ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ায়: শেখ হাসিনা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:২৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগুনসন্ত্রাসী ও মানুষ হত্যাকারীদের প্রতিহত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি তার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ড দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না। এটা তাদের (বিএনপি-জামায়াত) জানা উচিত এবং তাদের সে অনুযায়ী কাজ করা উচিত।

রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।আন্দোলন-সংগ্রাম করে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি, উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে নির্বাচনি সংস্কার আমরা করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কাকে তারা নির্বাচিত করবে। কে সরকারে আসবে। অগ্নিসন্ত্রাস-খুন করে জনগণের হৃদয় জয় করা যায় না, এটা তাদের জানা উচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ায়, আন্দোলনের নামে রেল গাড়িতে যাতে দুর্ঘটনা হয়, সে জন্য মৃত্যুফাঁদ তৈরি করে রাখে। মানুষ হত্যা করে, মানুষকে পুড়িয়ে মারে। জিয়াউর রহমান যেমন মানুষ হত্যা করেছে, খালেদা জিয়া এসেও একই কাণ্ড করেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, কোটালিপাড়ায় বোমা রেখে দেওয়ার মতো বহু ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। ঠিক একইভাবে আজ লন্ডনে বসে হুকুম দেওয়া হচ্ছে। ওখান থেকে হুকুম দেওয়া হয় আর এখান থেকে তাদের দল আগুন দেয়। এই যে আগুন নিয়ে খেলা, এই খেলা ভালো নয়। বাংলাদেশের মানুষ এটা কখনও মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানোবো, যারা অগ্নিসন্ত্রাসী, তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ওরা হরতাল দিয়ে লুকিয়ে থাকে, ঘরে বসে থাকে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছে, সে সুযোগ নিয়ে গুপ্তস্থান থেকে তারা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি আর মানুষ হত্যার নির্দেশ দেয়। লন্ডনে বসে এসবের হুকুম দেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জানে তাদের কিসে ভালো কিসে মন্দ। আর কোন দল ক্ষমতায় থাকলে তাদের কল্যাণ হয়। আজ বাংলাদেশের মানুষকে আমি এটাই আহ্বান করবো, এই দুর্বৃত্ত, অগ্নিসন্ত্রাসী, খুনি, যারা মানুষ খুন করার জন্য রেললাইনের পাত ফেলে দেয়, রেললাইন কেটে রাখে আর আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়, এদের বিরুদ্ধে সমগ্র দেশের মানুষকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আর রেললাইন থেকে শুরু করে সব জায়গায় পাহারা দিতে হবে। যারা রেললাইন কাটতে যাবে, আগুন লাগাতে যাবে, তাদের ধরিয়ে দিন, উপযুক্ত শিক্ষা দিন। এদের ধ্বংসাত্মক কাজ এ দেশে চলতে পারে না।

স্যাংশন নিয়ে তিনি বলেন, করোনা মহামারি থেকে যখন আমরা কেবল উঠে আসছি, তখন এল ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন, সেটাকেও মোকাবিলা করে আমরা যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি, এ সময় তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল-অবরোধ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আবার ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এটা মেনে নেবে না। এই বার্তা সবাইকে পৌঁছে দিতে হবে যে এরা মানুষের কল্যাণ চায় না, লুটপাটের রাজত্ব চায়। এরা ভোটে যেতে সাহস পায় না। কারণ, তারা জানে তারা অগ্নিসন্ত্রাসী, খুনি, এদের বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেবে না। সে জন্যই তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়।

লীগ কোনও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে উঠে আসেনি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের মাটি-মানুষের সংগঠন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এই সংগঠন গড়ে উঠেছে। কাজেই এই সংগঠনের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। আওয়ামী লীগকে তারা কোনোদিনই উৎখাত করতে পারবে না, দাবাতেও পারবে না।

২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে ভরাডুবি, সে কথার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকালে-বিকালে তারা মনোনয়ন বদল করেছে। গুলশান, পল্টন ও লন্ডন থেকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, দেখা যায় যখন লন্ডন থেকে নমিনেশন দেওয়া হয়, তখন পল্টন থেকে আবার আরেক জনকে দেওয়া হয়। সেই আসনেই আবার গুলশান থেকে একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। লন্ডনেরটা এলে পল্টনেরটা বাদ, পল্টনেরটা এলে আবার গুলশান থেকে বাদ, এভাবেই চলেছে। শেষকালে লন্ডনও গেল, পল্টনও গেল আর গুলশানও গেল—এই ছিল তাদের নির্বাচন।

