ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদীতে ধান ক্ষেতে পোকা দমনে পার্চিং উৎসব পালিত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৫২, ১৭ মার্চ ২০২৪  

কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদীতে ধান ক্ষেতে পোকা দমনে পার্চিং উৎসব পালিত

কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদীতে ধান ক্ষেতে পোকা দমনে পার্চিং উৎসব পালিত

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় এ বছর বোরো ধান ক্ষেতে পোকা দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার জনপ্রিয় করার লক্ষে পাচিং উৎসব পালিত হয়েছে। পাচিং উৎসব পালনের আয়োজন করেন কটিয়াদী কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর। এ উপজেলার কৃষকরা তাদের বোরো ফসলের ক্ষেতে বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি ও মরা গাছের ডাল পুঁতে এবং ধইঞ্চা রোপণ করে দিচ্ছেন। এসব বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি, বাঁশের মাচান বা আড় এবং ধইঞ্চার ডালে বিভিন্ন ধরনের পোকাখাদক পাখি বসে ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলছে এবং ওইসব পাখি পার্চিংয়ে বসে ক্ষণিক সময়ের বিশ্রামও নিচ্ছে। এভাবে কীটনাশক ছাড়াই পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছ রক্ষা পাচ্ছে বলে জানায় উপজেলা কৃষি অফিস। মাটি, ফসল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কীটনাশকের পরিবর্তে ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহারে কৃষকরা বেশি সচেতন এখন। পার্চিং পদ্ধতি হচ্ছে পাখির মাধ্যমে ফসলের পোকা দমনে উত্তম ব্যবস্থা।

কৃষি অফিস উপজেলার সব এলাকায় কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাচিং উৎসবের আয়োজন করেছে। এর ফলে কৃষকরা একদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে পরিশ্রমও কম হচ্ছে। কৃষি অফিস জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে কটিয়াদীতে ৮ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। একটি মাজরা পোকা এক সাথে গাদা আকারে ২৫০-৩০০টি ডিম পাড়ে। আর এই পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারে একটি ফিঙ্গে পাখি ১টি মাজরা পোকার মথ খাওয়া মানে ২৫০-৩০০টি মাজরা পোকা খেয়ে ফেলা। কারণ ১টি মাজরা পোকার মথ ফুটে ২৫০-৩০০টি কিরা হয় এবং এক সাথে ২৫০-৩০০টি ধানের শীর্ষ ক্ষতি করে। সাধারণত ১ বিঘা জমিতে পাতা বিহীন শাখা প্রশাখা যুক্ত ৪-৫টি ডাল ধান রোপণের ৭-১০ দিনের মধ্যে পুঁতে দিতে হয়। তিনি আরো বলেন, পার্চিং এর উদ্দেশ্য হলো পরিবেশ রক্ষার জন্য কীটনাশক ব্যবহার না করে কৃষকের খরচ কমিয়ে দেওয়ার একটি প্রকল্প যা বোরো ধানের ছয়টি ক্ষতিকারক পোকা যেমন মাজরা, পাতা মোড়ানো পোকা, বিপিএইচ, গান্ধী পোকা, লেদাপোকা দমনের জন্য। মাঠে মরা ডালপালা পুঁতে পোকা খেকো পাখি যেমন-ফিঙ্গে পাখি বসার ব্যবস্থ করা, যাতে পাখি ডালের উপর বসে ওইসব পোকা খেতে পারে। সাধারণত ধানগাছে মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, খাটসুর, ঘাসফড়িং ও পাতাফড়িং আক্রমণ করে। পোকাখাদক পাখি জমিতে পুঁতে রাখা পার্চিংয়ে বসে এসব ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলে। ফলে এর মাধ্যমে অতি সহজেই ক্ষতিকর পোকা দমন করা সম্ভব হয় এবং নিরাপদ হয় ফসল। উপজেলার পৌর সভা ও ০৯টি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক কৃষককে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে বোঝান ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসারগন। উৎসবে জানানো হয় উপজেলায় পার্চিং পদ্ধতি ব্যাপকহারে সাড়া ফেলেছে। পার্চিং সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে, ডেড পার্চিং ও লাইফ পার্চিং পদ্ধতি। ফসলের জমিতে পাখি বসার উপযোগী বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি, বাঁশের মাচান বা আড় এবং গাছের ডাল পুঁতে যে পার্চিংয়ের ব্যবস্থা করা হয় তাকে ডেড বা মৃত পার্চিং বলে এবং ধইঞ্চা রোপণ করে ফসলের জমিতে পাখি বসার উপযোগী করাকে লাইফ পার্চিং বলে। লাইফ পার্চিং ফসলের ক্ষেতে দুই ধরনের উপকারে আসে। যেমন- পোকাখাদক পাখি বসে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খায় এবং ধইঞ্চার শিকড়ে এক ধরনের গুটির জন্ম হয়। এই গুটি থেকে নাইট্রোজেন উৎপন্ন হয়। যা ইউরিয়া সারের কাজ করে। উপজেলার মসূয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল বাতেন ও বাদল মিয়া জানান, কয়েক বছর আগেও আমাদের মাঠের সব জমির ধানেই পোকায় আক্রমণ করত। অনেক সময় টাকার অভাবে বিষ দিতে পারিনা বা দিলেও কাজ হয় না। উপ-সহকারী কৃষি অফিসারদের পরামর্শে পার্চিং ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম জানান, পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এলাকার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে এর উপকারিতা সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সুষম সার, ধান ক্ষেতের পোকা দমনের জন্য পার্চিং ব্যবহার পদ্ধতি ইতোমধ্যেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পার্চিং প্রযুক্তি হলে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি। এতে কৃষক লাভবান হয় ও ফসলের উৎপাদন খরচ কমে যায়।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়