ঢাকা, বুধবার   ০১ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

উন্নততর প্রযুক্তির ড্রোন-রোবট তৈরিতে আমেরিকায় গবেষণা শাহরিয়ারের

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:০১, ৫ অক্টোবর ২০২২  

উন্নততর প্রযুক্তির ড্রোন-রোবট তৈরিতে আমেরিকায় গবেষণা শাহরিয়ারের

উন্নততর প্রযুক্তির ড্রোন-রোবট তৈরিতে আমেরিকায় গবেষণা শাহরিয়ারের

দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী যখন স্বপ্ন দেখছে পুথিগত বিদ্যা অর্জন করে বিসিএস ক্যাডার কিংবা ভালো চাকুরীজীবী হওয়ার, তখন মীর শাহরিয়ার আলম স্বপ্ন দেখছে প্রযুক্তিক্ষেত্রে এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরির। যেই বাংলাদেশ ড্রোন আমদানি নয় রপ্তানি করবে, যেই বাংলাদেশ সোফিয়ার মতো রোবট থেকেও উন্নত রোবট তৈরি করে বিশ্বে তাক লাগিয়ে দেবে। আর এই স্বপ্ন নিয়েই সে তৈরি করে ফেলেছে ৫টি মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ড্রোন)। আমেরিকায় অধ্যয়নরত মীর শাহরিয়ার আলম এমনই স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে সুপরিচিত করতে ইতোমধ্যে আরো উন্নততর প্রযুক্তির ড্রোন-রোবট তৈরিতে গবেষণা শুরু করে দিয়েছে। মীর শাহরিয়ার আলম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কোমারডোগা গ্রামের সম্ভ্রান্ত মীর পরিবারের সন্তান। তার বাবা মীর শাহ আলম একটি ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং মা গাজী নীলিমা ইয়াছমিন একজন গৃহিনী। তারা পারিবারিকভাবে কুমিল্লা শহরের রানীর দীঘির পাড় এলাকায় বসবাস করেন।

ড্রোন-রোবট তৈরির বিষয়ে কথা হয় মেধাবী ছাত্র মীর শাহরিয়ার আলমের সাথে। তিনি বলেন, তার এ ধরণের আবিষ্কারের কাজটি শুরুর গল্পটা একটু অন্যরকম। তার মতে, এ আকাশযানের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় ২০১০ সালে যখন সে কুমিল্লা জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সপ্তম শ্রেণির বাংলা বইয়ের গল্প আকাশ জয়ের কাহিনী পড়ে তারও ইচ্ছে হলো একদিন সে আকাশে নিজের তৈরি ড্রোন-বিমান উড়াবে এবং রোবট আবিষ্কার করবে। আর সেই থেকে তার এ আবিষ্কারের পদযাত্রা। তার এ পদযাত্রায় তাকে পাড় হতে হয়েছে অনেক চড়াই-উৎরাই।

নিজে নিজে গবেষণা করে ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তিনি তৈরি করে ফেলেছেন ৫টি মনুষ্যবিহীন ড্রোন। তার ড্রোনগুলোর এয়ারফ্রেম তৈরি করেছে নিজস্ব প্রযুক্তিতে কর্কশীট, এলুমিনিয়াম পাইপ, বাঁশের কঞ্চি দিয়ে। প্রসেসিং ইউনিট হিসেবে ব্যবহার করেছে প্রসেসর এবং সেন্সর হিসেবে ব্যবহার করেছে এক্সিলেরোমিটার, গাইরোস্কোপ, ব্যারোমিটার ও জিপিএস সিস্টেম, যা স্থানীয় বাজার থেকে সংগৃহীত আর হার্ডওয়্যার পরিচালনায় ব্যবহার করেছে নিজস্ব তৈরি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সফটওয়্যার।

তার আবিষ্কৃত এ ড্রোনগুলোর সাহায্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বন্যা কবলিত বা দূর্গত পাহাড়ি এলাকায় ঔষধ ও ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ, নির্দিষ্ট এলাকা টহল দেয়াসহ ভালো রেজুলেশনের ছবি, ভিডিও সংগ্রহ ও সরাসরি সম্প্রচার করা সম্ভব। এমনকি এই ড্রোনগুলো গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীর হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা ও বিশৃঙ্খলা রোধে ট্রাকিংয়ের কাজও করতে সক্ষম। তার তৈরি ড্রোনের সমমানের একটি ড্রোন কিনতে হলে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যয় হবে প্রায় চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা। কিন্ত তার ওই একই সুবিধাসম্পন্ন ড্রোনগুলো তৈরি করতে খরচ পড়েছে মাত্র ২৫ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা।

তার মতে, বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর জন্য যে সকল ড্রোন ব্যবহার করা হয় সেগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। এগুলো আমদানি করা একদিকে যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি এসকল ড্রোনে তথ্যসংগ্রহের জন্য ওয়ারলেস সিস্টেম ব্যবহার করায় রপ্তানিকারক দেশ কর্তৃক বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারের আশঙ্কা থেকে যায়, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তার মতে, সরকারের সহযোগিতা পেলে রাষ্ট্রের চাহিদা অনুযায়ী স্বল্প খরচে উন্নত ড্রোন-রোবট ও বিমান তৈরি সম্ভব। এতে একদিকে যেমন অর্থের অপচয় রোধ হবে, অপরদিকে নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত হবে, পাশাপাশি দেশের শিক্ষার্থীরাও এ ধরনের আবিষ্কার এবং গবেষণায় ব্যাপকভাবে উৎসাহিত হবে। একইসঙ্গে বহির্বিশ্বও বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। মেধাবী এই শিক্ষার্থী ড্যাফোডিল বিশ^বিদ্যালয় থেকে তার স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন করে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য অবস্থান করছেন। তার আবিষ্কৃত ড্রোনগুলো প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে শিক্ষা ও গবেষণা করছেন বলে জানান।

এছাড়া এন্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলমেন্ট ও কম্পিউটারের গেম তৈরির প্রোগ্রামিংয়েও তার অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে। তার স্বপ্ন অধিকতর গবেষণার মাধ্যমে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় রোবট ও ড্রোন তৈরি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে সুপরিচিত করে তোলা।

উল্লেখ্য, মীর শাহরিয়ার আলম কুমিল্লা জিলা স্কুল, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড মডেল কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি ও এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। তার বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে বাংলাদেশ সেনাবাহীনীর একজন চৌকস অফিসার হবে। সে জন্য তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আন্ত:বাহিনী নির্বাচনী পর্ষদ (আইএসএসবি) পরীক্ষায় চারদিনের জন্য সুযোগও পান। কিন্তু তার সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। পরে তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাল্টিমিডিয়া এণ্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলোজি ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি বিএসসি-সম্মান সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকায় গমন করেন।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়