেব শুধু হাফেজ, কারি, আলিয়ার ছাত্র, নয়তো কওমি মাদরাসার দুর্বল ছাত্র-শিক্ষক, তাদের জরুরি মাসয়ালা-মাসায়েল না জানার কারণে আজ এ ব্যাপারগুলো ঘটছে। ইমাম, মুসল্লি ও এলাকার মানুষদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর মাসয়ালা-মাসায়েল কমপক্ষে তাদের অবশ্যই জানা থাকা প্রয়োজন। নামাজ সহিহ হওয়ার মতো তেলাওয়াত ও অন্যান্য জরুরি মাসয়ালা অন্তত তাদের জানা থাকা চাই। যাদের ক্ষেত্রে এগুলো সম্ভব হবে না তাদের জন্য উচিত নয় ইমামতি করা। কারণ, অশুদ্ধ তেলাওয়াত করে, ভুল মাসয়ালা বলে নিজের ও মুসল্লিদের নামাজ নষ্ট করার কোনো অধিকার তার নেই। অনেক ইমাম সাহেব বিভিন্ন কারি সাহেবদের তেলাওয়াতের সুর ও ঢং নকল করে নামাজে পড়ে থাকেন। দেখা যায়, নকল করার কারণে অক্ষরের উচ্চারণ ও তাজবিদের কায়দায় ভুল হচ্ছে। নামাজ তো শুধু আল্লাহকে দেখানোর উদ্দেশ্যে হওয়া চাই, মানুষকে শোনানো ও দেখানোর দ্বারা তো প্রকৃত ফায়দা পাওয়া যাবে না।

আল্লাহতায়ালা আপনাকে যে কণ্ঠ বা সুর দিয়েছেন সে কণ্ঠেই পড়া উচিত, নকল কণ্ঠে পড়া ঠিক নয়। যদি কেউ একা একা মশক করার উদ্দেশ্যে পড়তে চায় তাহলে তা ঠিক আছে কিন্তু নামাজে চিন্তা করে করে অন্যের সুর দিয়ে পড়বে তা কখনো ঠিক হতে পারে না। অনেক ইমাম সাহেবের কিরাতে সমস্যা থাকে যার দরুন তাদের পেছনে নামাজ পড়তে মন চায় না।

হাদিস শরিফে এসেছে, কেয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে বিচার সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত তিন প্রকারের লোককে মেশক আম্বরের পাহাড়ের কাছে রাখা হবে, যাতে তারা হাশরের মাঠের ভয়াবহতায় প্রকম্পিত না হয়।

তন্মধ্যে হয়তো এক প্রকারের লোক হলো ওইসব ইমাম সাহেব যারা বিশুদ্ধ তেলাওয়াতের দ্বারা নামাজ পড়ায় এবং মুসল্লিরা তাদের সব কাজে সন্তুষ্ট। আল্লাহপাক আমাদের সহিহ সমঝ দান করুন!

সর্বশেষ
জনপ্রিয়