ঢাকা, মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

ইতেকাফ ভঙ্গের কারণসমূহ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:৫৩, ৩১ মার্চ ২০২৪  

ইতেকাফ ভঙ্গের কারণসমূহ

ইতেকাফ ভঙ্গের কারণসমূহ

ইতেকাফ (الإعتكاف) একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই লোক দেখানো এবং দুনিয়াবী স্বার্থ পরিহার করে, শুধু মাত্র মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইতেকাফ করতে হবে।ইতেকাফের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তার বান্দার গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার জন্য বিশেষ কিছু সুযোগ দিয়েছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, এ মাসের শেষ দশকের বরকতময় রজনী ‘লায়লাতুল কদর’ (ليلة القدر) যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সেই রজনী পাবার জন্য ইতেকাফ এক বিশেষ ব্যবস্থা।

পবিত্র রমজান মাসের শেষ ১০ দিন মসজিদে ইতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। কেউ যদি রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতে চায়, তাহলে সে ২০ রমজান সূর্যাস্তের আগেই ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করবে। (বুখারি, হাদিস : ২০২৭)

এক মহল্লায় একাধিক মসজিদ থাকলে প্রত্যেক মসজিদে ইতেকাফ করা উত্তম। তবে তা জরুরি নয়। বরং যেকোনো মসজিদে ইতেকাফ করলে মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে যথেষ্ট। (রদ্দুল মুহতার ২/৪৪২, ২/৪৫, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৭/১৬৯)

কোনো গ্রামের মসজিদে অন্য গ্রামের লোকের ইতেকাফের দ্বারা ওই গ্রামের সবার পক্ষ থেকে ইতেকাফের সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া আদায় হয়ে যাবে।
তবে গ্রামবাসীর জন্য উচিত তাদের মধ্য থেকে কেউ ইতেকাফে বসা। (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১৭/১৭১)

ইতেকাফ স্বেচ্ছায় পালন করতে হবে। শরিয়তে বিনিময় দিয়ে ভাড়া করে ইবাদত পালন করার সুযোগ নেই। তাই কাউকে টাকার বিনিময়ে ইতেকাফ করা এবং করানো সম্পূর্ণ নাজায়েজ, এভাবে ইতেকাফ করানোর দ্বারা মহল্লাবাসী দায়মুক্ত হতে পারবে না। (রদ্দুল মুহতার ২/৫৯৫, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১৭/১৭১)

প্রস্রাব-পায়খানাসহ মানবীয় ও শরয়ি প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হতে পারবে। যদি মসজিদের সীমানার ভেতরে ওজুর সুব্যবস্থা না থাকে, তাহলে শুধু অজুর জন্য বের হওয়ার অনুমতি আছে। (আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৫১০)

ইতেকাফের দিনগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত, জিকির-আজকার ও লাইলাতুল কদরের সন্ধান করবে। শেষ দশকের সুন্নাত ইতিকাফকারীর জন্য মানবীয় ও শরয়ি বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো কারণে মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়, বের হলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। সুতরাং ফরজ গোসল ছাড়া গরম ও গায়ের দুর্গন্ধের কারণে গোসল করার জন্য বের হওয়া জায়েজ নেই।

হ্যাঁ, যদি অতীব প্রয়োজন হয় এবং মসজিদে গোসলের সুব্যবস্থা থাকে, তাহলে মসজিদেই গোসল করবে, অথবা ভেজা গামছা দিয়ে শরীর মুছে ফেলবে। আর ইস্তেঞ্জা করতে গিয়ে ওজু পরিমাণ স্বল্প সময়ের মধ্যে সাবান ইত্যাদি ছাড়া স্বাভাবিক গোসল করতেও কোনো অসুবিধা নেই। (রদ্দুল মুহতার : ২/৪৪০, ২/৪৪৫, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৫১৫)

রমজান মাসে ইতেকাফকারী মসজিদের মুয়াজ্জিন হোক বা না হোক, বিদ্যুৎ থাকুক বা না থাকুক—সর্বাবস্থায় মসজিদের বাইরে গিয়ে আজান দিতে পারবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/২১২, রদ্দুল মুহতার : ২/৪৪৬)

ইতেকাফকারীর জন্য জানাজা বা রোগী দেখার জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েজ নেই। তবে ইস্তেঞ্জা বা কোনো প্রয়োজনে বের হয়ে পথিমধ্যে রোগী দেখা এবং জানাজায় শরিক হওয়া জায়েজ আছে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/২১২, মাআরিফুস সুনান : ৫/৫৪০)

যে ব্যক্তি সুন্নত ইতেকাফ শুরু করে ভেঙে ফেলেছে, সে রমজানের পর রোজাসহ এক দিন ও এক রাত ইতিকাফ করবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/৪৪৫)

মাগরিবের পরও যদি কেউ প্রবেশ করে, তাহলে সুন্নত ইতিকাফ হবে না, তার ইতেকাফ নফল হিসেবে গণ্য হবে। (ইমদাদুল ফাতাওয়া)

এই ইতেকাফের শেষ সময় হলো ঈদের চাঁদ ওঠার দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তাই ২৯ রমজান বা ৩০ রমজান সূর্যাস্তের আগে যদি চাঁদ দেখা যায়, তবু সূর্য ডুবে যাওয়ার আগে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। সূর্য ডুবে যাওয়ার পর মসজিদ থেকে বের হতে পারবে। (ফাতাওয়া শামি : ২/১৩৭)

ইতেকাফকারীর জন্য প্রাকৃতিক ও শরিয়ত সমর্থিত প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েজ। তাই প্রস্রাব-পায়খানা, ফরজ গোসল, খাবার পৌঁছে দেওয়ার লোক না থাকলে খাবার নিয়ে আসার জন্য, ইতেকাফরত মসজিদে যদি জুমার ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে জুমার নামাজ আদায় করার জন্য অন্য মসজিদে যাওয়া জায়েজ। (ফাতাওয়া শামি : ২/১৩২)

ফরজ গোসল ছাড়া অন্য যেকোনো গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। (ফাতাওয়া শামি : ২/১৩২)

জানাজা, রোগীর সেবা ইত্যাদির জন্য মসজিদ থেকে বের হলেও ইতিকাফ ভেঙে যাবে। (ফাতাওয়া শামি : ২/২১৩)

সর্বশেষ
জনপ্রিয়