তিনি বলেন, এরপরও তারা যে কয়টি আসন পেয়ে সংসদে গিয়েছিল; সংখ্যায় কম হলেও তাদের কথা বলার জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। যদিও সংসদে বিরোধী দলে থাকার সময় বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবেও তিনি মাইক পেতেন না, এমন নজিরও রয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। এমনকি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর জাতীয় সংসদে একবারের জন্য এ নিয়ে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। গণতন্ত্রের চর্চা হিসেবে সম্পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও একাদশ সংসদ থেকে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলেন কেন, সেই কারণ তার অজানা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংসদে রেজুলেশন গ্রহণ করা হলেও, এ নিয়ে কথা বলে না বিএনপি।

তিনি একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় হেবরনে ৬০ জন মুসল্লিকে একটি মসজিদে ইসরায়েলিরা হত্যা করে। আওয়ামী লীগ সেটার প্রতিবাদ করেছিল এবং সংসদে একটি রেজল্যুশন আনার জন্য চেষ্টা করেছিল এবং সরকারি দলকে আহ্বান জানিয়েছিল এটার প্রতিবাদ করতে। তারা সে প্রতিবাদ করেনি, এমনকি আওয়ামী লীগ যে প্রতিবাদ করবে, সেটাও করতে দেবে না। সেদিন তারা সংসদ থেকে বের হয়ে যান এবং পদত্যাগ করেন।

বিএনপির নেতৃত্বশূন্যতার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এখন যখন নির্বাচন এসেছে, তারা আবার নির্বাচন করবে না বলে ফ্যাকরা ধরেছে। আসলে তারা নির্বাচনটা করবে কীভাবে? তাদের নেতা কে? একটা মুণ্ডবিহীন দল।

ভোট কারচুপির অভিযোগে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার দু-দুবার জনগণ দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন ও ভোট কারচুপির নির্বাচনে পর জনগণের আন্দোলনের কারণে খালেদা জিয়া মাত্র দেড় মাসের মাথায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এটাও সবাইকে মনে রাখতে হবে। ভোট চুরির অপরাধ মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়া বিদায় নেয়। তাই আজ খুব অবাক লাগে যখন বিএনপি গণতন্ত্রের কথা বলে আর জনগণের ভোটাধিকারের কথা বলে। আসলে ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া, ভোট কারচুপি করা, সিল মেরে বাক্স ভরা, ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের নামে ‘না’ ভোটের বাক্স খুঁজে না পাওয়া— এগুলো কে করেছে?

তিনি বলেন, এগুলো জিয়াউর রহমানই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার জন্য শুরু করেছিল। কাজেই ওদের জন্মটাই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে। ওদের বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করবে কীভাবে?

জাতির পিতার মধ্যস্থতায় জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়াকে ঘরে তুলে নেওয়ার স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, যে সময় তিনি (খালেদা জিয়া) দিনের পর দিন তাদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় এসে দেন-দরবার করেছেন। জাতির পিতা জিয়াউর রহমানের জন্য ও সামরিক বাহিনীর উপপ্রধানের একটি পদ সৃষ্টি করে তাকে সেই পদ দেন, যাতে খালেদা জিয়াকে সে নিজের ঘরে তুলে নেয়। মানুষ এগুলো কীভাবে ভুলে যায়? সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।

এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

কুয়েতের আমিরের মৃত্যুতে সোমবার বাংলাদেশ এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করায় আওয়ামী লীগের বিজয় শোভাযাত্রা ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। বেলা আড়াইটায় বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে শুরু হয়ে ধানমন্ডী ৩২-এর বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে শেষ হবে বলে ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন।

সভায় বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও সুজীত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল আলম মিলন এমপি, কেন্দ্রীয় নেত্রী মেরিনা জাহান কবিতা এমপি, কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শেখ বজলুর রহমান ও হুমায়ুন কবির প্রমুখ।

আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি এবং সহপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম।

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়