ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

ঈদ ঘিরে চাঙ্গা অর্থনীতি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:১৬, ৮ এপ্রিল ২০২৪  

ঈদ ঘিরে চাঙ্গা অর্থনীতি

ঈদ ঘিরে চাঙ্গা অর্থনীতি

সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির অবস্থা নাজুক। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে শিল্পকারখানায় উদপাদন কমেছে; ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। দেউলিয়া থেকে বাঁচতে একাধিক ব্যাংককে একত্রিত করা হচ্ছে। গ্রাহকরা ব্যাংকের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। সংসারের অর্থের টানাপড়েনে বেহাল দশায় মানুষ। সংসারে বিলাসিতার খরচ কমিয়ে দিয়ে খেয়ে-পরে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। এমনকি নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে খাবারও কমিয়ে দিয়েছে। বৈদেশিক ঋণগ্রস্ত রাষ্ট্রের মানুষের যখন ত্রাহি অবস্থা তখন ঈদকে কেন্দ্র করে গতিহীন অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও গতি ফিরেছে। সর্বত্রই লেনদেন বাড়ছে। ঈদে কেনাকাটা, যাতায়াত, জাকাত-ফেতরা, রেমিট্যান্স, বেতন-বোনাস সবখানে টাকার প্রবাহ বেড়েছে। ব্যাংকে লেনদেন বেড়েছে এবং টাকার হাতবদল হচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতির কশাঘাত এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলেও ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা করছেন। ফলে কিছুটা হলেও দেশের অর্থনীতি ঈদকে ঘিরে চাঙ্গা হয়েছে।জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। রোজার ঈদে টাকার প্রবাহ সবচেয়ে বেশি বাড়ে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই টাকা পোশাক, ভোগ্যপণ্য, শৌখিনতা ও ভ্রমণসহ বিনোদনমুখী খাতে বেশি হচ্ছে, যা বড় ভূমিকা রাখে অর্থনীতিতে। তিনি বলেন, উৎসব অর্থনীতির আকার, ধরন ও ব্যাপ্তি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। মানুষ এই উৎসব ঘিরে প্রচুর পরিমাণ অর্থ খরচ করেন। এতে উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, ব্যবসায়ী প্রত্যেকে কিছু না কিছু লাভবান হচ্ছেন। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় কমতে থাকা, ডলার সঙ্কট, রিজার্ভে টান, মিশ্র রফতানি প্রবৃদ্ধি, রাজস্ব আয়সহ আর্থিক খাতের সব সূচকই নিম্নমুখী। নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের পরও মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আসা রেমিট্যান্স, বেতন-বোনাস ও ব্যক্তিগত তহবিলের টাকার ব্যবহার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পাশাপাশি জাকাত-ফিতরা থেকে বড় অঙ্কের অর্থ মেলায় অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উৎসবকে ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দেশের অর্থনীতি। তাই শেষ সময়ে ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরেছে। আশা করা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ বেচাকেনায় গতি ফিরবে অর্থনীতিতে। যদি সরকারিভাবে অন্যান্য উৎসবকে কেন্দ্র করে যেভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায় ঈদকেন্দিক সেই ধরনের কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি।

এবারের ঈদে সারাদেশে অন্তত ২ লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এই বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনমান উন্নত হওয়ায় তাদের ভোগব্যয় ও কেনাকাটা বাড়ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন উৎসবকেন্দ্রিক এই বাণিজ্য দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধসহ নানা কারণে চাপে থাকা ব্যবসা-বাণিজ্যে আবার গতি ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত মার্চে দেশে রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) এসেছে ১ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় কম হলেও এর বেশি এসেছে ঈদকেন্দ্রিক। যদিও বেতন-বোনাস-রেমিট্যান্সই নয় ঈদুল ফিতরের অর্থনীতির সাথে যুক্ত হয়েছে বিত্তশালীদের প্রদত্ত জাকাত ও ফিতরার টাকা। এবার ধনীদের কাছ থেকে জাকাত ও ফিতরার রেকর্ড পরিমাণ টাকা অর্থনীতিতে যোগ হবে বলে আশা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, ঈদ অর্থনীতিতে এ বছর নতুন মাত্রা যোগ করবে জাকাত-ফিতরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর মানুষের মধ্যে জাকাত দেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। বিভিন্ন সংস্থাও জাকাত দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ সৃষ্টি করছে, যা ঈদ অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদের ধারণা, এবারই সর্বোচ্চ পরিমাণে জাকাত আদায় হবে, যা ৭০ হাজার কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি এ বছর সরকার সর্বনিম্ন ফিতরা ১১৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ফিতরা ২ হাজার ৯৭০ টাকা নির্ধারণ করেছে। ফিতরার পরিমাণ বাড়িয়েছে সরকার। কম হলেও ৫ কোটি মানুষ ফিতরা দিচ্ছে।

এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, ঈদ বোনাস থেকেই ১২ হাজার কোটি টাকা অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে। পাশাপাশি এ মাসের সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন। এই টাকা দেশের গরিব মানুষের কাছে যাচ্ছে, যা এবারের ঈদে ভ্রমণ, খাওয়া-দাওয়া এবং বিনোদনে ব্যয় হবে, যা আনুমানিক ৫ হাজার কোটি টাকা।
তিনি জানান, বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে ১৪ লাখের বেশি। দোকানের কর্মচারী রয়েছে ৬০ লাখ। বস্ত্র খাতে আছে ৭০ লাখ শ্রমিক। এ বিশাল সংখ্যক জনগণের বেতন-বোনাস ঈদ অর্থনীতিতে অর্থের প্রবাহ বাড়াবে। তাই সর্বোপরি বৈশ্বিক মন্দা ও দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে বিপর্যস্ত অর্থনীতি বেগবানে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করবে জাকাত-ফিতরা।

সূত্র মতে, গত কয়েক বছরে করোনা মহামারির মন্দা কাটিয়ে অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে জাকাত-ফিতরার অর্থ। এ বছর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা জাকাত বোর্ড এবং বিভিন্ন সংস্থা জাকাত প্রদানে মানুষকে উৎসাহ প্রদান করেছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে তাই এ বছর জাকাত প্রদানে আগ্রহ বেড়েছে। পাশাপাশি জাকাত প্রদানে আগের মতো শাড়ি-লুঙ্গি নয়; গরিবদের নগদ অর্থ প্রদানই বেশি হচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষের কাছে অর্থের প্রবাহ বেড়েছে, যা দিয়ে ঈদ কেনাকাটা ও অন্যান্য কাজে অর্থের ব্যবহার করছে।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঈদবাজার সূত্রে জানা গেছে, শেষ সময়ে হলেও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাজারগুলোতে চলছে কেনাকাটার ধুম। শপিংমলগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। প্রতিটি হাট-বাজারে ব্যাপক লোক সমাগম। খাবার থেকে পোশাক, সেলুন থেকে পার্লার আর শপিংমল থেকে দর্জিবাড়িÑশুধু ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা! রোজা, ঈদ ও অর্থনীতি পরস্পর পাশাপাশি এ তিনের অবস্থান। রোজা প্রত্যাগত, ঈদ সমাগত, অর্থনীতির আয়োজনও প্রত্যাশামতো। শহরে, নগরে, বন্দরে, গ্রামে আর গঞ্জেÑ সবখানেই অর্থনীতির কারবার! বাস, ট্রেন, লঞ্চ, স্টিমার, বিমান ও লেগুনা সবখানেই শুধু একটা জিনিসের হাঁকডাক। আর সেটা হলো, অর্থ, অর্থ এবং অর্থ। চারদিকে শুধু ঈদের আমেজ ও অর্থের ছড়াছড়ি। ফুটপাথের দোকান থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার ইসলামপুর-চকবাজার সবখানেই চলছে কেনাকাটা; সবখানেই ঈদের আবহ-আমেজ। একই সঙ্গে রোজায় জমজমাট ছিল ইফতার বাজার। পাড়া-মহল্লার বাজার থেকে শুরু করে রাজধানীর বড় বড় হোটেল সবখানেই ইফতারের ব্যাপক আয়োজন। এসব কিছুর মূলে রয়েছে অর্থ। পকেটে আসছে অর্থ, পকেট থেকে যাচ্ছে অর্থ, চাঙ্গা হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক মন্দার কারণে গত কয়েক বছরের ঈদগুলোতে বাজার তেমন জমজমাট ছিল না। এবার উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নানা সঙ্কটে ছোট শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেতন-বোনাস ও রেমিট্যান্স আসায় দেরিতে হলেও জমেছে ঈদবাজার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎসবের অর্থনীতির সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। তবে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হিসাব বলছে, চলতি মাসেই অর্থনীতিতে অতিরিক্ত আরো দেড় লাখ কোটি টাকা লেনদেন হবে। খাদ্যপণ্য, পোশাক, গহনা, প্রসাধনী, ইলেকট্রনিক্স, বিনোদন ও পরিবহণ খাতে এই বাড়তি অর্থ যোগ হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি চাকরিজীবী, দোকান কর্মচারী, পোশাক ও বস্ত্র খাতের শ্রমিকসহ বিভিন্ন ধরনের শ্রমজীবীদের বোনাসও এ কর্মকাণ্ডে যোগ হবে। এর প্রভাবে ফুটপাথ থেকে শুরু করে অভিজাত শপিংমল পর্যন্ত বেড়েছে বেচাকেনা। তবে এবার ফুটপাথে গাড়ি নিয়ে ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ই বেশি দেখা গেছে। এছাড়া কেনাকাটা বেড়েছে অনলাইনে। রোজার আগে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় ধস নামলেও শেষ পর্যন্ত সমিতির উদ্যোগে রেস্টুরেন্টগুলো চালু হওয়ায় জমে উঠে ইফতার বাজার। গ্রামেও টাকার প্রবাহ বাড়ছে। সবকিছু মিলে উৎসবে চাঙ্গা হয়ে উঠছে অর্থনীতি।

সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের হিসাবে দেশের জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) আকার হচ্ছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। তবে উৎসবে কত টাকা লেনদেন হয়, তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। রোজা ও ঈদ উৎসবের অর্থনীতি নিয়ে এফবিসিসিআইর সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির বর্তমান প্রেসিডেন্ট হেলাল উদ্দিনের সমীক্ষায় দেখা গেছে, রোজা ও ঈদে এবার অতিরিক্ত ২ লাখ কোটি টাকার লেনদেন যোগ হবে। সমীক্ষা মতে, পোশাকের বাজারে যোগ হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। নিত্যপণ্যের বাজারে বাড়তি যোগ হচ্ছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। জাকাত ও ফিতরা বাবদ আসছে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরিবহন খাতে ৯০০ কোটি টাকা। ঈদকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ ও বিনোদন বাবদ ব্যয় হয় ৫ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে আরো কয়েকটি খাতের কর্মকাণ্ডে টাকার প্রবাহ বাড়বে। এর মধ্যে রয়েছে ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ৬০ লাখ দোকান কর্মচারী, তৈরী পোশাক ও বস্ত্র খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে ৭০ লাখ শ্রমিকের বোনাস, যা ঈদ অর্থনীতিতে আসছে। এছাড়াও রয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকা। মার্চে ১৯৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসেবে স্থানীয় মুদ্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।

জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ  বলেন, আল্লাহর ফরজ বিধান বিত্তবানদের জাকাত প্রদান। জাকাত প্রদানে জোর করতে হচ্ছে না। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এখন জাকাত দিচ্ছে। বিশেষ করে এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় দেশের মুসলমনাদের মধ্যে জাকাত প্রদানে আগ্রহ বেড়েছে। আগের মতো লুঙ্গি-শাড়ি জাকাত হিসেবে দেয়ার প্রবণতাও কমেছে। এখন মানুষ গরিবদের নগদ টাকা জাকাত দিচ্ছে, যা এ বছর দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা আনবে।

