ঢাকা, সোমবার   ২০ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

করতোয়া নদীকে ঘিরে দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পের কাজ শুরু

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ২০ অক্টোবর ২০২৩  

করতোয়া নদীকে ঘিরে দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পের কাজ শুরু

করতোয়া নদীকে ঘিরে দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পের কাজ শুরু

বগুড়া নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর গভীরতা বাড়িয়ে এবং নাব্য ফিরিয়ে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলার প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। যুক্ত থাকা নগরীর ভেতরের একটি বিলকেও নদীর ধারার সঙ্গে মিলিয়ে নগরীর সৌন্দর্যকে বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এদিকে বগুড়া নগরীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের সংযোগের করতোয়া ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তিন বছর আগে পুরাতন ব্রিজটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পর ভেঙ্গে নতুন মডেলে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। যে করতোয়া নদীকে নিয়ে এতকাল নেগেটিভ কথা বলা হয়েছে সেই নদী এখন নগরীর উন্নয়নের পজিটিভ ধারায় ফিরে আসছে। করতোয়া নদীকে ঘিরে বগুড়া নগরীকে আধুনিক মডেলের রূপকার বর্তমান জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সাইফুল ইসলাম। তার উদ্যোগে মৃত্যু পথযাত্রী করতোয়া যৌবনা হয়ে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।

সূত্র জানান, করতোয়া নদী খনন করে গভীরতা বাড়িয়ে নাব্য তৈরি, দুই পাড়ে পায়ে হাঁটার পাকা পথ নির্মাণ এবং পথের ধারে ছায়াতরু (ছাতিম) চারা রোপণ করা হবে। বহমান করতোয়ার সঙ্গে নগরীর ফুলবাড়ি এলাকার সুবিল খালকে খনন করে বাইপাস যুক্ত করে স্রোতধারাকে একীভূত করে সুবিলকে সুন্দর করা হবে। নদীকে ঘিরে বহুমূখী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এই কাজ চলতি অর্থ বছরেই (২০২৩-২৪) শুরু হবে। জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, করতোয়া নদীকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে এনে সৌন্দর্যবর্ধন ও সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পিইসি সভায় প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এতে ব্যয়ের প্রাথমিক প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৬ কোটি টাকা। চলতি মাসের (অক্টোবর) প্রথম সপ্তাহে বিষয়টি নীতিগত অনুমোদন মিলেছে। আশা করা হচ্ছে চলতি মাসেই মন্ত্রী পরিষদের সভায় অনুমোদন করা হবে। ফাইনাল অনুমোদনে চলতি বছরই করতোয়াকে দৃষ্টিনন্দন করার কাজ শুরু হবে।

এতকাল করতোয়া নদী নিয়ে অনেক নেগেটিভ কথা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। করতোয়া ভরাট হয়েছে। একদার প্রমত্তা করতোয়া এখন মরা খাল। কোথাও ময়লা আবর্জনা ফেলে ভাগারে পরিণত করা হয়েছে। পানি কালো দূষিত হয়েছে। করতোয়া নদীকে ঘিরে কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয় না। নদীভূমি দখল হয়ে যাচ্ছে। অবকাঠামো গড়ে উঠছে নদী ভরাট করে। নানাভাবে নদীকে হত্যা করা হচ্ছে। গত এক যুগে প্রশাসন করতোয়া দখলদারদের তালিকা করেও উচ্ছেদ করতে পারেনি। পূর্বসূরী ও প্রবীণ লোকজন করতোয়া নদীকে যেভাবে দেখেছে প্রজন্ম তার ছিটে ফোটাও দেখতে পারে না। এই নদীকেই প্রমত্তা রূপ দেওয়া হচ্ছে। ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় করতোয়ার মূল ধারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আরেকটি ধারা বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার সরকারপুর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আত্রই নদীতে মিশেছে। করতোয়ার বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ১৮৭ কিলোমিটার। প্রস্থ গড়ে ১৩৫ মিটার। তবে বগুড়া অংশে করতোয়ার প্রস্থ এতটাই কম যে কোথাও ড্রেন কোথাও ছোট খালের দৈর্ঘ্যরে মতো। এদিকে নদী গবেষকগণের একটি অংশের মতো রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বর্তমানের যে ছোট নদী করতোয়ার একটি গতিপথ ছিল নি¤œমুখী। যা মহাস্থানগড়ের (প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধনভূক্তির রাজধানী পুন্ড্রনগরী) ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। সেই নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। বর্তমান যা দৃশ্যমান তা একটি খাল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল হক জানান করতোয়া নদীর ২০ কিলোমিটার সুবিল খালের ২০ কিলোমিটার এবং সংযুক্ত ছোট একটি খালের সাড়ে ৭ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হবে। জেলা প্রশাসন অফিস থেকে এসপি ব্রিজ ঘাট পর্যন্ত নদীর পশ্চিম তীরে ৭৫০ মিটার পায়ে হাঁটার পথ (ওয়াক ওয়ে) নির্মিত হবে। এই পথ হবে পাকা। চওড়া ৭ ফুট। পথের ধারে ছাতার মতো বৃক্ষ রোপণ করা হবে। অনেকে মন্তব্য দিয়েছেন ছাতিম তরুর একটি জাত আছে ছাতার মতো। এই জাতের গাছ (ছাতিম তরু) রাজশাহী মহানগরীর সৌন্দর্য বর্ধনে চার লেনের রাস্তার ধারে রোপিত হয়েছে। যা পথিকদের বিশ্রামে ছায়া দেয়। বগুড়া নগরীর নদী তীরের ওয়াকওয়েতেও এই গাছ ছায়াতরু হয়ে সৌন্দর্য বাড়াবে। দিনেও পথিকদের বিশ্রামে ছায়া দেবে।

