ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আরও একটি মাইলফলক

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:২৬, ১৪ জুলাই ২০২৩  

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আরও একটি মাইলফলক

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আরও একটি মাইলফলক

পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও সংরক্ষণের লাইসেন্স অনুমোদন পেল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় পাবনার একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও প্রকল্পের জ্বালানি আমদানি, পরিবহণ ও সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টদের লাইসেন্স প্রদান করেছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিএইআরএ)। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক জ্বালানি আমদানির সক্ষমতা অর্জন করল বলে জানিয়েছেন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি স্ট্রাকচার উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. সত্যজিত ঘোষ।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাশান ফেডারেশনের রোসটেকনাজোরের ডেপুটি চেয়ারম্যান, রোসাটমের ডেপুটি ডিরেক্টর মি. এ. ওয়াই পেত্রোভ, বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. অশোক কুমার পাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান।

ড. সত্যজিত ঘোষ জানান, পরমাণু জ্বালানি ব্যবহারে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সুনির্দিষ্ট গাইড লাইন আছে। বাংলাদেশে পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ- এর রেগুলেটিং ও সুপারভিশন করে। পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি, পরিবহণ ও সংরক্ষণের জন্য রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত সংস্থাগুলোকে আমাদের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। রূপপুর প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা লাইসেন্স আবেদন করার পর গত এক বছর ধরে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের নথি জমা দিয়েছেন। বারংবার পর্যালোচনা ও মূল্যায়ণে সন্তুষ্ট হবার পর বায়রা তাদের এই লাইসেন্স প্রদানে সম্মত হয়েছে। আমরা লাইসেন্স প্রদান করছি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও জ্বালানি পরিবহণে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে। এর মধ্য দিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জ্বালানি আমদানিতে আর কোনো বাধা থাকল না।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, পারমাণবিক এই জ্বালানি আমদানি ও সংরক্ষণ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পরমাণু শক্তির পরিচালক হিসেবে আন্তর্জাতিক নিউক্লিয়ার ক্লাবে যুক্ত হবে। এ মর্যাদা পাওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করবে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে উৎপাদন শুরু করতে আর কোনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও থাকবে না।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর জানান, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম আমদানি, পরিবহন ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে মেনে চলতে হবে আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতি, তৈরি করতে হবে অবকাঠামো। পরমাণুর শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিতে বাংলাদেশও প্রতিটি ধাপে আইএইএ-এর নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।

শৌকত আকবর বলেন, ‘জ্বালানি আমদানি ও পরিবহনের ক্ষেত্রে আইএইএ-এর প্রজ্ঞাপন লাগবে। রাশান ফেডারেশনের যে রপ্তানি নীতি, তার আলোকে অনুমতি লাগবে। তার জন্য নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো, সাংগঠনিক অবকাঠামো, দক্ষতা ও জনবল তৈরি করতে হয়। সকল শর্ত পূরণ করেই আমরা সংরক্ষণ, আমদানি ও পরিবহনের জন্য লাইসেন্স পেলাম।

রূপপুরের জ্বালানি আমদানি দেশের জন্য আরেকটি মাইলফলক বলে দাবি করে দেশের বৃহৎ এই প্রকল্পটির প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, ‘ বৈশ্বিক নিউক্লিয়ার ক্লাবে ব্যবহারিক পর্যায়ে, আমরা কনস্ট্রাকশনের মধ্য দিয়ে একবার গেলাম, আরেকবার জ্বালানি আমদানির মধ্য নিউক্লিয়ার এনার্জি পরিচালনাকারী দেশের মর্যাদায় উন্নীত হব।’ ২০২৩ সাল থেকে ‘প্রি-অপরাশেনাল কমিশনিং’ বা পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যেতে চায় কর্তৃপক্ষ। তবে এর জন্য বেশকিছু বিষয় সম্পন্ন করতে হবে বলেও জানান তিনি।

শৌকত আকবর বলেন, ‘অপারেশনাল কমিশনিংয়ের সঙ্গে আমাদের অনেকগুলো অবকাঠামো জড়িত, ফিজিক্যাল প্রোডাকশন জড়িত, অফসাইট টেলিকমিউনিকেশন জড়িত, জরুরি ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো জড়িত।’ আশা করছি আইএইএ- এর নির্দেশনা মেনে সেগুলো নির্ধারিত সময়েই সম্পন্ন করতে সক্ষম হব আমরা।

প্রসঙ্গত, পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পদ্মা নদীর পাড়ে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ প্রকল্পটি দেশের ইতিহাসে এককভাবে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো। রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাক্টর রাশিয়ার রোসাটম করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা।

এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটি ইউনিটে থাকছে ৩+ প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিঅ্যাক্টর, যেগুলো সব আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চাহিদা পূরণে সক্ষম। এরইমধ্যে এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ চার ভাগের তিন ভাগ শেষ হয়েছে। কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৪ সালে এবং এর পরের বছর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার কথা রয়েছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়