তথ্য মতে, উৎসবের মধ্যে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ। এটি সবসময়ই রোজার শুরু থেকেই জমে ওঠে। এই মাসে মানুষের পণ্য চাহিদা বাড়ে। বিশেষ করে ইফতারে ব্যবহার হয় এ ধরনের পণ্যগুলোর চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এর মধ্যে রয়েছে ভোজ্যতেল, ছোলা, খেজুর, পেঁয়াজ, চিনি, ডাল, ডিম, ফলমূল এবং শাক-সবজিসহ অন্যান্য আইটেম। রমজানে সারা দেশে ইফতারকেন্দ্রিক কয়েক লাখ মানুষ মৌসুমি ব্যবসা করেন। এবার তা কিছুটা বেড়েছে। অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ঈদে দেশের বুটিক ও ফ্যাশন হাউজগুলো বেশ ব্যস্ত। ফ্যাশন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতি (এফইএবি বা ফ্যাশন উদ্যোগ) উৎসবের বেচাকেনা এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশের ফ্যাশন হাউজগুলোতে বছরের মোট বিক্রির ৫০ শতাংশ হয় রোজার ঈদে। তবে এবার বেচাকেনা তুলনামূলক কম বলে জানান সমিতির নেতারা।

সূত্র মতে, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বোনাস, ব্যবসার টাকা, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ এবং জাকাত-ফিতরা মিলিয়ে অর্থনীতিতে নতুন করে ২ লাখ কোটি টাকা যোগ হচ্ছে। এর একটি অংশ ইতোমধ্যে গ্রামে চলে গেছে। ঈদ ও রোজার বাড়তি খরচ মেটাতে কৃষকের ঘরে মজুত ধান বা অন্যান্য ফসলের একটি অংশ বিক্রি করেছে। এছাড়াও অর্থবছর শেষ হয়ে আসায় সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ খরচ করার ধুম পড়েছে। ফলে সবকিছু মিলে টাকার স্রোত এবার গ্রামের দিকে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ টাকার বড় অংশই যাচ্ছে ভোগ-বিলাসে। আর কিছু অংশ যাচ্ছে গ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পভিত্তিক উৎপাদন খাতে।

সূত্র মতে, চলতি বছর ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী অষ্টম বেতন কাঠামোর আলোকে ঈদ বোনাস পাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে তিন বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এছাড়া বেসরকারি অফিসে, প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজস্ব কাঠামোতে বোনাস দিচ্ছে। এছাড়া পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রায় ৭০ লাখ কর্মীর বোনাসও যোগ হচ্ছে, যা পুরোটাই যোগ হচ্ছে ঈদ অর্থনীতিতে। এছাড়া ঈদ উৎসব অর্থনীতিতে সারা দেশের দোকান কর্মচারীদের বোনাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসাবে দেশে ২০ লাখ দোকান, শপিংমল, বাণিজ্য বিতান রয়েছে। গড়ে একটি দোকানে ৩ জন করে ৬০ লাখ জনবল কাজ করছে। নিম্নে একজন কর্মীকে ৬ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বোনাস দেয়া হয়। ওই হিসাবে গড়ে বোনাস ৮ হাজার টাকা ধরে ৪ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা বোনাস পাচ্ছেন এ খাতের শ্রমিকরা, যা পুরোটাই ঈদ উৎসব অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, এবার ব্যবসা-বাণিজ্য তেমন একটা ভালো নয়। কারণ খাবারের চাহিদা মিটিয়ে মানুষের হাতে ওই পরিমাণ টাকা থাকছে না। এ কারণে ফুটপাথে ভিড় থাকলেও বড় মার্কেটগুলো ওভাবে জমে ওঠেনি। তারপরও ঈদ ঘনিয়ে আসায় শেষ সময়ে কিছুটা বিক্রি বেড়েছে। এদিকে ঈদ উৎসব পালন করতে রোজার শেষ দিকে হওয়ায় শহরের অধিকাংশ মানুষ যান গ্রামের বাড়িতে। এ সময় অতিমাত্রায় বেড়ে যায় পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহণ ও নৌযান চলাচল। এতেও টাকার প্রবাহ বাড়ে। অন্যদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষ বিনোদনের জন্য দেশের ভেতরে বিভিন্ন স্থান ও বিদেশে বেড়াতে যান অনেকে। ফলে পর্যটন খাতেও যোগ হয় বাড়তি টাকার প্রবাহ। সার্বিকভাবে এ কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণত অন্য মাসের তুলনায় এই মাসে অতিরিক্ত অর্থের প্রভাব বেড়ে যায়।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়