পাউবো জানায় নদী ড্রেজিং করার পর করতোয়ার জলধারন ক্ষমতা বেড়ে যাবে। গভীরতা হবে দশ ফুটের বেশি। যা জলের আধার (রিজার্ভার) হিসেবে কাজ করবে। নগরীর জলাবদ্ধতা দূর হবে। রুদ্ধ নৌপথ ফের চালু হবে। শহরের বাইরের নদীর ধারের অনেক জমি শুকনো মৌসুমে সেচ সুবিধার আওতায় আসবে। শহরের মাটিডালি থেকে বনানী পর্যন্ত একটি অংশের খননের সঙ্গে যুক্ত হবে। সুবিল খালের চাঁদমুহা গ্রাম থেকে শহরের করতোয়ার একটি ধারা এবং সুবিল খালের একটি অটো খাল ড্রেজিং করা হবে। প্রথম ধাপের পর দ্বিতীয় ধাপের এই ড্রেজিংয়ের সঙ্গে নির্মাণাধীন করতোয়া ব্রিজের সঙ্গে একটি ওয়াকওয়ে সংযুক্ত করা হবে।

বর্তমানে নতুন করে করতোয়া ব্রিজের (যা ফতেহ আলী (র.) ব্রিজ নামেও পরিচিত) নির্মাণ কাজ চলছে। ব্রিজের নক্সা অনুমোদন হয়ে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি টাকা। এই অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। নতুন এই ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ৬৮ মিটারের বেশি। ক্যারেজওয়ে (যানবাহন চলাচল পথ) ২৪ ফুট চওড়া। ব্রিজের দুই ধারে প্রতি ধারে ৮ ফুট করে ১৬ ফুট পায়ে চলার পথ রাখা হয়েছে। এই ব্রিজ নির্মিত হচ্ছে আধুনিক নক্সায়। বর্তমানে নির্মাণাধীন করতোয়া নদীর ধারে সাধারণের চলাচলের জন্য ড্রামের অস্থায়ী সেতু নির্মিত হয়েছে। করতোয়া আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের পর ড্রামের সেতু উঠে যাবে। আরসিসি ব্রিজ নির্মিত হওয়ার দুই প্রান্তের অবকাঠামোগুলো উন্নত হবে। ব্রিজ এবং নির্মিতব্য নন্দিত রূপের করতোয়া নদী ঘিরে এখনই অনেক প্রতিষ্ঠান করতোয়ার পূর্ব প্রান্তে রিসোর্ট শপিংমল সিনে কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে।

ডিসি মো. সাইফুল ইসলাম জানালেন যে করতোয়া নদীকে ঘিরে এতকাল অনেক নেগেটিভ কথা হয়েছে সেই নদীর সৌন্দর্য দেখার জন্য বাইরে থেকে লোকজন আসবে। সৌন্দর্যের নদীকে ঘিরে বগুড়া নগরী আরও আধুনিক নগরীতে পরিণত হবে। ডেল্টা পরিকল্পনায় করতোয়া নদীকে ঘিরে যে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছে তার সঙ্গে বর্তমানের প্রকল্পটি সংযুক্ত হবে।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়