হাওরে কৃষকের মুখে স্বর্ণালি হাসি
নিউজ ডেস্ক
হাওরে কৃষকের মুখে স্বর্ণালি হাসি
হাওরের বোরো ধান পাকা ও কাটার সময় বৈশাখ মাস; কিন্তু চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে টানা বৃষ্টিপাত ও কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে ফসল নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ‘বোরো ধানের ভাণ্ডার ’খ্যাত হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের কৃষকরা। তবে সপ্তাহখানেক ধরে বৃষ্টিপাত ও কালবৈশাখী ঝড় না হওয়ায় শঙ্কা কেটে গিয়ে কৃষকদের মুখজুড়ে এখন স্বর্ণালি হাসি।
তিন-চার দিন ধরে জেলার সব হাওরজুড়ে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা। উৎসবমুখর পরিবেশে দুই লাখ ৩০ হাজার শ্রমিকের পাশাপাশি ৮৫০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে হাওরে ধান কাটা চলছে। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও কালবৈশাখীর পর আবহাওয়া ভালো থাকায় সব হাওরেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আগাম বন্যা না হলে নিরাপদে ধান গোলায় তোলা সম্ভব হবে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ১৩৭টি ছোট-বড় হাওরে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল দুই লাখ ২৩ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমি; কিন্তু চাষাবাদ হয়েছে দুই লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬৫ হেক্টর বেশি জমি চাষাবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২৭০ টন, যার বাজারমূল্য চার হাজার ১১০ কোটি টাকা। হাওরে এ বছর ৮৮ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ৫১ জাত, উফশি ২৫ জাত ও ১২ জাতের দেশীয় ধান চাষ হয়েছে। দুই লাখ ৩০ হাজার শ্রমিকের পাশাপাশি ভর্তুকিতে দেওয়া ৮৫০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে।
এ বছর কৃষকদের অনুকূলে নতুন আরও ৫০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার অনুমোদন হতে পারে। তাই ধান কাটা দ্রুত শেষ করার আশা করছে কৃষি বিভাগ।
এদিকে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জেলার চার হাজার কোটি টাকার বোরো ফসলরক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫৯টি ক্লোজার ভরাট এবং ৬০০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করেছে। কৃষকদের নিয়ে গঠিত ৭৩৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) এসব বাঁধের কাজ বাস্তবায়ন করেছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জগাইরগাঁও গ্রামের কৃষক তরজুদ আলী বলেন, ‘খরচার হাওরে ব্রিধান-২৮ ছাড়া অন্য ধান মোটামুটি ভালোই হয়েছে। তিন কেদার (১ কেদারে ৩০ শতক) জমিতে ৪৫ বস্তা ধান পেয়েছেন। পাশের জমির একজন ৬ কেদারে ৭০ বস্তা পেয়েছেন। বৃষ্টি-বাদল না হওয়ায় সুন্দর পরিবেশে শ্রমিকের পাশাপাশি মেশিন (কম্বাইন্ড হারভেস্টার) দিয়ে ধান কাটা চলছে।’
শনির হাওরপারের তাহিরপুর উপজেলা সদরের ঠাকুরহাটির কৃষক আলী আফজাল খোকন বলেন, ‘চৈত্র মাসের ঝড়-বৃষ্টিতে হাওরের ধান নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলাম। হালকা শিলাবৃষ্টি ও আবহাওয়ায় ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবু ফলন ভালোই হয়েছে। দুই কেদারে ৩০ মণ ধান পেয়েছি। আশা করছি ১০ কেদার জমিতে ১৫০ মণের বেশি ধান পাব। কেউ কেউ প্রতি কেদারে ২০ মণ পর্যন্ত ধান পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর শাখা ১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, ‘হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের অবস্থা ভালো পর্যায়ে আছে। কারণ নদীতে তেমন পানি নেই। সুরমা নদীর পানি ৬.৬৫ মিটারে প্রবাহিত হলে বিপদসীমা অতিক্রম করে; কিন্তু সুরমা নদীর পানি বর্তমানে ১.১৯ মিটারে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিন হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে তবে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা নেই।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘এ বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ২৩ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমি; অর্জন হয়েছে দুই লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর। আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। দুদিন ধরে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ৮৫০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টারের পাশাপাশি দুই লাখ ৩০ হাজার শ্রমিক হাওরে ধান কাটছেন। গতকাল পর্যন্ত ৪০ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে, যা প্রায় মোট আবাদের ২০ শতাংশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ৫ মের মধ্যে হাওরের ধান কাটা শেষ হবে। শতভাগ ধান কাটা সম্ভব হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান পাওয়া যাবে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, অতিবৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ও বোরো ফসলের বাঁধ রক্ষায় জেলা, উপজেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সচেষ্ট রয়েছে। কৃষকরা যাতে নিরাপদে বোরো ফসল ঘরে তুলতে পারেন সে লক্ষ্যে হাওর পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে।
- Tk 12,500 announced as minimum wage for RMG workers
- মাছ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে সার্বিক সহযোগিতা করবে সরকার : মৎস্যমন্ত্রী
- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে থাকছে রেকর্ড সংখ্যক পর্যবেক্ষক
- PM opens Southeast Asia`s largest fertiliser factory in Narsingdi
- 2024 election was the fairest since 1975: PM
- দ্রুত এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর কাজ
- সুষ্ঠু নির্বাচনে সব সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি
- জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি
- কর্মসংস্থানের জন্য প্রতি ঘণ্টায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যান ১৫২ বাংলাদেশি
- মানবিক নারী পুতুল ও অটিস্টিক শিশুদের নতুন ভোর