ঢাকা, বুধবার   ০১ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় এক ব্রিজে বদলে যাচ্ছে ১০ গ্রামের চিত্র

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বড় বাজার-ধরখার সড়কের বনগজ কুড়ের পাড় এলাকায় এক ব্রিজ নির্মাণে বদলে যাচ্ছে ১০ গ্রামের দৃশ্যপট। ফলে এলাকার লোকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি বদলে যাচ্ছে অর্থনীতির চাকা।

তিতাস নদী সংলগ্ন ঘেষা বনগজ বিলে একটি সেতুর অভাবে হাজারো মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ব্রিজটি নির্মাণের ফলে দীর্ঘ বছরের ভোগান্তি দূর হওয়া এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও অর্থনীতিতে যুগান্তকারী সাফল্য আসতে শুরু করছে।

জানা যায়, উপজেলার ধরখার ইউপির আখাউড়া বড়বাজার-ধরখার জিসি সড়কটি অনেক আগে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু তিতাস নদী সংলগ্ন ঘেষা বনগজ বিলে একটি ব্রিজের অভাবে সড়কটি সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসছিল না।ফলে ধরখার ইউপির বনগজ, ভবানীপুর, বৈষ্ণবপুর, দুর্জনগর, চরনারায়নপুর, কাশেমপুর, ধনারচর, কৃষ্ণনগরসহ আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামের সাধারণ মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে তাদের ভোগান্তির শেষ ছিল না। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় ওইসব গ্রামের লোকজন বর্ষা মৌসুমে নৌকা দিয়ে আর শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হতো।  

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে এই ব্রিজটি নির্মাণের জন্য এলাকার লোকজন দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল। অবশেষে স্থানীয় লোকদের দাবির প্রেক্ষিতে আখাউড়া-কসবার এমপি আইন বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক ২০১৮ সালে ব্রিজটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।  

এলজিইডির অধীনে ২০২৩ সালের শেষের দিকে আখাউড়া বড় বাজার-ধরখার জিসি সড়কের ৪৫শ মিটার চেইনেজে এবং ৯৬ দশমিক ১০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার বিশিষ্ট ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। বহুল কাঙ্খিত এই ব্রিজটি নির্মাণে এ সড়ক দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। এতে কমেছে ভোগান্তি, বেড়েছে জীবনযাত্রার মান। আর কৃষি পণ্য বিক্রিতে মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার চিত্র বদলে যেতে শুরু করেছে।

জানা গেছে, আখাউড়া-ধরখার আসতে হলে বহুদূর ঘুরে একদিকে মোগড়া বাজার অন্যদিকে সদর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুলতানপুর হয়ে আখাউড়ায় আসতে হতো। এতে সময়ের পাশপাশি কয়েকগুণ টাকা বেশি খরচ হতো। অবশেষে সব বাধা ডিঙিয়ে ব্রিজটি নির্মাণের ফলে ভোগান্তি দূর হলো।

ধরখার ইউনিয়ন বনগজ এলাকার ইউপি সদস্য মো. আব্দুল আলীম বলেন, ব্রিজের অভাবে বছরের পর বছর ধরে কৃষকরা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত ছিল। এখন ব্রিজ হওয়ায় তাদের উৎপাদিত ফসল সরাসরি শহরে নিয়ে বিক্রি করতে পারবেন। ফলে তারা লাভবান হবেন।

বনগজ গ্রামের কৃষক মো. ফারুক মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ব্রিজটি নির্মাণ করায় এখন বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। সরাসরি পাইকাররা এখানে চলে আসছেন। বাজার দরে এখন আমাদের পণ্য বিক্রি করতে পারছি। আশা করছি এখন পণ্য বিক্রিতে লাভবান হবো।

কৃষক দুলাল মিয়া বলেন,  ব্রিজটি নির্মাণ হওয়ায় কৃষি পণ্য বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। অতি সহজে কম খরচে যাতায়াত করতে পারছি।

বনগজ গ্রামে বাসিন্দা গৃহিণী রোকেয়া বেগম জানান, দূরের পথ হওয়ায় নিরাপত্তার কারণে শহরে পড়তে দেওয়া হতো না মেয়েদের। এখন সড়ক চালু হওয়ায় মেয়েরাও শহরে গিয়ে ভালো কলেজে পড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। 

পথচারী মুখলেছ মিয়া বলেন, আগে ধরখার থেকে আখাউড়া আসতে ভাড়া নিচে ৫০ টাকা ভাড়া  দিতে হতো। এখন এই সড়ক চালু হওয়ায় মাত্র ২৫ টাকায় আসতে পারছি।
  
মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে খুবই কষ্ট করতে হতো। এখন আর কোনো ভোগান্তি নেই, অতি সহজে যাতায়াত করা যাচ্ছে।

সিএনজি চালক মো. কালাম মিয়া বলেন,  আওয়ামী লীগ সরকার ব্রিজটি নির্মাণ করায় এখন প্রতিদিন নানা প্রকারের যানবাহ চলাচল করছে। সাধারণ লোকজনরা সময় ও ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেয়েছে। আমরাও গাড়ি চালিয়ে ভালো টাকা আয় করছি।

ধরখার ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাফিকুল ইসলাম বলেন, ব্রিজটি নির্মাণ করায় সাধারণ জনগণ খুব সহজেই যাতায়াত করতে পারছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আমার নির্বাচনী এলাকায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা প্রকার উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

আখাউড়া উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই ব্রিজটি নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে। এই ব্রিজ আখাউড়া-ধরখার এলাকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিজ নির্মাণ হওয়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমেছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রিজটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। 

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়