ঢাকা, সোমবার   ২০ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

নতুন জাতের ধান ডি-৫ উদ্ভাবন করেছেন কৃষক নূর

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:২৫, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কৃষি গবেষণায়, কৃষক পর্যায়ে নিরলসভাবে কাজ করছেন রাজশাহীর তানোরের গোল্লাপাড়ার কৃষক নূর মোহাম্মদ। বাবা ছিলেন কৃষক। বাবার হাতেই কৃষিতে হাতেখড়ি। খরাপিড়িত বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি বড় সমস্যা। আর সেই পানি সমস্যার সমাধান কিভাবে করা তা ভাবিয়ে তোলে তাকে। কৃষিবিদদের সঙ্গে গড়ে তোলেন গভীর সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক থেকেই ধানের নতুন নতুন জাত নিয়ে শুরু করেন গবেষণা। সংক্ররায়ণের মাধ্যমে তিনি উদ্ভাবন করেন সব নতুন নতুন জাতের ধান। এ পর্যন্ত তিনি সংক্ররায়নের মাধ্যমে প্রায় দুইশত ধানের অধিক নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন।

সরজমিন গোল্লাপাড়া (উপরপাড়া) তার গবেষণা প্লটে গিয়ে দেয়া যায়, তার নতুন জাতের ‘ডি-৫’ কৃষকদের দেখাছেন। গত আট বছরের গবেষণায় এই নতুন ধান উদ্ভাবন করেছেন কৃষক নূর মোহাম্মদ। নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডি-৫’।

কৃষি গবেষক নূর মোহাম্মদ জানান, জনপ্রিয় ব্রি ধান ২৮ এর মতো কিছুটা। ধানে পানি কম লাগে ও রোগ বালাই অন্যান্য ধানের চেয়ে অনেক কম। তবে এটির ভাত খেতে বেশ সুস্বাদু। তার উদ্ভাবিত নতুন ‘ডি-৫’ আমন ও বোরো দুই মৌসুমেই আবাদ করা যাবে। ধানের গড় ফলন হবে আমন মৌসুমে বিঘাপ্রতি ১৮ মণ ও বোরো মৌসুমে বিঘাপ্রতি ২১ মণ।

তিনি আরো জানান, এবার আমন ২০২৩ মৌসুমে তার গবেষণা মাঠে তার উদ্ভাবিত দুই জাতের ধান কাটা হয়েছে। একটি চিকন ‘ডি-৫’ অপরটি খরাসহিষ্ণু ‘নূর ধান’। ধান কাটা মাড়াই ও ঝাড়াই শেষে শুকনা ওজনে চিকন ‘ডি-৫’ বিঘাপ্রতি ১৮ মণ ও খরাসহিষ্ণু ‘নূর ধান’ বিঘা প্রতি ২১ মণ ফলন পাওয়া যায়। এ সময় উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম, সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আনারুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো: আলী রিয়াজ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনাকালে স্থানীয় কৃষকরা জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রায় প্রতি বছরই খরায় নষ্ট হতো কৃষকের জমির ধান। সেই ধান রক্ষায় কাজ শুরু করেন কৃষক নূর মোহাম্মদ। এজন্য নিজের মাটির ঘরটি বানান গবেষণাগার। দেশীয় জাতের উন্নতি ঘটিয়ে ধানের জীবনকাল কমিয়ে আনেন। ফলন বাড়ান। ফলে জমিতে পানি কম লাগে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে ফসল রক্ষা পায়। খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে কীভাবে কম পানি দিয়ে এবং কম সময়ে বেশি ধান ঘরে তোলা যায়, তা নিয়ে করছেন নিরন্তর গবেষণা। উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে বহু জাতের ধানের জিন সংমিশ্রণ করে একটি আধুনিক উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেন।

তানোরের উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো: আলী রিয়াজ বলেন, ‘কৃষিক্ষেত্রে নিত্যনতুন ধানের জাত সৃষ্টি করে দ্রুত বাস্তবায়ন ও এলাকার কৃষকদের মধ্যেও নিত্যনতুন প্রযুক্তি বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন কৃষক নূর মোহাম্মদ। তৃণমূল কৃষক পর্যায়ে ধানের নতুন নতুন সারি উদ্ভাবন হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা বিভিন্ন মৌসুমে নতুন নতুন দেশিবিদেশি জাতের ধানের অবস্থা তাদের নিজ এলাকায় দেখার সুযোগ পেয়েছেন। কৃষকরা তাদের পছন্দের জাতসমূহ চিহ্নিত করে বীজও সংগ্রহ করতে পারছেন। খরাসহিষ্ণু সারিগুলোর জীবনকাল কম হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরুর আগেই ধান কেটে ঘরে তোলা যাচ্ছে। আমার মনে হয়, বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য উপযোগী এ জাতগুলো কৃষক চাষাবাদ করলে লাভবান হবেন।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়